আপনার ট্যাক্সের টাকা কোথায় যায়?

আপনার ট্যাক্সের টাকা কোথায় যায়?

আপনি কিভাবে ট্যাক্স দিতে চান? আপনি কি আপনার মাসিক আয় থেকে দিবেন নাকি যখন কোন কিছু কিনবেন তখন? নাকি যখন বিশেষ কিছু কিনবেন তখন? আপনি কি একজন ধনী ব্যক্তির সমানুপাতিক ভাবে ট্যাক্স দিতে চান? বিভিন্ন দেশের সরকারগণ বিভিন্ন ধরণের ট্যাক্সের একটা ‘ভাল ট্যাক্স ব্যবস্থা’ দাঁড় করিয়েছেন। ‘ভাল ট্যাক্স ব্যবস্থা’ বলতে বুঝাচ্ছি কে কতটা ট্যাক্স দিবেন এবং কি কি বিষয়ের উপর ট্যাক্স দিতে হবে। কত টাকার উপর ট্যাক্স দিবেন এবং কি কি বিষয়ের উপর ট্যাক্স দিবেন এটা নিয়ে সব দেশেই কমবেশি দ্বিমত রয়েছে।

যেকোন দেশেই ট্যাক্স আসলে তিনটি বিষয়ের উপর দেয়া হয় বা ধরা হয়। বিষয় তিনটি হল আয়, ব্যায় এবং সম্পদ বা মূলধন। এর মাঝে আয় এবং সম্পদের উপর যে ট্যাক্স আমরা দেই সেটাকে ডাইরেক্ট ট্যাক্স বলা হয়। এবং আমাদের বিভিন্ন ব্যায়ের উপর যে ট্যাক্স দেই সেটাকে ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স বলা হয়। ট্যাক্স দেয়ার প্রধান বিষয়গুলো হল জনসাধারণের আয়, বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের আয়ের উপর ধার্য ট্যাক্স (Corporate Income Tax), আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর ট্যাক্স , সম্পদ কেনাবেচার সময় পরিশোধিত ট্যাক্স, ভোক্তা সাধারণের ব্যায়ের উপর ট্যাক্স ( VAT) এবং অন্যান্য। এগুলোর হয়ত ভিন্ন নাম থাকতে পারে কিন্তু এগুলো আসলে ট্যাক্সই; সরকারের রেভেন্যু কালেকশনের বিভিন্ন উপায়। সরকারের খরচ যোগানোর জন্যই এতসব আয়োজন।

এখন একটা দেশের ট্যাক্স পলিসিগুলো আসলে কেমন হওয়া উচিৎ? এটা খুবই জটিল একটা বিষয়। এত সহজে এর সমাধান মিলে না। আমরা কোনটাকে গুরুত্ব দিব ন্যায়পরায়ণতা (Equity) নাকি দক্ষতা (Efficiency)?
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫% ভ্যাট দিতে হয় বিভিন্ন ব্যায়ের উপর। এই ভ্যাট যখন শুরু হয় তখন অনেক ছোট ছিলাম বলে ব্যাপারটা মাথায় ঢুকত না। একজন গরীব মানুষ যখন কিছু কিনতে যাবে তখন তাকে তার আয় থেকে পণ্যটার মূল্যমানের ১৫% ভ্যাট হিসেবে দিতে হবে সেই পণ্যটার জন্য। এতে এই গরীব মানুষটার যে পরিমাণ কষ্ট হবে এখন সেই একই জিনিস যদি একজন ধনী মানুষ কিনে তাহলে ধনী মানুষটার সেরকম কষ্ট হবে না। একই কথা আয়ের উপর ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

প্রশ্ন হচ্ছে এই কষ্টটাকে কিভাবে সমান করা যেতে পারে কিংবা কষ্টের পরিমাণটা কাছাকাছি কিভাবে রাখা যায়? ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স এর ক্ষেত্রে ফেয়ার থাকাটা আসলেই কঠিন কিংবা সম্ভব না হয়ত। তবে এই অসমতাকে ডাইরেক্ট ট্যাক্স কিভাবে আদায় হবে, কিভাবে পুনঃবিতরণ হবে কিংবা সরকার কোন ক্ষাতে কত খরচ করবে সেটা দিয়ে অনেকটা পুষিয়ে দেয়া যায় এবং সমতা আনার চেষ্টা করা হয়।

বাংলাদেশে আসলে কি হয়?
বাংলাদেশে প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশান (Progressive Taxation) ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে সাধারণের আয় বাড়ার সাথে সাথে ট্যাক্স দেয়ার হারটাও বাড়তে থাকে। তবে Corporate Income Tax এবং ভ্যাট এর ক্ষেত্রে সমানুপাতিক হার (Proportional Tax rate) রয়েছে। এই সমানুপাতিক হারের ক্ষেত্রে ট্যাক্স দেয়ার হারটা সকল পরিমাণ আয়ের জন্য সমান ( কোম্পানি ব্যতীত নির্দিষ্ট শ্রেণির করদাতার উপর সর্বোচ্চ করহার এবং কোম্পানির করহার।)। এই কর দেয়ার হার ১৫% থেকে ৪৫% পর্যন্ত ( সূত্র: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২০১৬-২০১৭ সালের পরিপত্র -০১(আয়কর) অনুযায়ী মোট আয়ের উপর আয়করের হার, পৃষ্ঠা ২-৬।)।

প্রশ্ন হচ্ছে এই যে ভ্যাট দিচ্ছি এর পরিমাণটা কি বাংলাদেশের জনগণ বহন করতে সক্ষম কি না। আমার মতে সক্ষম না। কারণ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেশান ব্যবস্থায় চরম অসমতা রয়েছে। আর পুনঃবিতরণ ব্যবস্থা ত ধরতে গেলে নাই ই। যাও রয়েছে তাও নগন্য কিংবা সেটাতেও ঘাপলা রয়েছে। আপনি ট্যাক্স দিচ্ছেন আর সরকার সেটা খরচ করছে। এই যে সরকার খরচ করছে এটার খোঁজখবর নিয়েছেন কখনও? সরকারের উচিৎ প্রতিটা ট্যাক্স পেয়ারকে অন্তত ডাইরেক্ট ট্যাক্স পেয়ারকে প্রতিবছর তার প্রদেয় ট্যাক্স কিভাবে খরচ করেছে কিংবা করবে সেটার একটা বিবরণী দেয়া। যেমন প্রতি একশ টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে কিংবা হবে সেটার বিবরণ। আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে একজন সাধারণ মানুষ কোন আয়কর কিংবা ভ্যাট দিত না। ভ্যাট ত ছিলই না আর আয়কর দিলেও সেটার পরিমাণ খুবই নগন্য ছিল। তাই সোশ্যাল বেনেফিটও মানুষ আশা করত না। কিন্তু যুগ বদলেছে। বাংলাদেশ সরকারের আসলে কি কি সোশ্যাল পলিসি রয়েছে যেগুলো সমাজে সাম্যতা বজায় রাখতে সহায়ক? সোশ্যাল পলিসির ক্ষেত্রে কল্যাণ রাষ্ট্রে নিন্মতম যে সুযোগ সুবিধাগুলো থাকা উচিৎ:
১) গরীব মানুষদের আয়ে সহযোগিতা,
২) বৃদ্ধদের সাহায্য এবং সহযোগিতা,
৩) লেবার মার্কেটে সহযোগিতা (বেকার এর পরিমাণ কমানো, বেকারভাতা প্রদান।)
৪) বাচ্চাকাচ্চা পালনে সহযোগিতা (বাবা-মা কাজ করলে বাচ্চার কি হবে? এটার একটা রাষ্ট্রীয় কাঠামো দেয়া দরকার। দাদা-দাদী/নানা-নানী আর কত সাহায্য করবে। বাংলাদেশ দ্রুত ইন্ড্রাষ্ট্রিয়ালাইজড হচ্ছে। এর সাথে সাথে সোশ্যাল পলিসিগুলোরও যুগোপযোগী হওয়া দরকার।)
৫) স্বাস্থ্য সেবা,
৬) আয় অনুযায়ী বাসস্থান এর ব্যবস্থা (ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের কথা চিন্তা করুন। বাংলাদেশে দ্রুত একটা শক্তিশালী মিডল ক্লাস গড়ে উঠছে। তাদের কে কোথায় থাকতে দিবেন?)
এর কতগুলোতে আসলে ঠিক চিহ্ন দেয়া যাবে? ট্যাক্স দিচ্ছেন আর সরকার খরচ করছে। কেন খরচ করছে, কিভাবে খরচ করছে এইসব জানাটা জরুরী। তবে দিনশেষে এইসব পলিসি করেইবা কি লাভ যদি না দূর্ণীতি কমানো যায়।

জুবায়দুল জেকব
মেলবোর্ন
jubaidul.jekab@gmail.com


Place your ads here!

Related Articles

মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?

শহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত বিশালাকার স্থাপত্য শিল্প নিদর্শন মেলবোর্ন একজিভিশন কেন্দ্রে বসে যখন দেশের কথা ভাবছি তখন ফেসবুকে চোখ রাখতেই নজরে

ওম

ত্রিবেণী সিন্ধুর জলে উড়ে যায় উত্তরীয় তোমার— চিৎকারের শব্দে ওড়ে বাদুর; আকুল সুখে বাঁচাও… বাঁচাও… (বাতাসে ওড়ে কর্পূর! কিন্নরী তৈরি

প্রবাসে শেকড়ের সন্ধান

মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়ার সবচেয়ে বড় সার্থকতা বোধহয় অন্য মানুষদের ভালোবাসা অর্জন। আমরা যেমন আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে ভালোবাসি আবার একইভাবে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment