করোনাভাইরাস ত্রাস ও বিপন্ন মানুষের মুখ

করোনাভাইরাস ত্রাস ও বিপন্ন মানুষের মুখ

বিশ্বজুড়ে তুলকালাম কান্ড শুরু। পেছনে কারন করোনা নামের এক ভাইরাস। দূর্দান্ত করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। সেই ডিসেম্বর ২০১৯এ  অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশ চীনের হোবে প্রদেশের উহান শহরে তান্ডব শুরু করে খুব দ্রুত বেগে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকাতে পৌঁছে গেছে এই ভাইরাস। যখন মনে হচ্ছে চীন সামলে উঠছে কিছুটা তখনই খবর ভয়ংকর করোনায় আসলো একদিনে এখন পর্যন্ত  সবচেয়ে বেশী মানুষের মৃত্যু ঘটেছে উন্নত বিশ্ব ইউরোপে।

এতো হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ আঘাত যাতে মানুষ প্রতিদিনই অসুস্থ হচ্ছে, মৃত্যুর মুখে একে একে ঢলে পড়ছে। পরোক্ষ আঘাতও ভীতিজনক ও বিষাদময়। বিমান চলাচল কমে যাচ্ছে বা বিমানসংস্থাগুলো বিমানচলাচল কমাতে বাধ্য হচ্ছে তাতে রাতারাতি হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ওই সব সংস্থাতে পাইলট থেকে ক্লিনার সব কর্মীই কাজ হারিয়েছেন। ছোট ছোট ব্যবসা-বানিজ্য ক্যাফে, রেস্তোরা প্রায় বন্ধ বা বন্ধের পথে। তাতে কাজ হারিয়েছে অনেক মানুষ। স্কুলগুলো বন্ধ হলে সন্তানদের দেখভালের জন্য  ক্যাজুয়ালকর্মী মায়েরা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য। তাদের আয়ও বন্ধ। কিভাবে খরচ কুলানো হবে ভেবে ভেবে মানুষ করোনাভাইরাসে সরাসরি আক্রান্ত না হয়েও অর্থনৈতিক ভাইরাসে বিপন্ন।

মেলবোর্নের বর্তমান অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে ডাক্তার(জিপিরা বিশেষ করে)রাও অনেকে ছুটিতে । ক্লিনিকে ডাক্তার নাই বিকল্প হিসাবে মানুষ ছুটছে হসপিটালের ইমারজেন্সী বা জরুরী বিভাগে। সেখানেও আরেক কান্ড। ডাক্তার যদি চাইনীজ হয় রোগীরা তাদের কাছে যেতে চাইছে না ভয়ে। টিভির খবর থেকে বিষয়টি জেনে বিস্ময় লাগছিল।

উহানের করোনাভাইরাসের কারনে জানুয়ারীর শেষে অষ্ট্রেলিয়াতে পড়ুয়া এক শ’ হাজার চাইনিজ ছাত্রের আসা পিছিয়ে গিয়েছিল তখনই ধাক্কা আসে অর্থনীতিতে। তারও উপর এখন অনেক চাইনীজ ছাত্র অষ্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিতে এই বছরে আসছে না বা আসতে পারে নি তাতে ইউনিভার্সিটিগুলো ঘোষণা দিয়ে কোর্স সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। উদাহরণ তাজমানিয়া ইউভার্সিটি। এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসনে জড়িত লোকজনও কর্ম হারাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুভীতির পাশাপাশি বিধ্বস্ত অর্থনীতির ছোবলে পর্যুদস্থ মানুষ।  টিভির পর্দায় পর্যবেক্ষিত দু’টো ঘটনা এখানে বর্নিত হল।

ক্লাস শুরুর আগে সকালে খন্ডকালীন কাজে গিয়েছিল একটি ছাত্র। গিয়ে শুনে ব্যবসায় মন্দা ক্যাফে চলছে না তাই কাজকর্ম বন্ধ। কাজ হারানো ছেলেটির শুকনা মুখে বিপন্নতা সহ্য করার মতো না। বাড়ীভাড়া, গ্যাস-পানি-ইলেকট্রিসিটির বিল কিভাবে জোগার করবে ভেবে পাচ্ছে না। ক্যাফের মালিক হতাশ হয়ে বিপন্ন মুখে জানালো শুধু ওই ছাত্রটিই নয় আরও চারজনকে সে কাজে জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে।

এক নারী এক মা বাড়ীতে বসে মেইল খুলে স্তব্ধ। কাজের জায়গা থেকে মালিক মেইল করেছে। রেস্তোরা ব্যবসা চলছে না; মালিক তাকে কাজ থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। টিভির পর্দায় ওই মা যা বললো তা করোনাভাইরাসের চেয়েও করুণ। একটি অটিস্টিক সন্তানের মা ওই নারী জানে না  কিভাবে তার ও তার সন্তানের জীবন চলবে এখন।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা(WHO) করোনাভাইরাসকে  প্যানডেমিক বা অতিমহামারি(কেবল মহামারি নয়) ঘোষণার  বেশ আগেভাগেই অষ্ট্রেলিয়া প্যানডেমিক নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিল । মনে হচ্ছিল প্রস্তুতি বেশ জোরদার। অষ্ট্রেলীয় সরকার প্রচুর অর্থের প্রতিশ্রুতি  ও পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এসেছে করোনায়  বিপন্ন অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য। তারপরও আশংকা হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা গিয়েছিল তার মত অবস্থা শুরুর পদধ্বনি শুনা যাচ্ছে  ত্রাস সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে।


Place your ads here!

Related Articles

Shoeb Mortoza !!

Shoeb Mortoza is a very simple, kind, honest and humble person who has the capabilities of mesmerising people with his

বন্ধুত্বের স্বরূপ

“আমি ভালোবাসি যারে সে কি কভু আমা হতে দুরে যেতে পারে!” পারে। খুব পারে। আজ কাল কাছে থাকা নির্ধারন করা

Pakistan’s new President: How did Asif Zardari manage to win?

On 6th September, Asif Ali Zardari,(52), the widower of former Prime Minister Benazir Bhutto, has won a sweeping victory in

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment