বাংলাদেশী গনতন্ত্রের স্বরূপ

বাংলাদেশী গনতন্ত্রের স্বরূপ

আমাদের অনেকেই লিবারেল ডেমোক্রেসি অর্থ্যাৎ উদার গণতন্ত্র এর কথা শুনেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর চর্চা হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক সরকার এই উদার গণতন্ত্রের প্রথম উদ্দেশ্য। বিশেষ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলো এটা বিশ্বাস করে যে সরকার ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক এবং এই গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকবে। এই ব্যবস্থায় জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করবে এবং সেই সরকার জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিবে। এই ব্যবস্থায় সরকার তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। তবে এই ব্যবস্থা চালু রাখতে হলে নিয়মিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, সাথে স্বাধীন গণমাধ্যম, বাকস্বাধীনতা, এবং জনগণের স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক জনসমাবেশ ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কিংবা দল তৈরী করার অধিকার থাকতে হবে।

এখন বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থায়, অন্যান্য আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশের মত মেজরিটি রুল ( Majority rule) করে। এই মেজরিটি রুল কোন রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনৈতিক দলের কোয়ালিশনেও হতে পারে। অধিকাংশ ভোটারের ইচ্ছাটাই এই মেজরিটি রুল এ প্রতিফলিত হয়। যদিও বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। এর আগে এই বিষয়ে লিখেছি।

এখন এই নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা সকল জনগণের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা ও চলাফেরা করা এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সমুন্নত রাখবে। এই সরকার ব্যবস্থা কোনভাবেই কিছু নির্দিষ্ট মানবাধিকার লংঘন করতে পারবে না যদিও সে মেজরিটির দ্বারা নির্বাচিত। সরকার ঘোষণা দিয়ে বলতে পারে যে ‘ আমার নির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতা থাকবে না (যেমন স্বাধীন ভাবে ধর্মকর্ম পালনের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করতে পারবে না)’। এটাকে পাশ্চাত্যের অনেক দেশে বিল অভ রাইটস ( Bill of Rights) বলে। বাংলাদেশে এইরকম কোন বিল অভ রাইটস রয়েছে বলে আমার জানা নাই। অস্ট্রেলিয়ায়ও এই বিল অভ রাইটস নাই। আবার ইএসএ তে রয়েছে। আমি মনেকরি প্রতিটা সভ্যদেশে এই বিল অভ রাইটস থাকা উচিৎ। উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই বিল অভ রাইটস খুবই গুরুত্ব পূর্ণ একটা বিষয়। মূলকথা সরকার জনগণের অনেক অধিকার সমুন্নত রাখবে এবং কিছু বিষয়ে সরকার নাক গলাবে না। যেমন জনগণের ধর্মকর্ম পালন করা কিংবা পালন না করা। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন সংবিধান থাকতে বিল অভ রাইটস কেন? সংবিধান আমাদের সরকার ব্যবস্থাকে সেট আপ করে। আর বিল অভ রাইটস সম্পূর্ণভাবে একটা নেগেটিভ ডকুমেন্ট যেখানে বলা থাকবে সরকার কি কি করতে পারবে না।

উদার গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার কিছু চরিত্র নিম্নে উল্লেখ করলাম:

১. সরকার তার সমস্ত কর্মকান্ড ও ক্ষমতার ব্যবহার কিছু নিয়মের মাঝে থেকে করবে।
২. একটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকবে যেটা সরকারের কোন নির্দেশের উপর ভিত্তি করে চলবে না। এই বিচার ব্যবস্থা সরকার থেকে আলাদা থাকবে।
৩. আইনের চোখে সকল জনগণ সমান থাকবে।
৪. একটা শক্তিশালী বাজার অর্থনীতি থাকবে।
৫. সরকারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত থাকবে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়াদির উপর (Personal rights) এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার (Freedom of individuals) উপর।

বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা একটা পার্লামেন্টারী সরকার ব্যবস্থা। এই পার্লামেন্ট এ আইন প্রণয়ন হয়। জনগণ এই পার্লামেন্ট এর সদস্যদের নির্বাচিত করে এবং অধিকাংশ সদস্যারা মিলে সরকার গঠন করে। যদিও গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট দিন দিন ইরিলিভেন্ট ( Irrelevant) হয়ে যাচ্ছে! তবে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ গনতান্ত্রিক এবং উদার উপসর্গ (Liberal elements) হয়েই থাকবে। বাংলাদেশের জুডিশিয়াল রিভিউ সিস্টেম অর্থ্যাৎ স্বাধীন বিচার বিভাগ সাংবিধানিক আইন নিয়ে কোন সমস্যা হলে সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করে ( বর্তমানে ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই শোরগোল হচ্ছে। কে কতটা সঠিক সে বিষয়ে আমার বলার মত জ্ঞান এখনও হয়নি।)। ইংল্যান্ডে যেমন জুডিশিয়াল রিভিউ সিস্টেম লেজিসলেটিভ ব্রান্চ এর সাথে ইনকোরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়ায় আবার সেরকমটা না। অস্ট্রেলিয়ায় স্বাধীন হাই কোর্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ যা সীমিতভাবে আমাদেরকে সেপারেশন অভ পাওয়ার দেয়।

বর্তমান বিশ্বে আমরা একটা ধারনার দেখা পাই সেটা হল কন্সট্রেইন্ড পার্লামেন্টেরিজম ( Constrained Parliamentarism)। এই কন্সট্রেইন্ড পার্লামেন্টেরিজম ইমপ্লিমেন্ট করা একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে পার্লামেন্ট এর একাউন্টেবিলিটি নিশ্চিত করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মত অডিটর জেনারেল, ফ্রিডম অভ ইনফরমেশন, ওমবাড্সমেন ( Ombudsman) এবং ইন্টেগ্রটি কমিশন গঠন করতে পারে। এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের এবং পাবলিক সার্ভিসের কর্মকান্ডকে আরো একাউন্টেবল করবে। বর্তমান বাংলাদেশে এইসব সংস্থার খুব প্রয়োজন। সরকার সবসময় জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিবে তেমনটা নাও হতে পারে। সেই সময়গুলোয় এই কন্সট্রেইন্ড পার্লামেন্টেরিজমের উপাদানগুলো কাজে দিবে।

জুবায়দুল জেকব
মেলবোর্ন
jubaidul.jekab@gmail.com


Place your ads here!

Related Articles

রাজনীতিতে ভাষা ও আদর্শের প্রয়োগ

১. আমরা যারা নিজেদেরকে শিক্ষিত,ভদ্রলোক,বিবেকবান ও সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণীর লোক বলে দাবি করি কিংবা নের্তৃত্বের গুনাবলী থাকুক, কিংবা না থাকুক

জীবনানন্দের প্রেতাত্মা

গায়ের রাস্তা ধরে গরুর গাড়ি চলেছে তার একঘেয়ে ক্যা-কু শব্দ করে। গাড়িতে হাসিনা খাতুন আর তিন সন্তান। বড় আর মেজো

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

আমাদের সময় ছিল মোহামেডান – আবাহনী। কত দিনরাত গেছে শুধু নিজ ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে। ফুটবল নিয়ে ইটা ইটি, মারামারি,

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment