জীবনের সফলতা উৎকর্ষতায় না উর্বতায়?

জীবনের সফলতা উৎকর্ষতায় না উর্বতায়?

একটা নাটক দেখেছিলাম, আধুলি। কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র বন্ধ্যা, যিনি নিজ গৃহে তথা সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক অচল আধুলি। মনে ধরেছিলো কথাটা।

এবার আসি বাস্তবতায়। আমরা হয়তো আধুনিকতার আবরনে কাউকে আধুলি বলি না, কিন্তু মানসিকতায় আমরা কি খুব এগিয়ে? নিঃসন্তানদেরকে কি স্বাভাবিক মনে করি? পুরুষের ক্ষেত্রে যেমন দুর্নাম, নারীর তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি। শ্বশুরবাড়িতে পুরুষরা চিরকালের জামাই, ভোজন-আপ্যায়ন কেবল প্রাপ্য সেখানে; অসম্মান- অবজ্ঞা-কটুক্তি তো প্রশ্নই আসে না। এগুলো শিকেতে তুলে রাখা হয় বৌদের জন্য। ব্যতিক্রম নেই তা বলবো না। আছে, তবে আমি বলছি ৯০ ভাগ বাস্তবতার কথা।
দেখেছি ইনফার্টিলিটি সেন্টারে বিমর্ষ কত মুখোচ্ছবি। আবার এমন কর্মজীবি নারীকে জানি অপারগতা ঘুচাতে গিযে অত্যন্ত ব্যায়বহুল এই চিকিৎসা ভার একাই মাথায় তুলে নিয়েছেন। আবার কারো ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হচ্ছে যেন বাবার বাড়ি থেকে চিকিৎসার খরচ নেয়। পাছে তাদের পুত্রের কাঁধে এ বোঝা এসে পড়ে!!

এ এমনই এক নিষপেষণ যার বিচার চাওয়া যায় না। বরঞ্চ, নিজেই অবনত মস্তকে, বিষাদে ডুবে থাকা। আত্মীয়-পরিজন তো বটেই ঘরের ভেতরেই চলে গঞ্জনা। এক্ষেত্রে যুগলের মধ্যে যিনি সুস্থ তিনি অসুস্থকে হেয় করে চলেন সুযোগ পেলেই। আর বাইরের মানুষের কৌতুহল, আফসোসও কৌতুক হয়ে ওঠে কখনো। আবার কোন বন্ধু হয়তো নিজের উর্বরতা বোঝাতে ইচ্ছে করেই শোনাবে তার কয় কুড়ি সন্তান হতে পারতো, কয় হালি রিমুভ করিয়েছে। এসব-ই শিক্ষিতের আচার।

অশিক্ষিত পরিসরে তো বলাই বাহুল্য, শিক্ষিতের মাঝেই কি কম কু-সংস্কার! এমনকি উন্নতদেশেও।

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির দেশ ফ্রান্স। সেই দেশে এক বন্ধু আমার, ফরাসি। দীর্ঘদিন সে নিঃসন্তান ছিল। বন্ধুটির শ্বশুরকূল এশিয়ান হলেও যদিও আমি জানি না তার জা কোন দেশি। যাই হোক, তার ভাসুরের নবজাতককে দেখতে গেল। জা তার উদ্দেশ্যে সবাইকে বলল, সে যেন বাচ্চাকে কোলে না নেয় (কেননা সে বন্ধ্যা)। আমার বন্ধুটি কাঁদতে কাঁদতে সেবাড়ি থেকে ফিরে এসেছিল।

সন্তান উৎপাদন একেবারেই প্রাকৃতিক বিষয়। যার উপর মানুষের করনীয় কিছু থাকে না। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ এক চিকিৎসকের চেম্বারে একটা ছোট্ট কথা লেখা মনে ধরলো, “আমি যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করি, যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করি, যাকে ইচ্ছা উভয়ই দান করি, যাকে ইচ্ছা কিছুই দেই না” (আল-কোরআন)। তার মানে ডাক্তার বলতে চেয়েছেন, সর্বোচ্চ ট্রিটমেন্টের পরেও গ্যারান্টি থাকে না এ বিষয়ে। যা অনেকটা প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতো।

অথচ, সে বিষয়টা নিয়ে আমরা অহেতুক দোষারোপ করে যাই মানুষের। যেন এটি কোন যোগ্যতা। যেটি চাইলেও তার হাতে নয়।

যে বিষয়গুলো মানুষের নিজের মেধা, কর্ম, মননশীলতা, বিদ্যা, পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করা যায়; চর্চার মাধ্যমে উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা যায়- সে বিষয়গুলো দিয়েই মানুষকে বিচার করতে পারা না পারাটা নিজের মানসিক অবস্থানের পরিচায়ক। গায়ের রঙ, সৌন্দর্য, শারীরিক কাঠামো, কিংবা উর্বরতা দিয়ে নয়। আর প্রকৃতি প্রদত্ত বিষয় নিয়ে অন্যকে হেয় করার অভ্যেসটা বাদ দিতে পারলে নিজেরা উৎকৃষ্টের পথে এক ধাপ এগিয়েছি বলে জানবেন।


Place your ads here!

Related Articles

কয়েক টুকরো ভাবনা

গত কিছুদিন থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন করা হচ্ছে সেটি হচ্ছে, “ওয়ার্ল্ড কাপে আপনি কোন দলকে সাপোর্ট করেন?” আমি

বাঙালি একটি উপলব্ধি

ফেসবুকের দুটি পোষ্ট আমার এ লেখার অনুপ্রেরণা। জানিনা আমি বাঙালি বলেই বাঙালি জাতীয়তাবাদকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে চাইছি কিনা। তবে এ

সিডনিবাসীর প্রাণের মেলা রেকর্ড গড়ল

ফজলুল বারী, সিডনি: একটা প্রশ্নের জবাব দেই আগে। সিডনির বৈশাখী মেলা এবার এত দেরিতে করার কারন কী? এই মেলাটি হয় সিডনির

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment