টাকার কাছে ডলার হেরে গেছে
বাংলাদেশের এক মফস্বল শহর থেকে বলছি …,
হতাশ হওয়ার কিচ্ছু নাই। টাকা পয়সার দিক দিয়ে দেশ সামনের দিকে হরহর,হুরুস্থুল, ধুমধাম করে এগিয়ে চলছে। কেন বলছি ? তবে শুনুন …
৫০ টাকার চটপটি কয়েক চামচ খাওয়ার পরে ফিনিশ। তবুও লোকে খাচ্ছে, রোজ খাচ্ছে, প্রচুর খাচ্ছে। রিক্সার সিটে পৃষ্টদেশ ঠেকাবেন মানেই ৩০ টাকা। তবুও লোকে দরকার সহ অদরকারেও রিক্সায় চড়ছে আবার ঘুরছে। দুই টাকার শিঙ্গাড়া ৮ টাকা হয়েছে, তবুও লোকে খাচ্ছে, বরং আগের চাইতে বেশীই খাচ্ছে।
মফস্বলের সেই টিনশেড বাড়ী, একতলা -দোতলা ভবনগুলো এখন একেকটা দানব দালান । সবুজ খেলার মাঠ অথবা আড্ডাবাজীর জায়গাগুলো বিলুপ্ত প্রায়। চারিদিকে নির্মাণাধীন অট্টালিকার ধূলা আর শীতের কুয়াশার মধ্যে কোনটা ধূলা আর কোনটা কুয়াশা ঠাহর করা মুসলিক অ্যাই মিন মুশকিল। ।
জায়গা জায়গায়, মোড়ে মোড়ে রেসটুডেনট খাবারের অর্ডার অথবা মেন্যু পেজে হাত দিতে গেলে চক্ষু আপনার চড়কগাছ হবে, তবু লোক রোজ আসচ্ছে, যাচ্ছে, খাচ্ছে।
বিয়ে বাড়ীতে সৌখিন মেয়েরা পার্লারের জন্য তিনদিন বুকীইং দিয়ে রাখছে গায়ে হলুদ, বরযাত্রী, বৌভাত। মুখ, মাথা, কপাল সাজাতে কমপক্ষে ৫ হাজার তারমানে তিন পাচা ১৫ হাজার টাকা। শুধু মুখে পাউডার দিতে খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার, এটা কমপক্ষের কথা বললাম।
দর্জির কাছে জামার মুজুরী ১৫০ টাকার জায়গায় ৫৫০ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জামার কাপড়ের চাইতে জামার মুজুরী তিন গুন। তবুও লোকের নিত্য নতুন জামা কাপড়ের অভাব নাই।
বাড়ীতে সাহায্যকারীর অভাব। প্রতি কাজ ৬০০ টাকায় ও সেধে যেচে লোক পাওয়া মুশকিল। তারা বলেন, “ইট ভাটায় কাম করলে রোজ পামু ৩০০ ট্যাঁহা, আর আপনের বাড়ী কাম করলে মাসে পামু প্রতি কামে ৬০০ ট্যাঁহা। ইট ভাটায় কাম করলে সেইহানে পামু ৭০০০ ট্যাঁহার উপ্রে, তাইলে আমরা হুদাই বাড়িত কাম ক্যা করবো ?! ! ( তাদের কথায় সঠিক যুক্তি আছে )।
ডিমের হালী ৪০ টাকা। কলার হালী ২০ টাকা। গরু, মুরগী, ছাগলের মাংসের মূল্য আগের চাইতে ২ গুন।।অস্ট্রেলিয়ায় পিঁয়াজ কিনি ১ ডলার মানে বাংলাদেশী টাকার ৬৪ টাকা দিয়ে আর এখানে পিঁয়াজের কেজী ১৪০ টাকা, তবুও লোকে পিঁয়াজ কিনে পিঁয়াজ খায় আবার পিঁয়াজিও বানায়।
যারা আমাদের মতো দুই এক বছর পর পর দেশে আসেন, তারা প্রতিবারই একটা বিশাল ধাক্কা খেয়ে থাকেন। আর যারা ৪/৫ বছর পর পর দেশে আসেন অথবা আসবেন তারা পেসারের ঔষধ সঙ্গে রাখবেন, প্লীজ। আপনি টাকাকে কম কিছু ভাবতে পারবেন না …হরহর করে টাকা ভ্যানীস হবে মাগার আপনার বাজারের ব্যাগ ভরবে না। তখন আপনার মনে হবে ধুরও টাকার কাছে তো ডলার কিচ্ছুই না।
তো ? কে বলে যে আমাদের দেশ গরীব ?দেশে বিশৃঙ্খলা থাকতে পারে, করাপশন থাকতে পারে, ধূলা -জ্যাম থাকতে পারে, আইনের শাসন খারাপ হতে পারে, প্রশ্ন পত্র রোজ রোজ ফাঁস হতে পারে মাগার দেশ কিন্তু গরীব নহে, মশাই…, দেশের টাকা ডলারের ক্ষমতাকে চিৎ কাইত করতে পারে মুহূর্তে। দেশে বেড়াতে আসচ্ছী ২ মাসের জন্য এর মধ্যে ২০ দিন অতিক্রম করেছে মাত্র, কিন্তু ইতিমধ্যে আমি “কাইৎ হই গেছি”।
Sharifa TulTuly
শরিফা তাসমীম (টুলটুলী)। জন্মস্থান ; ফরিদপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে, প্রথমে ই আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা করেন। এর পর ঢাকা কমার্স কলেজে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে স্বামী সন্তানের সাথে অস্ট্রেলিয়া আসেন ও স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
Related Articles
বহে যায় দিন – দিন চলে যায়, সবই বদলায়
> বহে-যায়-দিন সকল প্রকাশিত পর্ব > ।। এক ।। দিন চলে যায়, সবই বদলায় (২০০৬ প্রকাশিত ধারাবাহিকের পুনঃ প্রকাশ) সকাল
মৃত্যুর সহজ উপায়
মৃত্যুর সবচেয়ে সহজ উপায় কি? সুমনের সামনে সম্ভাব্য উপায় আছে ৩ টি। এক, ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়া। দুই, ছাদে উঠে
Probashe Ekush Bhabna
প্রবাসে একুশ নিয়ে আমার ভাবনা ছিল আরো উপরে পাকিস্তানিরা আমাদেরকে ২৩বছর কাজের বুয়া আর গাঁয়ের রাখাল বানিয়ে রেখেছিল । ১৯৯৯
খুবই সত্যি বলেছেন আপু।
নিজেকে ভিখারী মনে হয়। এখানে ১০০ ডলারে ৫-৬ জন অনায়েসে খেতে পারে আর বাংলাদেশে একই মানের জায়গায় গেলে দুইগুন, তিনগুন টাকা লাগে। সবাই ভাবে ডলার নিয়ে আসছে চিন্তার কি আছে?