গীতিকবি খোশনূর বেগম’কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
দিলারা আপা বেড়াতে আসলেন। বছর দু’য়েক আগের কথা। আড্ডা-গল্প,পুরুনো স্মৃতি রোমন্থনে সেই সময়টুকু বেশ জমে উঠেছিলো।
ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আমাদের নানান আয়োজন চলছে। সিডনি শহরের অদূরে আমাদের একটি যৌথ খামার বাড়ি আছে। নীপবন পল্লী নামেও পরিচিত এখানেl প্রথমবারের মত একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করবো, কিন্তু শহীদ মিনার তো নেই। কে বানিয়ে দিবে! বিদেশে ইচ্ছে করলেই সব করা যায় না।এজন্য সময়,অর্থ ও উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা থাকতে হয়। এতসব জটিলতা পাত্তা না দিয়ে আমি ও আমার বর শাখাওয়াত সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেরাই তৈরি করবো শহীদ মিনার। প্রতিদিন জব থেকে এসে কাঠ-রং-লোহা/পেরেক/হাতুরি নিয়ে বসে যেতাম গ্যারেজে। অত:পর হলোও।
গ্যারেজে শহীদ মিনার দেখে দিলারা আপা বিস্ময় প্রকাশ করলেন। যখন জানতে পারলেন আমরা নিজেরাই এটি নির্মান করছি, তখন আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর চোখ ছুঁয়ে ছিল জল। তাঁর হৃদয়ের উষ্ণতা টের পেয়ে দো’তলায় আমার ছোট্ট পাঠাগারে নিয়ে আসলাম। বললাম আপনিতো সিনেমার মানুষ। একসময় বাংলা চলচ্চিত্রে দাপুটে অভিনেত্রী ছিলেন।
চা নিয়ে আসছি। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। সিনেমার গান শুনুন। বই পড়ুন – ‘ঋত্বিক ঘটকের গল্প’ নামে গল্প সংকলন পড়তে দিলাম। সিডি অন করে দিলাম। একের পর এক বাজতে থাকলো___
১.তুই যে আমার মিলনমালা রে বন্ধু
২.পিরিতির ছোট্ট ঘরে রাখিব আপন করে – গানগুলো শুনে বললেন, বলো তো_ এ গান কে লিখেছেন!
উত্তর: স্বনামধন্য গীতিকবি খোশনূর বেগম।
দিলারা আপা খুব অবাক হলেন। খুশী হলেন। জানতে চায়লেন – আমার এই সিনেমাপ্রীতির কথা। বিদেশে থেকেও কিসের অনুপ্রেরনায় আটপৌড়ে বাঙাল জীবনে আটঁকে আছি!
কঠিন এ প্রশ্নের জবাব ছিল না। তবে, ভাল বাসা/বাসির অন্তর্মুখী স্রোত আমাকে বরাবরই শেকড়ে টানে।
‘তুই যে আমার মিলনমালা রে বন্ধু’ – গানটির সুর ও কথা আমার স্মৃতিতে গেঁথে আছে। ৮০’র দশকের মাঝামাঝি। আমাদের বাসা লাগোয়া কটিয়াদী মুকুল সিনেমা হল। পুরুনো মরিচা ধরা ভাঙাচোরা টিনের প্রাচীর ভেদ করে সিনেমার সংলাপ/গান শোনা যেতো। আমার বেড়ে উঠা কৈশোরে এর ছাপ স্পষ্ট! উপেন্দ্রকিশোরের লেখা বই, কটিয়াদী উপজেলার পাঠাগারে সুকুমার রায় রচিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকা পড়তে পড়তে মনে হতো আমি লেখকদের চিনি। জানি।পথের প্যাঁচালি,অপুর সংসার যতবার দেখি ততবার গৌরব হয় – সত্যজিৎ রায়ের গাঁ-এ আমার জন্ম। যে সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে আকিরা কুরোসাওয়া (জাপানের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক) মন্তব্য করেছেন – সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা না দেখা অনেকটা পৃথিবীতে বসবাস করে সূর্য ও চাঁদ না দেখার মতো”
লেখা দীর্ঘ হচ্ছে।
অকপটে স্বীকার করছি শেকড়ের টানে জোয়ার লেগেছে। গল্পের গতিপথ বদলে যাচ্ছে। প্রসঙ্গে ফিরি, বাংলা চলচ্চিত্রে।
খোশ-নূর!
রত্নগর্ভা মা জোবেদা খাতুন যথার্থ নাম রেখেছেন। মা নিজেও একজন কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। জোবেদা খাতুন হয়তো মেয়ের জন্মলগ্নেই বুঝেছিলেন এ মেয়ে সাহিত্যে/চলচ্চিত্রের গানে নূর হয়ে থাকবেন। চলচ্চিত্রের গান প্রেমী শ্রোতাদের মন-মননে খোশ সৌরভ ছড়িয়ে যাবেন অনন্তকাল।
খোশনূর বেগম একজন স্বনামধন্য গীতকবি। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান আছে। যা অনস্বীকার্য, সেটা কেউ মনে রাখুক, বা না রাখুক! ইচ্ছে বিধাতা অনেক কিছুই তাঁর খেয়াল খুশীমতন করেন। তাঁতে কারো কারো সাজানো বাগান এলোমেলো হয় বটে! তাতে কি!
খোশনূর তাঁর রাজ্যে বেগম হয়েই থাকবেন জন্মজন্মান্তরেl তাঁর সুযোগ্য কন্যা সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীরl যিনি নিজেও আট বছর বয়সে অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরুষ্কার।
দিলারা আপাকে অনেক ধন্যবাদ। সেদিন তিনি খোশনূর বেগমের কর্মজীবন পরিচয় করিয়ে না দিলে হয়তো অজানাই থেকে যেতেন সঙ্গীতাঙ্গনের উজ্জ্বল এই তারা।
আজ গীতিকবি খোশনূর বেগমের জন্ম বার্ষিকী। তাঁকে অতল শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
হ্যাপি রহমান
সিডনি,অস্ট্রেলিয়া
০২.১২.২০১৭ইং
Related Articles
ঋনযুদ্ধে পর্যুদস্ত এক বঙ্গবীর
ফজলুল বারী: নির্বাচনের মনোনয়নের প্রাথমিক বাছাই পর্বে বিশেষ কিছু ত্রুটি চোখে পড়েছে। যারা দেশের সংসদ সদস্য হতে চান একটি মনোনয়নপত্র
রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া প্রকাশে বুদ্ধিমান হোন
ফজলুল বারী: শেষ দফার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াতেও কোন রোহিঙ্গা শরণার্থী তাদের দেশে ফেরত যায়নি। অথবা ফেরত যেতে তাদের রাজি করানো যায়নি।
বিচার বিভাগ যে স্বাধীন নয় এর বড় ভিকটিম আপনি, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
ফজলুল বারী: দেশে শাসন বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের অস্বাভাবিক সম্পর্ক চলছে। বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীন নানা বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন প্রধান বিচারপতি