বন্যা, পশু কোরবানি, চ্যারিটি ইত্যাদি….

বন্যা, পশু কোরবানি, চ্যারিটি ইত্যাদি….

পাকিস্তানের বন্দিদশা কাটিয়ে আসার কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭৪ এর বন্যা দেখি। প্রথম বারের মতো এতো পানি দেখি, Oh my God! মনে হয়েছিল ক্লিফটন বিচে দাঁড়িয়েও এতো পানি দেখি নাই। তারপর দেখলাম ১৯৮৮ র বন্যা- স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বন্ধ। মামাতো ভাই বোনেরা তাদের কল্যাণপুরের বাসা ছেড়ে আমাদের বাসায় উঠেছিল। এক মাস কেটেছে কাজিনদের সাথে ভিডিওতে হিন্দি সিনেমা দেখে, ক্যারম বোর্ড আর লুডু খেলে। আম্মার কাজ ছিল তিন বেলা খাবারের তদারকি করা। বাজারে কিছুই পাওয়া যাচ্ছিলো না, চেনা দোকান থেকে প্রচুর ডিম আর ডাল এনে রাখা হয়েছিল, তাই খিচুড়ি হয়ে উঠেছিল প্রায় প্রতিদিনের খাবার। দেশে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় ধরা খেলাম ১৯৯৮ সালে। ঢাকার অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসে যোগাযোগ নম্বর দেয়া ছিল; দূতাবাস থেকে একদিন ফোন করে জানতে চাইলো কোনো সাহায্য লাগবে কিনা, অর্থাৎ থাকার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, বা ফ্লাইট শিডিউল বদলে সাহায্য লাগবে কিনা। ধন্যবাদ দিয়ে বলেছিলাম আমি ভালোই আছি। আমি সৌভাগ্যবান; সেই সময়ে আমি ঢাকাতেও নিরাপদে ছিলাম, তার উপর আমার দ্বিতীয় বাসভূমি আমাকে সাহায্য করার জন্য বসে ছিল। দেশের ১৭ কোটি মানুষকে সাহায্য করতে কে বসে আছে?

এই বিদেশে আমি দেখেছি একদল মানুষ মসজিদ এবং উপসনালয় বানানোর জন্য নিজে অর্থ দান করে, বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে, মিয়ামারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য অর্থ ও বস্ত্র সংগ্রহ করে, ফিলিস্তিন মুসলিমদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে আবার যুদ্ধেও যেতে চায়। চ্যারিটি ডিনার, ফুড ফেস্টিভাল- কত কিছু করে মসজিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। পরদিন খুব গর্ব করে বলে আল্লাহর রহমতে এক রাতেই হাফ মিলিয়ন ডলার উঠেছে। ভাবে মনে হয় সবাই স্বর্গের দ্বারে প্রায় উপনীত। এই মসজিদ নিয়ে মারামারি আর কাটাকাটির রাজনীতির কথা অন্য একদিন বলা যাবে।

পুরো দেশ না হলেও অধিকাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারি সাহায্য বা ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। প্রচুর অর্থের সাথে সাথে অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থানের দরকার। আর দরকার চিকিৎসা ও কৃষি ব্যবস্থাপনা। এখন আমাদের চ্যারিটি ডিনারের আয়োজন করতে অসুবিধা কি? মিয়ানমারের মুসলমানদের জন্য অর্থ যোগানদারেরা কই? ক্যানবেরাতে অনেক কয়জন গুণী শিল্পী আছে, তারা একটা শো এর আয়জন করে কি কিছু অর্থ জোগাড় করতে পারে না? আমার গলায়তো কোনো সুরও নাই, গিটারেও আর হাত নাই, তাই এই বিষয়ে কোনো কাজে আসবো না। তবে কায়িক শ্রম দিতে পারবো। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া এসোসিয়েশন ক্যানবেরা এই ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিতে পারে।

দেশে অনেকেই দুইটা চারটা ছয়টা কোরবানি দিবে। একটা কুরবানী করে বাকি টাকাটা দান করলে কি নেকী কম হবে? অনেক পশু বন্যায় হারিয়ে যাবে বা গেছে, কুরবানী না দিলে কি পাপ হবে? অনেক কৃষকই হয়তো সস্তায় গরু বিক্রয় করতে বাধ্য হবে, সেই সুযোগে অল্প দামে গরু কিনে কুরবানী দেয়া কি বিধি সম্মত হবে?

নাকি ঈদের নামাজ শেষে বিশেষ মুনাজাতেই দায়িত্ব শেষ!!!


Place your ads here!

Related Articles

পরিবর্তন

যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে চলে আসছে পরিবর্তনের ধারা। আমাদের চিন্তাধারা, জীবন যাপন, সামাজিকতা সবকিছুই সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে আর

সাদা কথা-পরিচয় সংকট

সাদা কথা-পরিচয় সংকট ১৯২৪ সাল মার্চ ৩, তুরস্কের জাতীয় সংসদ খেলাফত বিলুপ্তি ঘোষনা করে আইন পাশ করলো । যার পরিপেক্ষিতে

Sheikh Hasina's Speech

Prime Minister Sheikh Hasina on 18th October proposed forming an all-party election-time government to oversee the next general election “We

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment