ফেইসবুক প্রোফাইল সমাচার

ফেইসবুক প্রোফাইল সমাচার

আজ সারাদিন মনটা বড় খারাপ, বিষণ্ণ, মলিন। প্রোফাইল পিকচারটা এত সাধ করে পরিবর্তন করলাম কিন্তু সারাদিনে মাত্র তিনটি লাইক পেলাম। এর মধ্যে একটি নিজের স্ত্রীর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নিজেরই দেয়া আর অন্যটি আমার প্রিয় বন্ধু শামিম এর। তার সাথে আমার একটা গোপন সমঝোতা রয়েছে। যেখানে দুজন দুজনকে নিঃশর্ত অকৃপণ হাতে দিনের পর দিন কিছু না দেখেই লাইক দিয়ে যাই। অনেকটা ব্ল্যাংক চেক এর মত। উইন উইন সিচুয়েশন ফর বোথ। সেদিন আমার এক বন্ধু দু’পা ভেঙ্গে হাসপাতালে যাবার খবরেও একশত তিনটা লাইক পেয়েছিলো। সাবাই কি আর আমার মত অভাগা!

এ ক্ষেত্রে সবচে বেশি ঈর্ষা হয় বন্ধু টনির সাথে। ওর ভাগ্য এত ভাল যে, চুল ছাড়া মাথায় আর পায়ে এক জোড়া চপ্পল পরে, কোরবানির গরুর মালা গলায় দিয়ে ক্যামেরার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও সে শত শত লাইক পায়। আর আমি সেদিন বউ এর সবুজ শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে পাঞ্জাবি আর ম্যাচিং সবুজ প্রচ্ছদ এর কবিতার বই হাতে নিয়ে ছবি তুলেও সুপার ফ্লপ। অবশ্য এতে আমার কিছুটা দোষ ছিল। আমার ছেলে যখন ছবি তুলবে, এক ফাঁকে হটাৎ চট করে বাথরুমে গিয়ে ব্লাডার খালি করতে গেলাম। তাড়াহুড়া করে কাজ টা সারতে গিয়ে সবকিছু আর ঠিক করে লাগানো হয় নি। অসম্পূর্ণ প্রস্তুতিতে ছবিটা তোলায় যা হয়! যদিও ভাল করে না দেখলে বোঝা যায় না। কিন্ত আমার স্ত্রীর ধারণা “সবাই তো আর তোমার মত” কানা না। এ ছবিতে কোন বোকা লাইক দেবে। তোমার চশমা টা বদলাতে হবে।

ইদানীং তার আবার সেলফি তোলার খুব সাধ। যেটা আবার আমার একদমই পছন্দ না।একবার ভাবলাম তাকে বলি সেলফিতে তোমার মুখটা চালকুমড়ার মত লাগে। বলার লোভটা অনেক কষ্টে সংবরণ করলাম। এ ধরনের অপরাধের সাজা সাধারণতঃ তিনদিন চুলার হাড়ি না বসা, আর ফেইসবুক এর লিস্ট থেকে আনফ্রেন্ড হওয়া। অনেক ভেবেচিন্তে মুখে হাসি হাসি ভাব করে, আর কণ্ঠটা যতটা পারি রোমান্টিক করে বললাম, সেলফিতে তোমার মুখটা পূর্ণিমার চাঁদের মত আর পেছনে আমাদের ছোট ছোট চোখগুলো দুর আকাশের মিটিমিটি তারার মত লাগে। চাঁদের জ্যোতিতে তারাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যায়। এতে আমার স্ত্রীর সেলফিতে উৎসাহ না কমে আরও বেড়ে গেল।

সেদিন আমার ছোট মেয়ের বায়না রাখতে এনিম্যাল ফার্ম দেখতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে আমার বউ এর সাধ হল ছাগলের সাথে সেলফি তুলবে। ছাগলটাও কি কারণে যেন দাঁত বের করে হাসি দিয়ে তারসাথে সেলফি তুলতে রাজী হয়ে গেল। শুধু তাইনা তার রূপে মুগ্ধ হয়ে, ছবি তোলার ঠিক আগে জিহবা দিয়ে তার গালচা চেটে দিল। সঙ্গত কারণেই ছবিটি সুপারহিট হয়ে ছিল। এক বন্ধু কমেন্ট করেছিল, “সস্ত্রীক জেরিন”।

সবকিছুর মত আমার স্ত্রী সেদিন বোরহানি রান্না করার খবরটা ফেইসবুকে দিয়ে দিল। সাধারণত সে বাজার থেকে ডিম বা আলু কিনলেও সে ছবি ফেইসবুকে দিয়ে দেয়, বোরহানি তো বিরাট বেপার। সেই বোরহানি খেয়ে তিন দিন বাথরুম এ বসে থাকলাম। কিন্ত আমার স্ত্রী ভীষণ খুশি, ফেইসবুকের স্ট্যাটাস হিট।

কি আর করা! ভাবলাম জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবার প্রোফেশনাল অ্যাডভাইস নিব। আমার বন্ধু চপল, মডেলিংয়ে ভীষণ ঝোঁক। তার স্ত্রী দিনা নামি মডেল। সে জানে কি করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। চপল কম কথা বলে, সে কানে কানে শুধু বলল “ফ্লেশ।” একটু ভয় হল। ভাবলাম উল্লাহ পরিবারের কৃতি ছেলে নুরুল্লাহর উপর দিয়ে এক্সপেরিমেন্টটা চালালে কেমন হয়? তাই করলাম। নুরুল্লাহ একটু কুঁজো, আগে মাথাতে চুল থাকলেও এখন কোন চুল নাই, বিরাট ভুঁড়ি, পারফেক্ট। নুরুল্লাহকে খালি গায়ে একটা লুঙ্গি পরালাম। বাম হাতটা কোমরে আর ডান হাত দিয়ে লুঙ্গিটা গোড়ালির উপর টেনে তুলে দাঁড় করালাম। বুকটা একটা গামছা দিয়ে ঢেকে, ভুঁড়িটা সামনে দিয়ে ছবি তুললাম। ব্যস, আর যাই কোথায়, রাতারাতি সুপার হিট। আমিও তৈরি হয়ে গেলাম। স্ত্রী বাইরে আর সেই ফাঁকে তার শাড়ি কেটে লুঙ্গি, আর ওড়না দিয়া গামছা বানালাম। এবার বাগড়া দিল আমার কন্যা। আমাকে নাকি শাঁকচুন্নির মত লাগছে । সে কিছুতেই ছবি তুলবে না। ঘরে ঢুকে তার শাড়ির এই অবস্থা দেখে আমার স্ত্রীর তো মূর্ছা যাবার পালা।

সপ্তাহ শেষে রবিবার দুটি দাওয়াত একই সময়ে। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করলাম ব্রিসবেনে চপলের বাসায় যাব। কারণ ও ফেইসবুক এ ভীষণ অ্যাক্টিভ। দাওয়াত শেষ হবার আগেই ছবি গুলি ফেইসবুকে উঠবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এ সহজ সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। প্রবলেম একটাই, মেয়েদের টিয়া রঙ এর ম্যাচিং শাড়ি আর ছেলেদের টিয়া রঙ এর পাঞ্জাবী অথবা শার্ট পরে পার্টিতে যেতে হবে। আমার স্ত্রীর ধারনা “চমৎকার আইডিয়া”। আমি মনে মনে ভাবছি আমার এই দুধে আলতা রঙ এ টিয়া রঙ এর জামা, রাস্তাই না মার খেতে হয়। যাই হোক, অনেক কষ্টে বউ কে রাজি করালাম জামার পরিবর্তে টিয়া রঙ এর টাই পরে পার্টিতে যাব। বউ প্রসাধনীতে ব্যস্ত আর আমি হন্যে হয়ে টিয়া রঙ এর টাই খুঁজি। দুপুর প্রায় বারোটা বাজছে। টিয়া রঙ এর টাই আর পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ মেষ একটা টিয়া রঙের অ্যান্ডি খুঁজে পেলেম। ভাবলাম চালিয়ে দেয়া যাবে। সেরেছে আর একটু হলে আমার পার্টিতে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আমার ছোট মেয়ে কোথা থেকে যেন একটা টিয়া রঙ এর লম্বা কাগজ নিয়ে এলো, “ড্যাডি দিস ইজ ইয়োর গ্রীণ টেইল ইন্সটিড অফ গ্রীণ টাই ফর দি পার্টি, পারফেক্ট ম্যাচ।” আমার মেয়ের সময়মত হস্তখেপে এ সেযাত্রা বেচে গেলাম । মুখ টা বাংলা পাঁচের মত করে, সবুজ ল্যাজটা প্যান্টের পেছনে গুঁজে বানরের মত চার হাত পায়ে লাফাতে লাফাতে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। মেয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অনেকগুলি ছবি তুলল, ভাবলাম এবার পাওয়া গেলো পারফেকট ফেইসবুক পিকচার।

আতিফুর রহমান জেরিন

Dr Atifur Rahman Zarin

Dr Atifur Rahman Zarin

Associate Professor MBBS FRACP FCANZ Interventional Cardiologist GC Heart & Specialist Centre


Place your ads here!

Related Articles

ইসলামী রাষ্ট্র: কেউ চায় ভোটে, কেউ চায় অস্ত্র হাতে

আপনি মানেন আর না মানেন প্রকৃত সত্য হচ্ছে; জঙ্গি ইস্যু কিন্তু একটি ইসলাম ধর্মীয় ইস্যু। এটা শুধু বাংলাদেশে না। সারা

Bangla Article on Food by Almamun Ashrafi

খাবারে বৈচিত্র, বাচ্চার স্বাস্থ্য ও সরকারের ভূমিকা – আলমামুন আশরাফী বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে কৃষি নির্ভরতা থেকে ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্টান

শত্রু শফি বন্ধু শফি

ফজলুল বারী: যে হেফাজতে ইসলাম বিএনপির সমর্থনে ঢাকায় এসে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মতিঝিল সহ রাজধানী জুড়ে তান্ডব চালিয়েছে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment