তার পরও সে আমার ভাই – একই মায়ের পেটের ভাই
বিদেশে সৎউপায়ের রুজিরোজগারে বৌ-বাচ্চা নিয়ে সংসার চালাতে মাঝে মাঝেই হোঁচট খাচ্ছে আমাদের বিলি। এটা নিয়ে ওর কেউর প্রতি কোন অভিযোগ নেই কেননা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত বিলি দেশর আরাম আয়েশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার যে সিধান্ত নিয়েছিল সেটা ছিল নিতান্তই তার নিজের।
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ব পরিবারের প্রবাসীদের প্রায় সকলেই যে অভিযোগটি শুনে অভ্যস্থ বিলির প্রতি তার বড়ভাইর অভিযোগটিও অনেকটাই সেই রকম- ‘আরে কইয়েন না, বিলি তো তার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন ভুইল্যা গিয়া বিদেশে কারি কারি টাকা কামাইয়া বৌ-পোলাপাইন লইয়া ফুর্তিতে রইছে। আমগো কথা ভাবনের সময় নাই।‘
কাছের এবং দুরের সকল আত্মীয়স্বজনকে এমন কি বিলির গ্রামের মানুষকেও বিলির বড়ভাই এমনটিই বলে বেড়িয়েছে। যদিও বিলির বড় ভাইর আর্থিক অসচ্ছলতা ছিল কিনা এই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলে। কেননা, অর্থকষ্টেই যদি থাকবে তা হলে আয় রোজগার না থাকা অবস্থায় বিলির বড়ভাই ঢাকার কাছাকাছি বাড়ি বানাবার জন্য জমি কিনে কিভাবে? ভীষন অভাব অনটনই যদি থাকবে তা হলে ৫মিনিটের পথও সুস্থ সবল মানুষ পায়ে না হেটে রিক্সাতে যাবে কেন? পরিবারটি যদি দুর্দান্ত আর্থিক অভাবেই থাকবে তা হলে সেই পরিবারের সন্তান কি ভাবে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে নেপালে এক্সকার্সনে যেতে পারে? কিভাবে পারে উচু তলার ছেলেমেয়েদের দেখাদেখিতে এই পরিবারটির সন্তানেরা চিকেন বার্গার কিংবা চাইনিজ খেয়ে লাঞ্ছ করতে? অথচ বিদেশে বেড়ে উঠা বিলির সন্তানেরা ঘরে বানান স্যান্ড উইচ দিয়ে লাঞ্ছ করে। বিলি আয়-বুঝে ব্যয় করে। ছেলে মেয়েদেরও বিলি সেই শিক্ষাতেই গড়ে তুলছে।
বিদেশে অস্বচ্ছলতার মধ্যে থেকেও বেকার বিলি তার দেশে ফেলে আসা বৃদ্ধ মায়ের কথা চিন্তায় রেখে লামছাম কিছু টাকার তহবিল বানিয়ে দিয়েছিল, মায়ের হার্টে রিং পড়াতে হবে জানা মাত্র বিলি তার বসত বাড়ির উপর টপ আপ ব্যাংক ঋণ তুলে মায়ের হার্টে রিং বসাতে টাকা পাঠিয়েছিল, বেকার অবস্থায় অস্থির মন নিয়ে এমারজেন্সি টিকিট কিনে ছুটেছিল মাকে দেখতে বাংলাদেশে। আর্থিক কষ্টে থাকা ছোট বোনটির যাতে আজীবন খেয়ে পরে বাঁচতে অসুবিধা না হয় তার নিশ্চিত ব্যবস্থা করে দিয়েছিল আমাদের বিলি। অথচ আমাদের বিলিকে তার বড়ভাই অপবাদ দিয়ে বেড়াচ্ছে যে সব্বাইকে ভুইল্যা গিয়া বৌ-পোলাপাইন লইয়া সে ফুর্তিতে রইছে বিদেশে।
বড়ভাই-এর ছেলে মেয়েরাও হয়তো বিলি সম্পর্কে একই রকম ধরনা করে বলেই আমাদের বিলির সাথে তারা যোগাযোগ রাখে না- তারা এখন বিদেশে থাকে।
আমাদের এই বিলি ১২০০০ মাইল উরাল দিয়া ঢাকা গিয়া যা দেখতে পাইল আর নিজের কানে শুনতে পাইল তাতে বিলি হতবাক।
বিলি তার মাকে দেখতে গিয়ে জানতে পাড়ল তার মায়ের হার্টে রিং পড়ান লাগেনি- তার পাঠান টাকা তার ভাইয়ের ব্যাঙ্কে রয়েছে । তার ভাইয়ের পরিস্কার কথা এ টাকা নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। দরকারে মার জন্য খরচ করা হবে। পরে জানা গেল সেই টাকা বড়ভাই তার জমি রেজিস্ট্রি করাতে কাজে লাগিয়েছে। তাতেও বিলির তেমন আক্ষেপ নেই।
কিন্তু বিলিকে যখন তার ভাবি বললেন,’তোমার মা অসুস্থ হয়ে আমার একটা রুম দখল করে আছে। এই রুমটা ভাড়া দিলে সে মাসিক ৫০০০ টাকা পাবে।‘ ভাবির এই কথা মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আমাদের বিলির করার কিচ্ছুই ছিল না কারন বিলির মায়ের শারিরীক অবস্থা তখন এমনই খারাপ যে তাকে সেই রুম থেকে কোথাও সড়িয়ে নেবার উপায় ছিল না। যখন উপায় ছিল তখন তার বড়ভাই কিংবা ভাবি বিলিরমাকে কোথাও সড়িয়ে নেওয়ার বিপক্ষ্যে ছিল।
বিলির মা আজ বেঁচে নেই। বিলির বড়ভাইর সন্তান এখন থাকে বিদেশে। বিলির বড়ভাইর চাকরী নেই । তাদের বাসার রুম খালি আছে। অথচ এখনও কেন সেই খালি রুম ভাড়া দেওয়া হয়নি? তার বড়ভাইর চাকরী নেই তার পরেও তারা কিভাবে চাকরি না থাকা অবস্থায় বাড়ি বানাতে ঢাকার পাশে জমি কিনে? এসব যৌক্তিক প্রশ্ন-এর কোন সদুত্তর বিলির বড়ভাই বিলিকে দিতে পারেনি।
মায়ের মৃত্যুর পরে মৃত্যু পরবর্তী ধর্মীয় কার্যাদির জন্য বিলি ওর বড়ভাইকে টাকা পাঠিয়েছিল। অথচ বিলির গ্রামের মানুষ জেনেছে ধর্মীয় কার্যাদির সকল খরচ বহন করেছে বিলির বড়ভাই- মায়ের অন্য কোন সন্তান এই খরচ যোগায় নি। এ্ধরনের মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে পারছে না বিলি। তাইতো সে মন মরা থাকে। কোন ভাবেই তাকে প্রাণবন্ত করা যায় না। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসা আমাদের বিলি কল্পনাতেও ভাবে নি তার জীবন এমন অসহনীয় হয়ে উঠবে।
বিদেশে থাকা বাঙ্গালি যাদেরকে বিলির বড়ভাই আর তার ভাবী ভাল্ভাবে চেনেজানে তাদের প্রায় সবাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশে অস্থায়ীভাবে থাকা। এদের সাথে তুলনা করেই স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য বিদেশে আসা বিলি সম্পর্কে তার ভাই-ভাবীর ভুল্ধারনা জন্মায়। তাদের কাছে বিদেশ মানেই হচ্ছে কারি কারি টাকা। বিদেশেও যে মানুষের কষ্ট হয়- মানুষ ভিক্ষা করে, হাড়কাঁপানো শীতে রাস্তায় রাত কাটায়, এদেশেও যে বাঙ্গালিরা অর্থের ওভাবে বৌ-পোলাপানের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে- এধরনের সত্য বিলির বড়ভাই বুঝতে চায় না। তারা বুঝতে চায় না বিদেশে সরকারী চাকরীও যে স্থায়ী নয়। কেননা, বাংলাদেশের সরকারী ব্যবস্থাকে হিসাবে নিয়ে তারা উন্নত দেশের সরকারী ব্যবস্থাকে মিলায়। বাংলাদেশের সরকারী চাকরী মানে তো সারা জীবনের চাকরী।
বিলির ভাই মানতে চায় না যে বিদেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে আসা মানুষ্ তাদের ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ, ঘর-সংসার চালানোর খরচ সব মিটিয়ে বারতি টাকা বাংলাদেশে পাঠায়। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশে অস্থায়ীভাবে যাওয়া মানুষ্ তাদের নিজেদের বাচার জন্য নুন্যতম খরচ রেখে তাদের রোজগারের বেশিরভাগ অংশ দেশে ফেলে আসা বৌ-পোলাপাইনের জন্য পাঠায়।
কিছুদিন আগে আমাদের বিলি জানতে পেরেছে, বিদেশে নিজ চোখে নিজ সন্তানের কষ্টকে দেখে এসে বিলির ভাইভাবী এখন বিলির কষ্টকে বুঝতে পারছে। এভাবেই বিদেশের কষ্টকে জানতে তাদের ২০ বছর লেগেছে।
একই মায়ের পেটের ভাই হয়েও বড়ভাই ছোটভাইর কথাতে বিশ্বাস করে নয় বরং ২০ বছর বাদে নিজের সন্তানের কষ্টকে নিজ চোখে দেখে বিলির প্রবাস জীবনের কষ্টকে তারা চিনেছে । তার পরেও বিলি ১২০০০ মাইল দূর থেকে তার ভাইর জন্য শুভকামনা করে যাচ্ছে- কেনন সে যে তার আপন ভাই- একই মায়ের পেটের ভাই।
[বিলি চরিত্রটা কাল্পনিক চরিত্র। এই গল্পের বিষয় বস্তুর সাথে কেউর জীবনের গল্প মিলে গেলে তা হবে কাকতালিয় ব্যপার]
Related Articles
পুরুষ বন্ধু' রা আমার …
….শিরোনাম টা নিজের কাছেই বড় বেমানান ঠেকছে! বন্ধু বন্ধুই, তার আবার ছেলে মেয়ে কি! কিন্তু উপায়অন্ত না দেখে এমন একটা
Global Social Business Summit in Kuala Lumpur: A Beacon of hope and empowerment
The 5th Global Social Business Summit was held from 7-9 November 2013 in Kuala Lumpur. Malaysian Prime Minister Tun Razak
Questioning the Effectiveness of Technical Cooperation in Bangladesh
An Overview of Technical Cooperation Vision 21 Plan, also known as the Perspective Plan (2010 – 2021), provides a road