প্রবাসে বাংলাদেশের গর্ব
একজন খুবই সাধারণ মানের দর্শক হিসেবে ক্রিকেট খেলাটা আমার কাছে অনেক বড় বিনোদনের বিষয়। যেহেতু দেশ বিদেশ ঘুরে দেখার মত সামর্থ্য নেই তাই নতুন নতুন দেশের মানুষদের সাথে পরিচত হওয়াটা অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ব্যাপারটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। যেহেতু সেই দেশে ভ্রমণে যেতে পারবো না তাই সেই দেশের মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা আর কি? এভাবেই পরিচয় মিক আর বিনোদ দাদার সাথে। মিক আমার সহকর্মী, আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা আর বিনোদ দাদা নেপালের মানুষ কিন্তু গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন বাংলাদেশের একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মিক আর বিনোদ দাদা দুজনই আমার অনেক ভালো বন্ধু।
যখন ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হলো তখন থেকেই মিক বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং আমার কাছ থেকে নিয়মিত আপডেট নেয়। ও যখন জানতে পারলো বাংলাদেশ থেকে আমি জার্সি আনাচ্ছি তখন খুবই খুশি হলো। আমাকে বললো, বাংলদেশের সমর্থক হিসেবে আমি তোমাদের জার্সি পরে একটা ছবি তুলে রাখবো। আমি বললাম, এর চেয়ে ভালো তোমাকে একটা জার্সি কিনে দেয়। ও বলল, সেটার দরকার নেই আর আমার সাইজও পাওয়া মুশকিল। আমি ইতোমধ্যেই সিডনির একটা অনলাইন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওদের কাছে এক্সএল এর চেয়ে বড় নেই কিন্তু মিকের লাগবে অন্ততপক্ষে ডাবল এক্সএল কারণ ওর উচ্চতা ছয় ফিট নয় ইঞ্চি। তাই আমি বাসা থেকে বাংলাদেশের আগেরবারের একটা জার্সি নিয়ে আসলাম। যেটা মোটামুটি ওর গায়ে লাগে। অফিস শেষে খালি গা হয়ে সেই জার্সি পরে মিক ভিক্টরি পোজ দিয়ে দিলো।
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিনোদ দাদা আমাকে নিয়মিত মেসেজ দিয়ে বাংলদেশের আপডেট জানায়। বাংলদেশ দলের যেদিন খেলা থাকে সেদিনতো অন্ততপক্ষে একদিনের জন্য হলেও শুভকামনা জানাতে ভুল করেন না। বাংলাদেশ ভারত ম্যাচের দিন বললেন, দাদা আমাদের বাসায় চলে আসেন একসাথে খেলা দেখি। এরপর খেলা শুরু হলে উনি সময়ে সময়ে মেসেজ দিয়ে আপডেট দিচ্ছিলেন। কি কি ভুল হচ্ছে তার জন্য কি কি খেসারত দিতে হবে এমন অনেক আলোচনায় হচ্ছিলো আমাদের মধ্যে। আজও বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের ম্যাচ সামনে রেখে আবারো আড্ডা জমে উঠবে আমাদের।
নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচত হতে যেয়ে একটা ব্যাপার বুঝেছি। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আর সাকিব আল হাসান। একবার এক ভারতীয়ের সাথে পরিচিত হবার পর কথা প্রসঙ্গে বললেন, তোমরা কত সৌভাগ্যবান তোমাদের একজন সাকিব আল হাসান আছে। আমাদের অফিসের আরেকজন সহকর্মী শেন ম্যাথিউ নিউজিল্যান্ডের নাগরিক। পরিচয়ের শুরুতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ম্যাচের শেষে এসে আমার সাথে আড্ডা দিয়ে বিশ্লেষণ করেন। তবে সবার কাছ থেকেই একটা জিনিস শিখেছি। এরা কখনওই টিম সিলেকশন, মাঠে অধিনায়ক, আম্পায়ার, বোলার বা ব্যাটসম্যানদের সমালোচনা করেন না। করলেও সেটা খুবই সীমিত আকারে কিন্তু আমরা করি এর উল্টোটা। আর (অ)সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সেটা চলে যায় খেলোয়াড়দের কাছে। আমরা একটিবার জন্যও ভাবি না খেলাটা আমাদের কাছে বিনোদনের বিষয় হলেও খেলোয়াড়দের জন্য সেটা জীবিকা তাই তারা সবসময়ই তাদের সেরাটাই দিতে চেষ্টা করেন কিন্তু ক্রিকেট খেলাটায় এমন যে সেখানে অনু সেকেন্ডের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত নিতে হয় আর সবসময়ই যে সেটা ঠিক হবে এমন কোন গ্যারান্টি নেই।
হারুক বা জিতুক জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে সবসয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে মনেপ্রাণে সমর্থন দিয়ে যাবো। আর যখন দেখি যে দল খারাপ খেলছে তখন খেলা দেখা বন্ধ করে দেই অনেকটা ছোটবেলায় ইভিল ডেড সিনেমা দেখতে যেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলার মতো কিন্তু খেলোয়াড়দের নিয়ে পারতপক্ষে কখনওই উল্টাপাল্টা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি কারণ আমি মাঠে যেয়ে ক্রিকেট টা খেলছি না। যারা খেলছে তারাই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধাম্ত নিবেন বলে বিশ্বাস করি। আশাকরি আজ পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ দল জিতে এইবারের বিশ্বকাপে একটা ভালো সমাপ্তি উপহার দিবে আমাদের। সেটা না পারলেও কোন ব্যাপার না কারণ ক্রিকেট খেলাটাই এখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
আমি, বাবা আর আমার সরোদ
কিছু কথা লিখবো বলে ভাবছিলাম কিছুদিন ধরে , নিজেকে নিয়েই। আমার মিউজিক নিয়ে , আমার সরোদ নিয়ে। গত কিছুদিন ধরে
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: কিছু ভাবনা
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই বিজয় অর্জনে ভারত ও বিশেষ করে ইন্দ্রাগান্ধী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী অসামান্য অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে নেপিয়ারে
ফজলুল বারী, নেপিয়ার থেকে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে নেপিয়ারে। এরজন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেটদল রোববার এখানে এসে পৌঁছেছে। এটি নিউজিল্যান্ডের
ভাই তোমার প্রতি শুভ কামনা, তোমার লেখাটা বিনদ ওঝা আমার ছোটভাই, এক সময়ের সহকর্মী, পাঠিয়েছে। খুব ভালো লাগলো তোমার অভিসান সফল হোক।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। বাংলাদেশের হাজারো সমস্যার মধ্যে ক্রিকেটের মতো কিছু বিষয় এখনও পুরো জাতিকে একত্রিত করে। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে ক্রিকেটের কল্যাণে হলেও মাইকেল মিকেলপ এবং বিনোদ ওঝার মতো মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। ভালো থাকবেন।