প্রিয় মানুষের শহর – ৯
ক্যানবেরা প্রথম। বদলী হয়ে এসেছি কুমা থেকে।
সাত বছর মালেসিয়ায় থাকার পর কোম্পানি বদলী করেছিল – তাঁদের প্রধান কার্যালয় – অষ্ট্রেলিয়ার ছোট্ট একটা শহর কুমা’তে। সে এক প্রশান্তির জায়গা। বিস্মৃত বিশাল নীল আকাশ। আবার আকাশ টা যেন, একেবারে হাতের মুঠোয়। ডানে, বামে, উপরে যে দিকেই হাত বাড়াই – ছুঁয়ে দেয়ার মতো করে আকাশটা ঝুলে আছে। মনে হয়, হাতটা একটু বড় হলেই নীলের মাঝে আঙ্গুল গুলু ডুবিয়ে দেয়া যেত।
প্রথম পরিচয়, মাহিন ভাবী, তারপর বাবু ভাই। ধীরে ধীরে (ডাক্তার) আলেয়া ভাবি (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) সহ আরো অনেকে। মাহিন, আলেয়া ভাবী ছাড়া তৃতীয় যে বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম – সে টা ছিল – প্রবল ভাই, নিগার ভাবীদের বাসা। খুব বেশি লোক জনের সাথে পরিচয় ছিল না। হবার সুযোগ ও গড়ে উঠেনি।
ক্যানবেরাতে দুটি গ্রূপ, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, আরেকটি বাংলাদেশ ফোরাম। প্রথমে জানতাম না। পরে শুনেছি। যাদের সাথে প্রথম প্রথম মেলামেশা হতো – তারা যে ফোরাম এর লোক জন, তা অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম। তার পর ধীরে ধীরে – এসোসিয়েশনের লোক জন চিনলাম – অনুষ্ঠানে যাওয়া শুরু করলাম। অজান্তেই জড়িত হয়ে গেলাম এসোসিয়েশনের সাথে।
সালটা সম্ববত ২০০১। নানা দেশের অংশ গ্রহণে একটি মাল্টি ন্যাশনাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রিয় মোখলেস আঙ্কেল জোর করে আমাদের সবাইকে নিয়ে গেলেন ওখানে। যে হেতু বাংলাদেশ ফোরাম সে অনুষ্ঠানে জড়িত – সামনে আমাদের জন্য কিছু রিসার্ভ চেয়ার রাখা ছিল। আমার হাতে দামি ডিজিটাল ক্যামেরা – আঙ্কেল ওনার সিটটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে – আন্টির পাশে বসালেন ছবি তোলার জন্য।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার এখনো ৩০ মিনিট বাকি। আন্টি বারবার উঠে গিয়ে নানান জনের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। এ দিকে আমি একা একা বসে বিব্রত হচ্ছি। পরিবারের অন্য সবাই ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে একেবারে পিছনে বসেছে।
জীবনে প্রথম অস্ট্রেলিয়াতে কোনো কালচারাল অনুষ্ঠান দেখতে এলাম। ক্যামেরা স্ট্যান্ডের উপর রেখে বসে আছি। আন্টি আসার কোনো খবর নেই।
ছোট খাটো এক ভদ্রলোক, হাতে ক্যামেরা – এসে – খালি চেয়ার গুলিতে রিসার্ভ লেখা দেখে চলে গেলো। ভদ্রলোক ঠিক আমার গায়ের রঙে রং! কিছুক্ষন পর আবার আসলেন। আমার দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। তুমি কি বাঙালি? হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলেন। বোকার হাসি মুখে মেখে দিয়ে বললাম – হা। বললেন – কার সাথে এসেছো? বললাম – আঙ্কেল, আন্টির নামটা তো জানি না। তিনি মুখটা খুব গম্ভীর করে বললেন – সামনে বসেছো কেন? পিছনে যাও। দেখো না এ সিট্ গুলি রিসার্ভ করা!
আমি ক্যামেরা স্ট্যান্ড নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আমি চেয়ার থেকে উঠতেই তিনি বসে পড়লেন। আমাকে শুনিয়েই বলতে থাকলেন – কোথা থেকে যে এ গুলি আসে – কি করে যে আসে…
একেবারে পিছনে চলে গেলাম। আঙ্কেল আন্টি সহ সবাই পিছনে – আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে ক্যামেরা সহ দেখে সবার চোখ কপালে ! কি হয়েছে? বিস্তারিত বললাম। আন্টি তো মহা ক্ষেপা! আমার হাত ধরে টেনে হিচড়ে নিতে লাগলেন সামনের দিকে। আমি বললাম – আন্টি ছেড়ে দেন। আমি ঠিক আছি – কোনো সিন্ ক্রিয়েট করতে চাই না।
এবার আন্টি আমায় ছেড়ে দিয়েই সামনে চলে গেলেন। আবার মুহূর্তেই ফিরে এলেন। বললেন এই ভদ্রলোক নাকি – বিজ্ঞানী! আন্টি যাওয়াতে সিট্ ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমি গিয়ে বসতে পারি। আমি বললাম আন্টি প্লিজ – আমি ওখানে বসবো না। ওনাকে বসতে দিন।
এবার আঙ্কেল যোগ দিলো। বললেন – না – তুমি বসবে। তোমার সাথে আমি বসবো। অনেক বুজিয়ে আঙ্কেল, আন্টিকে শান্ত করলাম। পরে আঙ্কেল আন্টি কেউই রিসার্ভ সিটে আর বসেন নি। জানি না – ঐ খালি সিট্ নিয়ে – বিজ্ঞানী কি করেছিলেন পরে।
তার দু কি এক বছর পর – কেন জানি এই বিজ্ঞানী আমাকে পছন্দ করা শুরু করেন। আমি নিশ্চিত – আমাদের প্রথম পরিচয় এবং “ভেসে ভেসে আশা” কালো ছোট্ট ছেলেটির কথা তিনি স্মরণে রাখেন নি। না রাখাই ভালো। আমি মনে রেখেছি। মানুষকে মানুষ ভাবতে পারি – এ ধরণের শিক্ষা গুলোকে মনে রেখেই।
সে শিক্ষার কোন মূল্য নাই – যে শিক্ষা মানুষকে বিনম্র করে না।
Related Articles
বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনি -হায় কমিশনার এবং নূর রক্ষার কাহিনী
হায় কমিশনার এবং নূর রক্ষার কাহিনী/১ ইনি রফিকুল ইসলাম টুকু মিয়া। খোন্দকার মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের স্বামীর সন্তান। তিনি যখন
অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসে ছাত্রদের জীবন
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যত ছাত্র পড়তে আসে এদেশের নিয়মকানুন মেনে ব্যাংকে অভিভাবককে ধনাঢ্য ব্যক্তি দেখালেও সিংহভাগ ছাত্র মূলত এক সেমিস্টারের
নজরদারিতে প্রধান বিচারপতি!
ফজলুল বারী: অস্ট্রেলিয়া এসেও বাংলাদেশ সরকারের নজরদারিতে আছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র নাথ সিনহা! এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি সূত্রগুলোর ধারনা তাই। দু’