একহাতে তার বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য

একহাতে তার বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য

অজয় দাশগুপ্ত : নিজেই তিনি লিখেছিলেন তাকে বিদ্রোহী বলে বলে মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যতবার আমি তাকে ভাবি, তার লেখা বা গানের কাছে যাই ততবার মনে হয়, কী নির্মম আমরা। কোনো এক সময়ে তিনি সেনাবাহিনীতে গিয়েছিলেন বা যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন বলে স্থায়ী তকমা এঁটে প্রেম ও বিরহের কবিকে এভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের সুধি সমাজ ও সংস্কৃতির এক বিশাল অংশে কাজী নজরুল মূলত দামামা বাজানো এক মুসলমান কবি।

অথচ যারা তাকে জানেন তারা মানবেন, ব্যক্তি জীবনে বাঙালির উচিত রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও নজরুলের জীবন মেনে চলা। এ দুটো এক হলে আমাদের চিন্তা-চেতনায় কোনো সংকীর্ণতা বা সাম্প্রদায়িকতা ঢুকতে পারত না। সেটা না করে আমরা তাকে করেছি রণসঙ্গীতের স্রষ্টা। জাতীয় কবির বিদ্রোহী ছাড়া আর কোনো কবিতাই সর্বজনীন করতে চাইনি। কারণ সবকিছুতেই তিনি ছিলেন উদার ও মুক্ত। সমসাময়িককালে অমন জনপ্রিয় লেখক হাতে গোনা। কথিত আছে, রানু সোম মানে বুদ্ধদেব বসুর পত্নি প্রতিভা বসুও গান শুনে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। একদিকে নার্গিসকে ফেলে আসা আরেকদিকে প্রমীলামুখর জীবন। এ যেন বেদনাও ভালোবাসার যুগলবন্দি এক শ্যামের জীবন।

এমনও জানা যায়, গোরা মানে সাহেবরাও তাকে খাতির করতে বাধ্য হতেন। কলকাতার ফুটবল মাঠে মোহনবাগান বনাম সাদাদের খেলায় অন্যরা যখন গ্যালারিতে কবি বসতেন মাঠের বিশেষ আসনে। বাঙালি এমন এক জাতি কাউকে তার প্রাপ্য দিতে জানে না। দড়িদড়া বেঁধে দরিরামপুরের উৎসব যেন তার প্রতিচ্ছবি। যখনই বেদনা ও সুর এক হয়, যখন ভালোবাসায় যুদ্ধ অনিবার্য, যখন সমাজ ও দেশে অনাচার অন্যায় ভালোবাসাহীনতা চাড়া দিয়ে ওঠে তখন কেবল লড়াই না, একহাতে মম বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্যের কবি হাজির হন। সবাই কবি তবে কাজী নজরুল কবিতাও কবির কাজীই বটে। তোমারে দেব না ভুলিতে, শুভ জন্মদিন হে নির্বাক কথার আধার।

লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক

Ajoy Dasgupta

Ajoy Dasgupta

অজয় দাশগুপ্ত: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক


Place your ads here!

Related Articles

Lecture on Social Business of tackling society's most pressing problems by Dr Yunus in Monash University

Social Business for Tackling Society’s Most Pressing Problems Monash University and the Monash Business School are proud to host a

ল্যাম্প পোস্টের নিচে সূর্যোদয়

রাত ৯ টা। উত্তরা ১২ ও ১৩ সেক্টরের জনপথ রোড। প্রশস্ত রাস্তা, সবাই চিনে সিটি কর্পোরেশন ময়লার ডাম্পিং এলাকা হিসেবে।

প্রবাসে বাংলাদেশের গর্ব

একজন খুবই সাধারণ মানের দর্শক হিসেবে ক্রিকেট খেলাটা আমার কাছে অনেক বড় বিনোদনের বিষয়। যেহেতু দেশ বিদেশ ঘুরে দেখার মত

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment