পৈতৃক পেশার শ্রদ্ধাবোধেই আজ বিশ্বনন্দিত মিস মারঠা কিং
নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের ডিজিটালমুখী বিজ্ঞান প্রযুক্তির উত্তালের আশীর্বাদ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার গেইম নির্ভর ব্যস্ততায় ছুটাছুটি করেই সময় কেটে যায়। তার উপর রয়েছে স্কুলের নিয়মিত পাঠ তৈরির চাপ, খেলা ধুলার প্রস্তুতি-প্রতিযোগিতা, বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে এটা-সেটা করা, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা ইত্যাদি। আধুনিক এযুগের শিশু-কিশোর-তারুণ্যের ব্যস্ততা প্রশমনে যোগান দিতে আধুনিক বাবা-মা’দেরও হিমশিম খেতে হয় সপ্তাহের প্রতিটি দিন। সপ্তাহান্তের ছুটির দিন মানেতো বাবা-মা’দের রুটিন ছাড়া দৌড়-লাফ-ঝাপের মধ্যেই সময় পাড় করে দিয়ে পূর্ণ সপ্তার প্রস্তুতি নেয়ার কঠিন পরীক্ষা চলে প্রতিনিয়ত। তার মধ্যে মাতৃভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি তথা সামাজিক, নৈতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধের নুন্যতম অনুশীলনে মনোনিবেশ করার সময় সুযোগ বের করাটা মাতা-পিতা সন্তান উভয়ের জন্যই কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে পাশ্চাত্য সমাজের ধাচে বেড়ে উঠা শিশু অভিবাবকদের এ অবস্থা সর্বত্র লক্ষণীয়। মাতা-পিতার পেশা তথা পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধাচে গড়ে উঠা বা অনুকরণে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মানসিকতা আজকালের শিশুদের মধ্যে খুবই বিরল। বিশেষ করে বিজ্ঞান প্রযুক্তির এই যুগে শিশু কিশোরদের দৃষ্টি বা উৎসাহ প্রকৃতি নির্ভর সৃজনশীল না হয়ে প্রযুক্তি নির্ভর অনুশীলনীয় খেলাধুলা, শিক্ষা, যা তাদের ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে সহায়তার পাশাপাশি মনোরঞ্জনের পরিপূরক। এর বিশেষ কারন হিসেবে দেখা যায় বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, বহুমুখী শিক্ষা-প্রশিক্ষণের সুযোগের পাশাপাশি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা শিশুদেরকে পিতামাতা তথা বংশীয় পেশাভিত্তিক জ্ঞান অর্জনে নিরুৎসাহ করে। তদুপরি যদি পিতামাতার পেশা কৃষিভিত্তিক বা প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন সেকালীয় গেয়ো বা কায়িক পরিশ্রম ভিত্তিক পেশা হয়ে থাকে, তা হলেতো কথাই নেই। আর্থিকভাবে স্বচ্চল পিতামাতা সন্তানদের আধুনিক শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলার প্রয়োজনে পরম স্নেহ মমতা আগলে রেখে নির্ঘাত নির্বাসনে পাঠিয়েও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার প্রয়াসে সম্ভাব্য সব কিছু করতে বদ্ধপরিকর।
প্রাকৃতিক উন্মুক্ত শিক্ষার সুযোগ শিশুদের সৃজনশীল চিন্তা, চেতনা এবং মননশীলতা গঠনে সবচাইতে উপযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক, সাধারন প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গগনচুম্বী উত্তরণের সর্বক্ষেত্রেই এটি প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত যে, প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিকভাবে ঘটমান ঘটনা জানা-অজানা সকল বিস্ময়ের সৃজনশীল গবেষণা-বিশ্লেষণের ক্রমোত্থানের ফসল বর্তমান আধুনিক চাকচিক্য এপৃথিবী। প্রযুক্তির যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে সাম্প্রতিক কালের বহু বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী এপৃথিবীর মানুষ, যেখানে অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুলগামী কিশোর-শিশুরা বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ বাপ-কাকাদের ডিঙ্গিয়ে কিভাবে বিকশিত হয়ে দখল করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কিছু অবস্থান, নিয়ন্ত্রণ করছে বৈশ্বিক সোশাল মিডিয়া জাতীয় প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণীয় দায়িত্ব। যদিও এসংখ্যা হাতে গুনা কয়েকটি মাত্র, তবুও গবেষণা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পিতা-মাতার পেশার সাথে শিশুর একান্ত সান্নিধ্যতা এবং মাতা-পিতাকর্তৃক সৃষ্ট অণুকুল পরিস্থিতি, পরিচর্যা এবং সাহচর্য শিশুর সৃজনশীলতাকে গভীর থেকে গভীরতর পর্যায়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাদেরকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিস্ময়কর বালক হিসেবে। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি আমাদের সকলের জন্য শিক্ষণীয় যে, সাধারণত একটি শিশুর মেধা জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে তার পারিবারই প্রাথমিক এবং প্রধান প্রতিষ্ঠান, এবং মাতা-পিতার সাহচর্য এবং নৈকট্য শিশুর মেধা, জ্ঞান বিকাশ তথা ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রধান ভিত্তি। জ্ঞান, মেধা, বুদ্ধিদিপ্ততা, সৃজনশীলতা ব্যক্তিত্ব গঠনে মাতা-পিতা এবং পারিবারিক পরিবেশীয় শিক্ষাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
আমেরিকার পেনসেলভেলিনিয়ায় পারিবারিক বলয়ে বেড়ে উঠা মিস মারঠা কিং এমনি ধরনের একটি ব্যতিক্রমী প্রতিভা। যার খ্যাতি এখন বিশ্বজোড়া। ইস্টার সো’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রতিযোগিতায় তিনি সিডনীর অলিম্পিক পার্কে কাঠ কাটার (Wood Chopping)প্রতিযোগী। দেখতে, পোশাকে কথায় আনাড়ি মনে হওয়া মেয়েটিকে (মহিলা) মারটিন প্লেইচ’এর চ্যানেল সেভেন এর দিক থেকে কুড়াল কাঁধে রাস্তা পাড়ি দিতে একবারও মনে হয়নি মেয়েটি বিশ্বখ্যাতি অর্জনে প্রতিযোগিতার সুদূর অ্যামেরিকা থেকে সিডনিতে, অথবা এইমাত্র তিনি চ্যানেল সেভেনের জনপ্রিয় মর্নিং সো’র লাইভ প্রোগ্রামের ইন্টারভিউ শেষ করেই বেড় হয়েছেন। আমেরিকায় জন্ম নেয়া কাঠ ব্যবসায়ীর মেয়ে (মি রিচারড হারনি, হারনি হার্ডউডস ইনক, ২০০ হোয়াইটসাইড ড্রাইভ, অক্সফোর্ড, পেনসেলভেনিয়া, ইউএসএ) মিস মারঠা কিং কোন প্রকার প্রশিক্ষণ বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতিরেকে বাবার ব্যবসার কাঠকাটা দেখতে দেখতেই নাকি বিশ্ববরেণ্য উঠেছেন। অত্যন্ত সাধাসিধে মাংস-মেদহীন মেয়েটি নিজেও জানেনা কিভাবে এই দক্ষতা অর্জন করেছে, বিশেষ করে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীর প্রায় সকলেই যেখানে দীর্ঘ দেহের অধিকারি। তিনি স্বল্প সময়ে তাঁর উত্থানের বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে বার বার বুঝাতে চেয়েছেন, কোন প্রশিক্ষণ নয়, বরং তাঁর বাবার ব্যবসায়ের বিভিন্ন দক্ষ কাঠুরিয়ার নিয়মিত কাঠ কাটার চাক্ষুষ অবলোকন (প্রশিক্ষণ নয়) তাঁকে তার অজান্তেই অনেক কিছু শিখিয়েছে। স্কুল পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় হঠাৎ করে নাম লেখানো এবং প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই এবিষয়ে তিনি উৎসাহী হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে স্টেট এবং জাতীয় পর্যায়ের শিরোপা অর্জনের পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের প্রতিযোগিতায় তিনি আজ অস্ট্রেলিয়ায়। তাঁর পারিবারিক বলয়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক সৃজনশীল শিক্ষা তাঁকে বিশ্ব শিরোপা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর অন্তর্নিহিত ধারার সাথে সমন্বয় করে বিশ্বব্যাপী অবক্ষয়মান মাতৃভাষা সংরক্ষণের বিষয়ে আমার কর্মকাণ্ডের কথা তাঁকে জানালে তিনি এই উদ্যোগকে একটি মহতি উদ্যোগ হিসেবে অবিহিত করে তাঁর নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, আমার ব্যক্তিগত এই বৈশ্বিক উত্থানের পেছনে বাবার ব্যবসার প্রাত্যহিক বৈচিত্রতার মুক্ত অবলোকনই আমার প্রকৃত শিক্ষা। যেকোন শিশুর জন্য পারিবারিক এবং বংশীয় উন্মুক্ত শিক্ষার সুযোগ সুবিধাই প্রত্যেকটি জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে মুখ্য ভুমিকা রাখে। তিনি মনে করেন মাতৃভাষার চর্চাসহ পারিবারিক আচার, আচরণ, পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং উন্মুক্ত চিন্তার সুযোগ যেকোন শিশুকে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রাথমিক পথ নির্দেশনা দেয়।
নির্মল পাল
Nirmal Paul
নির্মল পাল; ইমেইলঃ nirmalpaul@optusnet.com.au; প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপারশনঃ এমএলসি মুভমেন্ট ইনটারন্যাশন্যাল ইনক; প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নকারী দলনেতাঃ পৃথিবীর প্রথম “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ”; প্রকাশিত গ্রন্থঃ “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার”; বৈশ্বিক দর্শনঃ “লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার”, (স্থানীয় বর্ণমালা সংরক্ষণ কেন্দ্র)
Related Articles
অঙ্গীকার
দিয়া আর অমিত দুজন দুজনকে ভালবাসে গভীরভাবে নিবিড়ভাবে , অন্যভাবে,কিছুটা অন্যরকম আলাদাভাবে।ভালবাসার পরীক্ষায় অনেক চড়াই উৎরাই পার হওয়ার পর যখন
Article on Naimul Islam Khan
নাঈমুল ইসলাম খান : যিনি নিজ পেশায় স্বকীয় চলামান জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। সংবাদপ্ত্র পৃথিবীকে মানুষের মুঠোর মধ্যে নিয়ে এসেছে।
We salute our Martyred Intellectuals
Today is the day to remember our martyred-intellectuals who were picked up and killed by Razakars Al-Shams and Al-Badar at