বাংলাদেশী মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং ব্যায়াম এর প্রতি বাংলাদেশী কমিউনিটির এটিচুড

বাংলাদেশী মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং ব্যায়াম এর প্রতি বাংলাদেশী কমিউনিটির এটিচুড

জিম শেষে অফিসে এসে শাওয়ার করছিলাম।শাওয়ারের সময়টা দিনের চমৎকার একটা সময় আমার। একান্তই নিজের কয়েকটা মিনিট। তবে আজ একটা বিষয় মাথায় ঘোরপাক খাচ্চিল। বাংগালীর খাবার-দাবার,শরীর স্বাস্থ্য। বিশেষ করে মেয়েদের। তবে এই লিখাটা সবার জন্যই।

আজ ভোর ৫.৩০ এর বুটক্যাম্প ক্লাসে মোট ২৩ জন ছিলাম। এর মাঝে মাত্র ৩ জন ছেলে বাকী সবাই মেয়ে। আমি একমাত্র কালারড ছিলাম!

বাংগালী মেয়েদের কয়জন শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করেন? সংখ্যাটা খুব বেশী হবে না। যতটুকু করেন সেটাও খাবার কম খেয়ে। শারীরিক পরিশ্রম করে ফিটনেস ধরে রাখার দিকে মনযোগ খুব একটা নাই। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে।

১. মেলবোর্নে বাংগালী আড্ডায় শুধু শুনি বাংগালী ছেলেদের ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার এবং আরো অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। বাংগালী মেয়েরা ইমিউন এসব থেকে! তাদের কোন সমস্যা নাই!
২. বাংগালী ছেলেরা খুব স্বার্থপর না বুঝেই কিংবা সচেতন না তাদের স্ত্রীর ব্যাপারে।
৩. হয়ত বাংগালী ছেলেদের সচেতনতা খুবই সিলেক্টিভ। মেয়েদের সচেতনতাও সিলেক্টিভ।
৪. মেয়েরা সময় পায় না পরিবারকে সময় দেয়ার পরে। ছেলেরা পরিবারের কাজ খুব একটা করতে চায় না ফলে মেয়েরা সময় পায় না।
৫. মেয়েরা নিজেই সচেতন না এই ব্যাপারে। বিভিন্ন কসমেটিক এবং জুয়েলারির দোকানের ব্যাপারে যতটা খবর রাখেন তাদের শরীরের ভিতরের খবর নিয়ে ততটাই উদাসীন।
৬. Predominant certain cultural beliefs and attitude. কালচারাল একটা ব্যারিয়ার রয়েছে হয়তবা। যদিও ধর্মে মেয়েদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কোন বাধা নাই। অন্তত আমি পাইনি।
৭. বাংগালী মেয়েরা ভলান্টারিলী ব্যায়াম করতে চায় না। অন্তত আমার তাই মনে হয়।
৮. ইংল্যান্ডে যেমন অধিকাংশ বাংগালী মহিলারা বাংলাদেশের রুরাল এরিয়া থেকে মাইগ্রেটেড হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। (I)
তাই অস্ট্রেলিয়ান বাংগালী মহিলারা বেশী রিস্ক এ রয়েছেন আমার মনে হয়। কারণ তারা এমনিতেই একটা সেডেন্টারী ওয়েস্টার্ন লাইফ স্টাইল ( Sedentary western life style.) এ অভ্যস্থ বাংলাদেশে থাকা অবস্থায়। যেটা অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর আরো তীব্র হয়। এসব ব্যাপারে মহিলারা সচেতন না। খুবই ভয়ের কথা এটা।
৯. ট্র্যাডিশনালী বাংলাদেশী খাবার স্বাস্থ্যকর। কারণ আমাদের প্রতিদিনের খাবারে রয়েছে মাছ, তাজা সবজী,ডাল এবং ভাত। কিন্তু যখন ওয়েস্টার্ন দেশগুলোতে যাই তখন আমাদের খাবার-দাবার পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর পিছনে খাবারের প্রাপ্যতা, সুলভ মূল্য এবং ওয়েস্টার্ন সমাজে ফিট হওয়ার একটা প্রবণতা কাজ করে হয়তবা।
এর ফলে আমরা সুষম খাবার খাই না। আমাদের খাবারে উচ্চমাত্রার সেচুরেটেড চর্বি ও চর্বি জাতীয় খাবার, অধিক চিনি সমৃদ্ধ খাবার এবং কম তাজা ফলমূল থাকে। আমার তাই মনে হয়।
১০. ইংল্যান্ডে বাংলাদেশী কমিউনিটির অধিকাংশ সিলেটী। আর সিলেটী ভাষায় ‘Exercise ‘ এর কোন পরিভাষা নাই। আমার মনে হয় বাংলা ভাষায়ও ‘Exercise ‘ এর কোন পরিভাষা নাই। সবচেয়ে কাছের ভাব যেটা সেটা হচ্ছে ‘ ব্যায়াম ‘। এই ‘ব্যা’ টা একটা নেগেটিভ কন্নোটেশান ( Negative Connotation)। ‘ব্যারাম’ ও সেরকম একটা শব্দ। মোট কথা এটা দিয়ে না/খারাপ কিছু একটা বুঝায়। এর থেকে বুঝা যায় বাংগালীর ‘Exercise ‘ করার মানসিকতা নাই। মহিলাদের মাঝে যা আরো বেশী দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় আমরা সেরকমটাই দেখি।

সমাধান আমার জানা নাই। তবে কয়েকটা বিষয় কাজে দিতে পারে।

১. মহিলাদের জন্য কালচারালী সঠিক সুবিধা ‘Exercise ‘ এর বিষয়ে।
২. বহুভাষী/মহিলা ট্রেইনার।
৩. এপ্রোপ্রিয়েট মিউজিক।
৪. শিক্ষা।
৫. মহিলাদের প্রতি সামগ্রিক এটিচুডের পরিবর্তন।

এই লিখা সম্পূর্ণ আমার মনের কিছু ধারণা। সচেতনতা মূলক একটা লেখা। কেউ দয়া করে ব্যক্তিগত ভাবে নিবেন না। আপনার নিজ নিজ কাউনসিলে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন তারা আমাদের এই প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারে কি না।

জুবায়দুল জেকব
মেলবোর্ন
jubaidul.jekab@gmail.com


Place your ads here!

Related Articles

দুখিনী বাংলাদেশ ও গোলাম আযম

আজ ১৫ জুলাই ২০১৩। দীর্ঘ ৪২ বছরের হিসাব নিকাশ শেষ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আপরাধ আদালত দীর্ঘ দিন শুনানি শেষ করে ঘাতক

সবারই অধিকার রয়েছে কিছু বলার

মেলবোর্নের আবহাওয়াটা কেমন যেন দিন দিন ইয়ো ইয়ো (Yoyo) এর মত হয়ে যাচ্ছে। এক দিনে চার আবহাওয়া দেখা যায় সেটা

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment