বিলু রাক্ষস এবং আমার কিছু ভাবনা

বিলু রাক্ষস এবং আমার কিছু ভাবনা

প্লট: বিলু তার আত্নার শান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তার ভেতরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এক রাক্ষস। এই রাক্ষস যেমন চেয়েছিল সঙ্গীত, তেমনি চেয়েছিল স্ত্রী-সন্তান সংসার। সবাইকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিল। সারা সিনেমায় আমরা বিলু রাক্ষসের ভেতরের এই ইউটোপিয়ান চিন্তাকে বাস্তবে খোঁজে ফেরার প্রচেষ্টা দেখতে পাই। কিন্তু হয়ে উঠেনা কিছুই।

এইরকম একটা মানুষের জীবনযাপন কে সিনেমায় তুলে ধরাটা খুবই কঠিন বিষয় বৈকি। বিষয়টা এতই সুরিয়েল যে সিনেমায় পুরোটা নিয়ে আসা একদম অসম্ভব ব্যাপার। তবুও পরিচালক চেষ্টা করেছেন। সেই প্রচেষ্টায় পুরোপুরি সার্থক না হলেও এইরকম সিনেমাগুলোই একদিন এক একটা মাস্টারপিস হয়ে উঠবে বাংলা সিনেমায়।

‘বিলু রাক্ষস’ একটা বিমূর্ত দৃশ্যকল্পের উৎসব।যারা সিনেমা প্রেমী কিংবা সিনেমা দেখেন নিয়মিত তাদের জন্য দেখা বাধ্যতামূলক। গত এক দশকে ঢাকা-কলকাতা মিলিয়ে এই রকম বাংলা সিনেমা ক’টা হয়েছে আমার সন্দেহ হয়। আমি নিশ্চিত ঢাকায় হয়নি। বিলু’র মত মানুষের প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরী করার মত যে ভাবনাটা প্রয়োজন তা অনেক পরিচালকের রয়েছে বলে চোখে পড়েনি! এখানে, প্রথাগত বাংলা সিনেমার চালু ঘরানা থেকে বেড়িয়ে আসার সৎ এবং সচেতন প্রচেষ্টা চোখে পড়ে এই সিনেমায়। পুরো সিনেমায় ক্যামেরার নড়াচড়া খুবই কম কারণ হিসেবে মনে হয়েছে বিলু’র অসহায়ত্ব এবং একাকিত্বকে ফুটিয়ে তোলা। সাথে আমাদেরকেও চ্যালেঞ্জ করেছে আমাদের বিলু’র খোঁজ নিতে। আমাদের ভেতরেও এক একটা ‘বিলু রাক্ষস’ রয়েছে। এই সোশিও টেকনো এইজে আমাদের এক একজন ‘বিলু রাক্ষস’ হয়ে উঠাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের আত্নাকে খোঁজে ফিরছি। আমরা আমাদের সহজ সরল, বাস্তবতার ছোঁয়া না লাগা বিলুকে খোজে ফিরছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু খোঁজ মেলে কি?

বিলু একজন বড় সঙ্গীত শিল্পী হতে চেয়েছিল, পারেনি। তার রিহার্সালের সময়গুলো বন্ধু-বান্ধবদের মদের আড্ডায় চলে যায়। তার স্ত্রী সোহিনীও একজন গায়িকা। কিন্তু বড় শিল্পী হওয়ার বাসনা সোহিনী’র নাই।সোহিনী চায় নতুন ফ্ল্যাট, নতুন স্পেস। সোহিনী চায় একটা সাজানো গোছানো সংসার। কিন্তু বিলু’র বাপদাদার বাড়ী ছেড়ে যেতে মন চায় না। বিলু চায় একটু রিহার্সাল করতে কিন্তু সোহিনী’র সেদিকে মন নাই। দুইজন দুই মেরুর বাসিন্দা। এই যে দ্বন্দ এটাকে আরোপিত মনে হয়েছে। বউ-ছেলে’র বিলুকে ছেড়ে চলে যাওয়াটা তাকে আরো একা করে দেয়। এদিকে বিলু এবং তার সহকর্মীদের আচরণকেও কেমন যেন লেগেছে। সিনেমার প্রয়োজনে জোর করে বসিয়ে দেয়া এইসব সহকর্মী। এদিকে বিলুর শৈশবের ক্রাশ কিছুটা বয়সে বড় রাণুদিকেও তার পাওয়া হয় না। এই রাণুদিকে না পাওয়াটাও বিলুকে আরো একা করে দেয়।

পুরো সিনেমাটা দেখতে দেখতে এটা মনে হয়েছে যে আমি ‘বিলু রাক্ষস’ না। আমার ভেতরে ‘বিলু রাক্ষস’ নাই। আমার জীবনটা ‘বিলু রাক্ষস’ এর মত হোক চাই না। কিন্তু চাইলেই ত সব হয়ে যায় না। ‘বিলু রাক্ষস’ও চেয়েছিল সব। কিন্তু পারিপার্শিকতার চাপে আমাদের চাওয়াগুলো’র আর পূরণ হয় না। এভাবেই আমাদের ইউটোপিয়ান চিন্তাগুলোও আলোর মুখ দেখে না। আর সোশিও টেকনো এইজে তাল মেলাতে না পেরে আমাদের ভেতরেও এক একজন ‘বিলু রাক্ষস’ বেড়ে উঠে। সাথে সাথে আমরা আমাদের আত্নাকেও হারিয়ে ফেলি। এই সিনেমাতে দিগন্ত কাকা’র ডাকে বিলু সারা দেয়। কিন্তু আমরা দিগন্ত কাকাকে দেখি না। তখনই বিলু বুঝতে পারে তার ভেতরের রাক্ষসটাকে। আচ্ছা এই দিগন্ত কাকাই কি সেই রাক্ষসটা?

আমি ৭.৫/১০ দিব। চমৎকার একটা সিনেমা। যারা সিনেমা নিয়ে ভাবেন তাদের জন্য ‘মাস্ট ওয়াচ’ এই সিনেমা।

জুবায়দুল জেকব


Place your ads here!

Related Articles

An Overview of Bangladesh Foreign Policy during the last 40 years

We are observing 40 years of our independence and it is appropriate to look briefly the foreign policy, Bangladesh pursued

ইডেন গার্ডেনসে টি-২০: বাংলদেশের খেলা দেখতে যাবেন?

ফজলুল বারী, কলকাতা থেকে: বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গালি থাকেন পশ্চিমবঙ্গে, কলকাতায়। সেই কলকাতায় আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলা। সুপার টেনের

প্রফেসর, কলামিস্ট, কবি ডঃ মিল্টনকে হত্যার হুমকি

নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, জনপ্রিয় কলামিস্ট, কবি ডঃ আবুল হাসনাত মিল্টনকে একটি এমেইল একাউন্ট থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বলা

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment