পিঠা উৎসবের বর্ণিল আলোয় আলোড়িত ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল

পিঠা উৎসবের বর্ণিল আলোয় আলোড়িত ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল মাতৃভাষা, বাংলা সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ধারণ ও চর্চার পাশাপাশি আবহমান বাংলার খাদ্য তালিকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ পিঠাপুলিকে নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়। দেশ ছেড়ে আসা পিঠার স্বাদ বঞ্চিত বাঙালির রসনা তৃপ্ত করতে এবং বাংলা স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে তহবিল সংগ্রহ করতে গত ৪ঠা আগস্ট রবিবার সিডনির গ্রেগ পারসিভাল কমিউনিটি হল, ইংগেলবার্নে বসেছিল এবারের পিঠা উৎসবের আসর। বিগত বছর গুলিতে পিঠা উৎসবের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার প্রেক্ষিতে এবারই প্রথম এই  উৎসব স্কুল প্রাঙ্গনের বাইরে আয়োজিত হয়।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

সকাল এগারোটার সময় বাংলা স্কুল সাধারন সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান সবাইকে স্বাগত জানান। দিনের সূচী সম্পর্ক উপস্থিত দর্শকদের অবহিত করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিজয় সাহা। অত্যন্ত পরিপাটি এবং চমৎকার আয়োজনে রকমারি পিঠার সমাহারে এবারের উৎসব সকাল থেকেই ব্যাপক পস্থিতির ইংগিত দেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেয়া ভোজন রসিক ও সংস্কৃতি প্রেমিক মানুষের কল কাকলিতে উৎসব স্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

পিঠা উৎসবের পুরো সময় জুড়ে ছাত্রছাত্রী, স্কুলের নিজস্ব শিল্পী এবং সিডনির প্রখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। শুরুতেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একটি আকর্ষণীয় পরিবেশনা উপস্থিত সবাইকে মোহমুগ্ধ করে। তিনটি বৃন্দ আবৃত্তি, পাঁচটি একক আবৃত্তি, চারটি সমবেত সংগীত, তিনটি একক সংগীত এবং একটি একক এবং একটি

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

দ্বৈত নৃত্যের প্রতিটি শাখায় ছেলেমেয়েরা তাদের পারদর্শিতার ছাপ রাখতে সক্ষম হয়। একক আবৃত্তিতে অংশ নেয় ঋষিকা, রুশনান, আরিজ, নাজিহা, তাহিয়া, নাশিতা,দৃপ্ত ও তাওহিদ। একক সংগীত পরিবেশন করে জেইনা, নাশওয়া ও এলভিরা। একক নৃত্যে ছিল অবনি এবং বাংলা স্কুল শিক্ষক নাসরিন মোফাজ্জলের আবৃত্তির সাথে দ্বৈত নৃত্যে অংশ নেয় তাসমিয়া ও রিয়ানা। নিজের পাঠ্য বই থেকে একটি চমৎকার গল্প বাংলায় পড়ে শোনায় নুরিন। এই পর্বে তিন প্রজন্মের একটি অসাধারণ পরিবেশনা সবার মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। হারমোনিয়ামে ছিলেন দাদা স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল আহসান খান, তবলায় বাবা প্রাক্তন ছাত্র সাহিল খান এবং কন্যা স্কুলের বর্তমান ছাত্রী জেইনা খান।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

পরবর্তীতে স্কুলের নিজস্ব শিল্পী এবং আমন্ত্রিত শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। দোতারা, মন্দিরা, খমক, খন্জনী ও গিটারে আবহমান বাংলার শেকরের সুর তুলে আনেন আহমেদ তারিক, মাহবুব শাহরিয়ার, ইফতেখার আলম ও সিদ্ধার্থ পাল। “স্বাধীনতা, এই শব্দটি আমাদের কিভাবে হল” এর আবেগঘণ আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী, বাংলা স্কুল শিক্ষক রুমানা সিদ্দিকী। সংগীত পরিবেশন করে সবাইকে বিমোহিত করেন প্রথিতযশা শিল্পী আনিসুর রহমান, রোকসানা বেগম, ফারিয়া আহমেদ, লুনিয়া আহমেদ, সাজ্জাদ চৌধুরী, তামিমা শাহরিন, তাহমিনা খান ও রুমানা ফেরদৌস লনি। দলগত পরিবেশনা নিয়ে এসে পিঠা উৎসবকে ভিন্ন মাত্রা দেয় প্রখ্যাত সংগীত দল স্বপ্ন এবং সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়ার সাড়া জাগানো গানের দল লাল সবুজ।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেরা বাঙালি সাজের জন্য পুরস্কার এবং রাফেল ড্র। এই পর্বটি পরিচালনা করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সহ সভাপতি মাসুদ মিথুন এবং পুরস্কার প্রদান করেন সভাপতি আবদুল জলিল। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিজয় সাহা। উপস্থাপনায় ছিলেন স্কুলের অধ্যক্ষ রোকেয়া আহমেদ এবং শিক্ষক রুমানা সিদ্দিকী। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন স্বনামধন্য শব্দ প্রকৌশলী আত্তাবুর রহমান। আবহমান বাংলার চিরায়ত রুপ ফুটিয়ে তোলা মঞ্চের ও সাজসজ্জার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন মাসুদ মিথুন। সহযোগিতায় ছিলেন তামজিদ ও বিজয়।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন ইয়াকুব আলী ও রুমানা খান, প্রিয় অস্ট্রেলিয়া, প্ৰশান্তিকা, প্রভাত ফেরী, সিডনী প্রতিদিন, বিদেশ বাংলা, জয়যাত্রা টিভি, গান বাক্স এবং বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো। এছাড়াও নিঃস্বার্থভাবে প্রচারের কাজটি করেছেন নাঈম আব্দুল্লাহ ভাই যিনি বাংলা স্কুলের ভালো মন্দ সবসময়ের সঙ্গী। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল নাঈম আব্দুল্লাহ ভাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। এছাড়াও স্মরণিকা প্রকাশের কাজে সহায়তা করেছেন এওজেড প্রিন্টার্স এবং তার স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন ভাই।  

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

আপ্যায়ন ছিলেন মোনা, সাজ্জাদ, ইয়াকুব, সাগর, ননী, অনিতা, আহমেদ, রেখা, নুসরাত, জেলিন, পপলি, সন্ধা, হিরন, রুপা, বর্নী, শুভ, পুলক, শাহিন, বিশাখা, মৃন্ময়, অমিত, রঞ্জন, ফেরদৌস, এপোলো, সাইফ, নিবির, আহমেদ,আইরিন, ইমতিয়াজ, নিলা, মেহেদী, তানিয়া, তাহিয়া, এলভিরা, নুরিন, আলিশা ও দিশা।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯

বিকাল ৫টায় সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামীতেও সবার সহযোগিতা কামনা করে পিঠা উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি আবদুল জলিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রবিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য উন্মুক্ত থাকে।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯
ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯
ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯
ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক পিঠা উৎসব ২০১৯
Kazi Ashfaq Rahman

Kazi Ashfaq Rahman

ছেলেবেলা থেকেই শান্তশিষ্ট ছিলাম বলে আমার মায়ের কাছে শুনেছি। দুষ্টুমি করার জন্য যে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন তা নিশ্চয়ই আমার ছিল না। আমার এই নিবুর্দ্ধিতা একসময় আমার মাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন আমার এই ছেলে জীবনে চলবে কি করে। এখন যেভাবে চলছি তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। ভালই তো আছি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত শিক্ষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে অনন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারাকে জীবনের বড় অর্জন বলে মনে করি। আমার স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী, আমার শত বোকামী, আলসেমী আর বৈষয়িক না হওয়াকে প্রকারান্তরে প্রশ্রয় দেওয়াতে আমার আর মানুষ হয়ে ওঠা হয়নি। আমার দুই সন্তান, আমি চাই তারা আমার মত বোকাই থেকে যাক কিন্তু আলোকিত মানবিক মানুষ হোক যা আমি হয়তো হতে পারিনি।


Place your ads here!

Related Articles

The sublime moment of the past

Onupam wakes up on a muggy morning, rather, he wonders how he would feel if he sees his Mum, Dad

ক্যানবেরার খবরঃ লেঃ জেঃ মাসুদ দায়িত্ব গ্রহন করেছেন

গত ৪ নভেম্বর লেঃ জেঃ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্ব গ্রহন করেছেন । বিগত রাস্ট্রদুত জনাব হুমায়ুন কবিরের

ঢাকায় হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ান গণিত প্রতিযোগিতা

আরও ৪০টি দেশের সঙ্গে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকায় হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ান ম্যাথ কম্পিটিশন (এএমসি)। অস্ট্রেলিয়া ম্যাথ ট্রাস্টের উদ্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment