মাইগ্রেশনএজেন্টকীঅভিবাসনআইনজীবী?
কাউসার খান: ‘প্রধান চ্যাটার’, ‘খুচরা জেডি’, ‘ডিজিটাল জমিদার’—এসবগুলোই একেকটা পেশার ইংরেজি নামের বাংলা। নিজের ভাষায় অনূদিত হওয়া সত্ত্বেও এই পেশার নাম পড়ে কি বোঝা যাচ্ছে এই পেশাদারদের কাজ কী? তবে যদি বলা হয় ‘প্রধান গ্রাহক সেবা ব্যবস্থাপক’, ‘দোকান সহকারী’, ‘ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপক’, তাহলে নিশ্চয়ই ধারণা করতে খুব একটা অসুবিধে হবে না, এই পেশার মানুষেরা কী করেন। বিশ্বে প্রচলিত প্রায় সব পেশারই বাংলা নাম রয়েছে। তবে শুরুতেই যে পেশাগুলোর উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর মতো অনেক পেশার নামেরই সরাসরি বাংলা অনুবাদ করলে তা আসলে কোন পেশা সেটি অনেকের কাছেই সহজে বোধগম্য নয়। আবার এগুলোর মধ্যে বাংলা-ইংরেজির মিশ্রণ দোষও থেকে যায়। আর তাই এমন ভিন্ন ভাষার শব্দকে তার অর্থের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন স্থানীয় শব্দে অনুবাদ করাই শ্রেয়। এটা ভাষা সমৃদ্ধির ইতিবাচক দিকও।
দেশভিত্তিক এমনই অনেক প্রচলিত পেশার নাম রয়েছে, যার আদৌ কোনো বাংলা অনুবাদ বা শব্দ সংযোজন এখনো করা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ‘প্রিমিয়ার’-এর কথা। এই পদটির বাংলা কোনো জুতসই অর্থ নেই। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষায় সবচেয়ে মানানসই শব্দ ব্যবহার করা হয়। তাই কাজের সঙ্গে মিল থাকায় প্রিমিয়ারকে বাংলায় সাধারণত মুখ্যমন্ত্রী বলা হয়ে থাকে।
জীবিকা নির্বাহের ওপর নির্ভর করেই বেশির ভাগ পেশা চিহ্নিত হয়ে থাকে। যিনি কৃষিজীবী তাঁর জমি কিংবা কৃষি উৎপাদন যত ছোটই হোক, আধুনিক কিংবা পশ্চাৎপদ যা-ই হোক, ধনী অথবা গরিব যে দেশেরই হোক, তিনি কিন্তু কৃষিজীবী। শিক্ষাজীবীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি এ রকমই প্রযোজ্য। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকেরাই শিক্ষাজীবী। এবার তিনি কম জানেন না বেশি জানেন, উচ্চশিক্ষিত না নিম্ন শিক্ষিত, কম আয় না বেশি আয়—শিক্ষাজীবী হিসেবে সম্বোধন করতে এটা কখনো মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে না। ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থের এই তারতম্যের কারণে অনেক সময় বিপত্তিতে পড়তে হয় অস্ট্রেলিয়ার ‘রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট’ পেশাজীবীদের। ইংরেজি শব্দ মাইগ্রেশন এজেন্টের কোনো সরাসরি বাংলা বিশেষ্য নেই। তাই ইমিগ্রেশন ল বা অভিবাসন আইন ও এর কাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিল থাকায়, বাংলায় এই পেশাটিকে সবচেয়ে স্পষ্ট ও কাছাকাছি শব্দ, অভিবাসন আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ বা সম্বোধন করা হয়।
বিশ্বের শীর্ষ দশটি রক্ষণশীল আইনের দেশের তালিকায় অন্যতম একটি দেশ অস্ট্রেলিয়া। আর জোরদার আইনের এই দেশটিতে প্রায় যেকোনো সেবা তিনিই প্রদান করতে পারেন, যাকে যাচাই-বাছাই করে সরকার অনুমোদন দিয়েছে। ‘রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট’ অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করার জন্য সরকার কর্তৃক এ রকমই একজন অনুমোদিত ব্যক্তি। অভিবাসীদের দেশ হিসেবে খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ আইনের মতোই অনেক বেশি জোরদার দেশটির অভিবাসন আইনও। এ ছাড়া, অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি পরিপূর্ণ অভিবাসন মন্ত্রণালয়ও রয়েছে যা দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। কঠোর আইনের এ দেশটিতে অভিবাসীদের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দক্ষ পেশাদার হলেন রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট। যাদের বাংলায় অভিবাসন আইনজীবী হিসেবে সম্বোধন করা হয়।।
একজন নিবন্ধিত মাইগ্রেশন এজেন্ট হলেন অভিবাসন সংক্রান্ত যেকোনো সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম ব্যক্তি। অভিবাসন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞান তার রয়েছে বলেই সরকার কর্তৃক তিনি অনুমোদন পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন মাইগ্রেশন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অথোরিটি কর্তৃক নির্বাচিত হন একজন মাইগ্রেশন এজেন্ট। এই পেশাদারদের একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন প্রক্রিয়া ও অভিবাসন আইন—দুইয়েরই শিক্ষা, দক্ষতা ও জ্ঞান রয়েছে। এই দক্ষ ও আইনি জ্ঞানের মাধ্যমে একজন মাইগ্রেশন এজেন্ট দেশটির অভিবাসী ও দেশটিতে অভিবাসী হতে ইচ্ছুকদের অভিবাসন সংক্রান্ত যেকোনো সহায়তা করে থাকেন। এ ছাড়া, এই পেশাদারেরা অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ, নাগরিকত্ব বিভাগ, অভিবাসন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে অভিবাসীদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার অনুমতি রাখেন।
অন্যদিকে, একজন মাইগ্রেশন এজেন্টকে প্রতি বছর সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নবায়নও করতে হয়। একজন মাইগ্রেশন এজেন্ট নিবন্ধিত হতে হলে প্রাথমিক অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনবিষয়ক গ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট পাস, ইংরেজির দক্ষতা আইইএলটিএস-এ ৭ স্কোরসহ থাকতে হবে ইনস্যুরেন্স ও অভিবাসন আইন সমৃদ্ধ পাঠাগারের সদস্যপদ। এরপর প্রতিবছর নিবন্ধন নবায়নের সময় আবার নিয়মিত পেশাদারির উন্নয়নমূলক কোর্স সমাপ্তি ও এর প্রমাণপত্রও বাধ্যতামূলক জমা দিতে হয়। তবে অভিবাসন আইন সংক্রান্ত কোনো মামলায় মক্কেলের হয়ে আদালতে লড়ার কোনো অনুমতি নেই একজন মাইগ্রেশন এজেন্টের। মাইগ্রেশন এজেন্ট মক্কেলের হয়ে শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত লড়তে পারেন।
প্রায় সকল অভিবাসন আইন ও প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যায় একজন মাইগ্রেশন এজেন্ট বা অভিবাসন আইনজীবীর কাছ থেকে। আর কোনো ভিনদেশি শব্দের স্থানীয় ভাষায় রূপান্তর বা অনুবাদ করতে তার নিজের ভাষায় স্পষ্ট বোঝা যায় এমন শব্দই ব্যবহার করা হয়। একে বলে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং। তাই অস্ট্রেলিয়ার রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্টকে বাংলায় অভিবাসন আইনজীবী বলাই উত্তম। অস্ট্রেলিয়ায় একজন সিনিয়র ব্যারিস্টার অথবা জুনিয়র, সলিসিটার অথবা ইন হাউস ল অ্যাডভাইজার অথবা মাইগ্রেশন এজেন্ট যিনিই অভিবাসন আইন, প্রক্রিয়া ও সেবা নিয়ে কাজ করতে চান তাঁকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ান সরকারের মাইগ্রেশন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অথোরিটি কর্তৃক নিবন্ধিত হতে হয়।
আমি অস্ট্রেলিয়ায় একজন রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট হিসেবে প্রায় এক দশক সময় কর্মরত রয়েছি। অনেক সময়ই বাংলাদেশের পত্রিকায় বাংলা ভাষায় অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন জরুরি ইস্যুতে লিখে থাকি। আর পাঠকের কাছে সেই তথ্যের ভিত্তি ঠিক রাখতে প্রকাশিত সেই সব তথ্যে আমার পেশা অভিবাসন আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করি। এর কারণ একটাই, বাংলা ভাষাভাষী মানুষজন যেন সহজে বুঝতে পারেন লেখক আসলে কী করেন। তাই ইংরেজি শব্দটির বাংলায় সবচেয়ে মানাসই শব্দটিই ব্যবহার করা হয়।
অভিবাসনের তথ্যবহুল সংবাদগুলোর মাধ্যমে সহায়তা করাই উদ্দেশ্য। পেশার ভুল উপস্থাপন নয় বরং সহজ বোধগম্য উপস্থাপন-ই উদ্দেশ্য।
কাউসার খান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
Related Articles
বনভোজনের বর্নিল ছোঁয়ায় আলোড়িত ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল।
“সব প্রান বলে আজ সদলবলে শিহরিত তণু-মন দেখ খুশি চারিদিক আলো ঝিকিমিক হচ্ছে বনভোজন”। বহু বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো ক্যাম্বেলটাউন বাংলা
প্রিয় লেখকের পক্ষপাতিত্ব! – জন মার্টিন
এক: ইন্টারনেট আমাদের অনেক কিছু বদলিয়ে দিয়েছে। সারা পৃথিবী হাতের মুঠোয় এনে দিলেও মানুষের সাথে মানুষের দূরত্বটি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং জিয়ার ঘোষণাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা – ইউরোপের প্রথম বাঙালি এমপি ড. কস্তা
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁদের অবদান অপরিসীম, এমন যে কারো কফিনের ওপর ‘রাজনীতি’ না করার জন্য বাংলা মায়ের প্রতিটি সন্তানের