মাদারস ডে
অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে ব্যাপক আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে মাদারস ডে পালিত হয়ে থাকে। এই দিনটিতে ছেলেমেয়েরা ফুল ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী নিয়ে তাদের মায়েদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। তাদের দিনের সূচিতে মায়ের সাথে মধ্যাহ্ন ভোজও প্রাধান্য পেয়ে থাকে। পাশ্চাত্য সমাজে যেহেতু আঠারো বছর হলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে আলাদা থাকার প্রবনতা কাজ করে তাই অন্তত এই দিনটিতে তারা মায়ের কাছে এসে তার সানিধ্যে সময় কাটায়।
ইদানীং আমাদের দেশও মাদারস ডে পালনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। শহুরে সমাজে এ ধরনের দিবস ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই ধারণাকে সানন্দে লুফে নিয়ে তাদের মুনাফা সর্বোচ্চকরণি সচেষ্ট।অতি আধুনিক হতে গিয়ে আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে তৎপর। অথচ পাশ্চাত্য সমাজে ব্যাপক ভাবে চর্চিত সততা, মানুষের মর্যাদা, সহনশীলতার মত মানবিক গুণাবলির প্রতি আমাদের আগ্রহ অনেকাংশে কম।
বাজার অর্ধনীতির এই যুগে এ ধরনের দিবসের বাণিজ্যিক মূল্য তার আবেগিক মূল্যকে প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যায়।মা দিবসকে কেন্দ্র করে ঝলমলে বিপনী বিতানের পন্যের সমাহার মায়ের প্রতি ভালবাসাকে কতখানি ছুয়ে যায় তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। দামি উপহার দিয়ে অন্য যে কোনও সম্পর্ককে উচু মাত্রায় নেয়া গেলেও মা সন্তানের সম্পর্কে একই সূত্রের প্রয়োগ ঘটানো অসম্ভব।
পশ্চিমা সমাজে সন্তান সাবালক(আঠারো বছর) হলে যেমনি বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায় ঠিক আবার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম।অনেক আগে থেকে চলে আসা এই ব্যবস্থায় এখানকার লোকেরা প্রায় অভস্থই বলা যায়। তারা ধরেই নেয় কাজ থেকে অবসর নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলি তারা ওল্ড হোম বা নার্সিং হোমে কাটিয়ে দেবে। তারপরও শেষ জীবনটা পুত্র কন্যা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কাটানোর সুপ্ত বাসনা তাদের হয় কিনা, সেই খবর নিশ্চয়ই নেয়া হয় না।
আমাদের সমাজেও ইদানীং পশ্চিমাদের অনুকরণে একক পরিবারের ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বামী, স্ত্রী, সন্তান এবং একজন কাজের লোকের ছোট পরিবারের কাছে বাবা মা ভাই বোন সহ একান্নবর্তী পরিবারের আবেদন এখন সেকেলে।বাড়ীতে বাবা মায়ের উপস্থিতি আধুনিক সমাজের তথাকথিত প্রাইভেসী বিঘ্নিত হয় বলে অনেকের ধারনা। অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত বা ততখানি স্মার্ট নয় এমন বাবা মায়ের বাড়িতে উপস্থিতি যদি কারো সামাজিক মর্যাদায় হানি ঘটায় তবে সেই সমাজের চরম দেওলিয়াত্বকে বিবেচনায় নেওয়ার এখনই প্রকৃষ্ট সময়।
একজন মা নিজের স্বাদ আহ্লাদ জলাঞ্জলি দিয়ে পরম মমতায় তাঁর সন্তানদের প্রতিপালন করেন। সন্তানের স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে তিনি কখনও পিছপা হন না। বিনিময়ে আশা করেন ভালবাসা আর সামান্য সহচর্য। এই সামান্য প্রতিদানে কার্পণ্য করা মানুষেরা তাদের নিজ সন্তানদের কাছ থেকে ভিন্ন আচরণ প্রত্যাশার দাবি রাখে না।
বাংলাদেশ সরকার বাবা মায়ের দেখভাল সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক করে ২০১৩ সালে একটি আইন প্রনয়ন করে।এ ধরনের আইন নিসন্দেহে অসহায় বৃদ্ধ বাবা মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তারপরও বলব মা বাবার জীবন সায়াহ্নে তাদের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ সন্তান সামাজিক অবস্থানে যত উচুতেই থাক না কেন, মানবিক অবস্থানে তার স্থান সর্বনিম্নে।
মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে সাড়ম্বরে মাদারস ডে পালনের মধ্যে যে নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা আর দ্বিমুখিতা প্রকাশ পায় তাকে না বলার এখনই সময়। মা সন্তানের স্বর্গীয় সম্পর্কের ব্যাপ্তি শুধুমাত্র একটি দিনে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতি মূহুর্তে। এই হোক এবারের মা দিবসে সবার সংকল্প।
বিশ্ব মা দিবসে আমার নিজের মা সহ দেশ বিদেশের সব মায়ের প্রতি রইল হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালবাসা। হ্যাপী মাদারস ডে।
Kazi Ashfaq Rahman
ছেলেবেলা থেকেই শান্তশিষ্ট ছিলাম বলে আমার মায়ের কাছে শুনেছি। দুষ্টুমি করার জন্য যে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন তা নিশ্চয়ই আমার ছিল না। আমার এই নিবুর্দ্ধিতা একসময় আমার মাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন আমার এই ছেলে জীবনে চলবে কি করে। এখন যেভাবে চলছি তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। ভালই তো আছি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত শিক্ষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে অনন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারাকে জীবনের বড় অর্জন বলে মনে করি। আমার স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী, আমার শত বোকামী, আলসেমী আর বৈষয়িক না হওয়াকে প্রকারান্তরে প্রশ্রয় দেওয়াতে আমার আর মানুষ হয়ে ওঠা হয়নি। আমার দুই সন্তান, আমি চাই তারা আমার মত বোকাই থেকে যাক কিন্তু আলোকিত মানবিক মানুষ হোক যা আমি হয়তো হতে পারিনি।
Related Articles
Decoding jute plant genome – an eye opener
Decoding jute plant genome is a breakthrough in the field of genomics research and biotechnology. It is a great achievement
অনেকের ভীড়ে একজন
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিক্সায় যেতে যেতে হঠাৎ পাশে থাকা বন্ধু চিৎকার করে উঠলো, হুয়াক্কা হুয়া! সব দাঁত বের করে, দাঁড়িয়ে উঠে,
Do we need a Care-taker government?
Since the last care-taker government took almost two years to allow the Election Commission to hold the 9th parliamentary elections