প্রবাসে দ্বিতীয় প্রজন্মের পথচলা
তুলা রাশির জাতক রুপন্তী আকিদ। অবশ্য সবাই তাঁকে রূপ নামেই বেশি চেনে। রূপ প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম। অর্থাৎ রূপের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই তবুও রূপ শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলতে পারে। এরই মধ্যে কাজ করেছে বেশ কয়েকটি বাংলা নাটকেও যার অধিকাংশই পেয়েছে তুমুল দর্শকপ্রিয়তা। দু বোনের মধ্যে রূপ বড়। রূপের অবসর কাটে গল্পের বই পড়ে আর নেটফ্লিক্সে সিনেমা বা সিরিজ দেখে। অবশ্য এই সময় তাঁকে সঙ্গ দেয় পোষা কুকুর কিরা এবং দুটি বিড়াল টুসি আর আরিয়া। পশুপ্রেম রূপের মধ্যে জন্মগতভাবেই তৈরি হয়েছে কারণ তার মা আবেদা রুচিও পশুদের খুবই ভালোবাসেন। পশুদের অব্যক্ত কথাগুলো তিনি অতি সহজেই বুঝে ফেলেন।
মাত্র দশ বছর বয়সে প্রবাসীদের বৈশাখী মেলার মঞ্চে যাত্রা শুরু রূপের তারপর প্রবাসীদের নিয়ে একটি টিভি সিরিজে কাজ করেন। এরপর একে একে দক্ষ অভিনয় করে গেছেন মাহফুজ আহমেদের ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ ও ‘কেবলই রাত হয়ে যায়’, সকাল আহমেদের ‘তাহার নাম শকুন্তলা’, সাগর জাহানের ‘আংটি’ নাটকে। এছাড়াও অভিনয় করেছেনা ‘ঘুমিয়ে পড়েছে মধ্যরাত’, ‘গল্পটি আংশিক সত্য’, ‘অথবা একটা খুনের গল্প’, ‘শারমিনের ব্যক্তিগত গল্প’, ‘কোন আলো লাগল চোখে’ নাটকে। বরাবরই রূপের অভিনয় দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশেষকরে মাহফুজ আহমেদের ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ নাটকের অভিনয় সকলের মনে দাগ কেটে আছে।
সম্প্রতি রূপ অভিনয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ান নির্মাতা বৈভব ভাটের ছবি ‘তেরাহবিন’ – এ। তেরাহবিন একটি হিন্দু পরিবারের গল্প। রিতু নামের একটি মেয়ে মারা যায়। এরপর অন্তেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শোক প্রকাশের শেষ দিনকে কেন্দ্র করে পুর গল্পটা আবর্তিত হয়েছে। রিতুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কার্মা শ্যারন। আর রিতুর বোন জেসির চরিত্রে অভিনয় করেছেন রূপ। রূপের পর্দার চরিত্র জেসি একজন দুঃখী মেয়ে। তার বোন রিতু মারা যাওয়াতে সে স্বাভাবিকভাবেই দুঃখী। একজন মানুষের মৃত্যুতে বাড়িতে যেখানে শোকের আবহ থাকার কথা সেখানে অন্তেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে আগত বিভিন্ন মানুষের মনে কাজ করছে বিভিন্ন উদ্দেশ্য। সেটা জেসিকে খুবই বিস্মিত করে।
এছাড়াও ‘তেরাহবিন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জ্যাসপার মুসগ্রেভ, নিলেন্দ্র ফোনসেকাসহ প্রায় ৩০ জন অভিনেতা অভিনেত্রী। ছবিটি গত ২১শে জুলাই ২০১৯ তারিখে মুক্তি পেয়েছে সিডনিকেন্দ্রিক সিনেমা হলগুলোতে। বিদ্রুপাত্মক এবং একইসাথে হাস্যরসাত্মকভাবে অন্তেষ্টিক্রিয়ার দিনটি চিত্রায়িত হয়েছে। এই ছবিতে কাজ করতে পেরে রূপ স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছস্বিত কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও রূপের স্বপ্ন ছিলো একদিন অস্ট্রেলিয়ার মেইনস্ট্রিম চলচ্চিত্রে কাজ করার। এই ছবিটা করার মধ্যে দিয়ে তার প্রথম ধাপ রচিত হয়েছে।
পথ প্রোডাকশন অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশিদের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন যারা বিভিন্ন মেলায় তাদের পরিবেশনা দিয়ে ইতোমধ্যেই দর্শকদের ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে। রূপ ২০১০ সাল থেকে তাদের সাথে অংশ নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে যাচ্ছে। আর প্রাণীদের প্রতি রূপের ভালোবাসা অনুকরণীয়। রূপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাণী কল্যাণ সংস্থা পসের একজন নিয়মিত সদস্য। এছাড়াও তার একটি নিজস্ব ফেসবুক পেজ আছে কেয়ার ফর পস নামে।
অভিনয়ের পাশাপাশি রূপ র্যাম্প মডেলিংয়েও সুনাম কুড়িয়েছেন। এছাড়াও রূপ একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার যদিও সেটা এখন পর্যন্ত শখের পর্যায়েই আছে। বর্তমানে একটি বহুজাতিক অফিসে প্রশাসনিক পদে কর্মরত আছেন। রূপ ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির পারামাটা ক্যাম্পাস থেকে ব্যবসা ও বাণিজ্য বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অবশ্য ভবিষ্যতে অভিনয়টাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান। তার পাশাপাশি বিভিন্ন দাতব্য কাজের সাথে যুক্ত আছেন। দেশে এবং প্রবাসে বাংলাদেশিরা এখনও ডাক্তারি এবং ইন্জিয়ারিংকেই পেশা হিসেবে সবকিছুর উপরে রাখেন। তার বাইরে যেয়ে অন্যান্য পেশায় যারা যুক্ত হন তারা স্বভাবতই বাংলাদেশি কমিউনিটির বিরাগভাজন হন কিন্তু রূপ তার অধ্যাবসায় দিয়ে সব বাঁধা অতিক্রম করে অস্ট্রেলিয়ার মেইনস্ট্রিম চলচ্চিত্রে নাম লেখানোর মাধ্যমে নিজেকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছেন। আমরাও রূপের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। বিদেশ বিভুঁয়ে এমন প্রজন্মই বাংলাদেশের নাম সবার উপর তুলে ধরবে যুগ যুগ ধরে।
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
বাংলাদেশের ভোট : আদর্শ ব্যবস্থা কী?
বাংলাদেশের সংসদ এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি বর্তমানে যেমনটা রয়েছে সেরকম করে কি নির্বাচনের উদ্দেশ্য পূরণ করছে? না করলে
তীব্র আবেগ উচ্ছ্বাসে দ্রবীভূত প্রশান্ত পাড়ে গড়ে উঠা এক খণ্ড বাংলাদেশ
হ্যাপি রহমান, সিডনি-অস্ট্রেলিয়া: প্রতি মানুষের সুস্থতা ও বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যান চিকিৎসকরা। সকল পেশার মানুষদেরকে একজন চিকিৎসকের প্রতি নির্ভরশীল
জীবন ভ্রমন
জীবন ভ্রমন ২৭ : কলেজ জীবনটা কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয় বুজাই যায় না । এই সময় নতুন