বন্ধুত্বের স্বরূপ

বন্ধুত্বের স্বরূপ

“আমি ভালোবাসি যারে সে কি কভু আমা হতে দুরে যেতে পারে!”

পারে। খুব পারে। আজ কাল কাছে থাকা নির্ধারন করা হয় ভিন্ন কিছু দিয়ে, কে কত খাওয়াইলো, কে কত কি দিল, কার বাড়ি কত বড়, কার কাছে গিয়া মনের আনন্দে অন্যের নামে কুটনামি করা যায়, কে অতীত ইতিহাস জানে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটা সময় ছিল যখন বন্ধুত্ব হতো মনের মিলে। এখন বন্ধুত্ব হয় শত্রুতে  শত্রুতে। আপনার বন্ধু যখন আর আপনাকে বন্ধু বলে মনে করছেনা, তখন সে গিয়া গলা ধরবে সেই মানুষের, যার দুর্ব্যবহারের কথা আপনি কোনো সময় হয়তো মনের দু:খে তার সাথে শেয়ার করেছিলেন। তারপর তারা দুজন মিলে আপনাকে যত ধরনের মানসিক যন্ত্রনা দেয়া যায় তার সব গুলোর সুব্যবহার করে ছাড়বে। আর এই সব দেখানোর জন্য ফেইসবুক এখন সবচেয়ে বড় মিডিয়া।


মানুষ দিন দিন কেমন যেনো প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে যাচ্ছে। কোনে ধৈর্য্য নেই কারো। নেই কোনো সহমর্মিতাবোধ। একজন কোনো কারনে একটু ডাউন হলেই তাকে যেন সবাই মিলে এক ঘরে করার একটা প্রতিযোগীতা শুরু করে। শুরু হয় টিম ওয়ার্ক।এরা জনে জনে গিয়ে সত্য মিথ্যা বানিয়ে অন্যের মনটাকে আপনার প্রতি এতটাই বিষিয়ে দেয় যে অজানা অচেনাও আপনার সাথে মিশতে ভয় পাবে। এরা হেন কথা নাই যে বলে না।


যদিও এই বিষয় আমাদের সমাজে নতুন না, কিন্তু এর মাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে একটা সময় কেউ আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। কেউ আর দু:খ সুখের কথা বন্ধু নামধারী মানুষটাকে জানাতে ভরসা পাবে না।


আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি, সবাই বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয় -স্বজন, বন্ধু -বান্ধব ছেড়ে এখানে মুলত: একাই থাকি। তখন কারো সাথে যখন ঘনিষ্টতা হয়, সুখ এবং দু:খে সব কিছু তার সাথেই শেয়ার করতে চাই। আর সেই মানুষটি যদি কোনো কারনে সরে যায় তখন, সেই কথা গুলোকে অস্ত্র বানিয়ে সে এক যুদ্ধে নেমে পড়ে। মরনপণ যুদ্ধ। অন্যের সামনে আপনাকে খাটো করার যুদ্ধ। আপনাকে কোনঠাসা করার যুদ্ধ।

প্রতীকী ছবি (ইন্টারনেট থেকে)


ছোটবেলায় মা, মাসি কে দেখেছি তাদের অভাব অভিযোগের কথা আসে পাশের মাসী, পিশী, কাকীদের সাথে শেয়ার করতে।তারাই ছিল তাদের বন্ধু। আবার পাড়ার অন্য কাকি জেঠীরাও তেমনি যে কোনো প্রয়োজনে আলুটা মুলোটা নিতে কোনো ভনিতা করতেন না। সেটা নিয়ে কে কি ভাববে তার চিন্তা করতেন না। কে কত সস্তায় কি কিনলেন সেটা জানাতেন। ভালো উপদেশ, পরামর্শ আদান প্রদান করতেন।


আর এখন কে কত দামী জিনিষ কিনলাম, কত বড় দোকান থেকে কিনলাম তার বড়াই এ কান ঝালাপালা। আর অভাব অভিযোগ বালাইষাট। আমরা সবাই চরম সুখী  , বড়ই সচ্ছ্বল। 
কারন কারো একটু দৈন্যদশা হলে তাকে তো বয়কট পলিসি তে ফেলা দেয়া হয়। আর উপদেশ, পরামর্শ তো নৈব নৈব চ।


তাই বলছিলাম বন্ধুর ভালোবাসার ধরন গেছে বদলে, বন্ধুত্ব মানে শুধুই ভনিতা। বন্ধু মানে মুখোস পরা কিছু মানুষ, যারা সামনে আপনার গলা ধরে ছবি তুলছে তারাই আবার আপনার আড়ালে আপনার গলা কাটছে।

প্রতীকী ছবি (ইন্টারনেট থেকে)

পূরবী পারমিতা বোস

পূরবী পারমিতা বোস


Place your ads here!

Related Articles

শুভ জন্মদিন রনো ভাই

ফজলুল বারী: স্বৈরাচার এরশাদ আমলে ছোটন ভাই নামের এক যুবনেতার সঙ্গে আমাদের বিচিন্তা কর্মীদের দারুন সখ্য হয়। পুরো নাম নুরুল

Bangla Article on Food by Almamun Ashrafi

খাবারে বৈচিত্র, বাচ্চার স্বাস্থ্য ও সরকারের ভূমিকা – আলমামুন আশরাফী বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে কৃষি নির্ভরতা থেকে ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্টান

Research Paper on Dhaka Transport

ঢাকার যাতায়াত ও অন্যান্য সমস্যার একটি নিশ্চিত সমাধান (প্রথম পর্ব) ভূমিকাঃ ঢাকা শহরের যানবাহন সমস্যার সমাধান কি আদৌ সম্ভব ?

2 comments

Write a comment
  1. Badhan
    Badhan 1 July, 2018, 10:18

    Excellent likhechen didi, ekdom 100% truth, dindin soby fake hoye jacche…

    Reply this comment
    • Purabee
      Purabee 3 July, 2018, 00:37

      অনেক ধন্যবাদ।সত্যি আমাদের আশেপাশে থেকে নির্ভরতার জায়গা গুলো ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।বন্ধু বলে আর কিছু থাকছে না।

      Reply this comment

Write a Comment