কারাগার থেকে নায়ক বনে গেলেন গাজী তারেক সালমান

কারাগার থেকে নায়ক বনে গেলেন গাজী তারেক সালমান

গাজী তারিক সালমন আলোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু গত ৭ জুন মামলা করেন। মামলার রায়ে ১৯ জুলাই দুই ঘণ্টা হাজতবাসের পর জামিন পান তারিক সালমন। এ মামলার রায় ঘোষনা করেছিলেন বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট্র আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন।

ঘটনা গত বছর ডিসেম্বর মাসের।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দায়িত্বরত অবস্থায় গাজী তারেক সালমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের একটি আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ করেন। ছবিটি পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী কোন এক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় এঁকেছিল। ইউএনও সাহেবের নির্দেশে উক্ত আমন্ত্রণপত্রের পেছনের পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবিটি ছাপানো হয়।

অত:পর ছবিতে বঙ্গবন্ধুর এলোকেশ ও গালে দৈত্য মাপের তিল দেখে জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজু মর্মাহত হন এবং তার হৃদকম্পন বেড়ে যায়। মামলা দায়ের করেন। ক্ষমতার দাপটে ইউএনও শ্রী নগরবাসী!

আদালত প্রাঙ্গণে ইউএনও তারেক সালমানকে পুলিশের ধরে নেওয়ার ছবি প্রকাশ হলে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। সচেতন দেশবাসী জেগে উঠলো। মিডিয়া সরব। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু, উত্তপ্ত পরিবেশ! লেখক সাংবাদিক সাধারন মানুষ চরম নিন্দা প্রকাশ করলো। একান ওকান হয়ে খবর পৌঁছে গেলো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কানে। ইউএনও নাজেহালের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তুষ্ট প্রকাশ করলেন। তাঁর নির্দেশে ২১ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তারিক সালমনকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকেও বদলী করে দেয়া হয়। ইউএনও সাহেবকে সসম্মানে যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হলো।

এ পর্যন্ত ঠিক আছে।

গুগুল সার্চ করলে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন রকমের ছবি দেখা যায়। দেশের নামী দামী চিত্রকর থেকে অখ্যাত আঁকিয়ে, স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা প্রিয় বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছে। শিল্পীর রং- তুলিতে ভিন্ন ভিন্নভাবে উঠে এসেছেন বঙ্গবন্ধু। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেই হোন না কেন, একজন শিল্পী রঙতুলির আঁচড়ে ‘বঙ্গবন্ধু’কে বেঁধেছেন সেটা নিখুঁত প্রেম থেকেই। বঙ্গবন্ধু অন্তরে বাস না করলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে উপজীব্য করে চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলা দুরহ!

গাজী তারেক সালমান স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণ পত্রে বঙ্গবন্ধু’র ছবি দিয়ে সৃজনশীল মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ প্রজন্মের বাচ্চাদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও নব প্রজন্মের যোগসূত্র তৈরি করে শেকড় সন্ধান করতে চেয়েছেন, স্কুল শিক্ষার্থীকে অনুপ্রানিত করতে চেয়েছেন। ইউএনও সাহেবের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। মহৎ।

অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজু একজন ক্ষুদে শিল্পীর আঁকা ছবি দেখে যে শংকা প্রকাশ করলেন এবং মূর্ছা যাওয়ার আগেই জ্ঞান হারালেন! এই জ্ঞান অক্ষর জ্ঞান। মূর্খ অ্যাডভোকেট! দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো তৈলবাজী’তে! একেই বলে- ভূতের মুখে রাম রাম!

দৈত্য অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহকে সাময়িক বা চিরতরে বহিস্কার কারের মধ্য দিয়েই ঘটনার শেষ হতে পারতো! প্রয়োজনে আরো কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত ছিল।

নাহ!
ঘটনা শেষ হইয়াও হইলো না!

ইউএনও তারিক সালমনকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পদায়ন!

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। পুলিশ বাহিনী তার প্রশাসনিক দায় ভার ফেলে ইউএনও’র মাথায় ছাতা ধরে আছে নিখুঁত মোসাহেবী কায়দায়। জনপ্রশাসনে বেকারত্বের ছাপ! আইনি পোষাকে অবনত মস্তকে পুলিশ।

ইউএনও সাহেবের হঠাৎ এই পদোন্নতি একটু বেশীই হয়ে গেল না! এ যেন, মেঘ না চায়তেই জল! সব কিছুর ধারাবাহিকতা আছে, থাকতে হয়! হয়তো ইউএনও সাহেব যথেষ্ট মেধাবী। প্রশ্ন তাঁর যোগ্যতা নিয়ে নয়!?

ধারাবাহিক সুশৃংখল নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙুলী দেখিয়ে রাস্ট্রের যেমন উন্নতি হয় না। তেমনি অনেক মেধাবী দক্ষ যোগ্য লোকও বঞ্চিত হয় বৈকি! যাক, তার’চে প্রিয় পাঠক চলুন প্রসঙ্গ পাল্টাই।

একটা গলপ মনে পড়লো
গোপালের এক প্রতিবেশী চৈত্র মাসে পুকুর কাটিয়ে বললেন, চৈত্র মাসে পুকুর কেটে রাখলুম, বর্ষাকালে জলে ভরে যাবে। আর জলের কষ্ট থাকবে না আমাদের। রাতের বেলা প্রতিবেশী যখন গভীর ঘুমে আচমকা বৃষ্টি হওয়ায় পুকুরে জল জমে গেল। সকালে ঘুম থেকে জেগে প্রতিবেশীর চক্ষু চড়ক গাছে। গোপাল ভাঁড়কে ডেকে বলল – দেখুন তো মশাই হঠাৎ এত জল কোত্থেকে এল! আমার তো কিছুই মাথায় আছে না! একেই বলে___ আশীর্বাদের বৃষ্টি !

কারাগার থেকে নায়ক!

হ্যাপী রহমান
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
০২.০৭.২০১৭


Place your ads here!

Related Articles

Canberra Ramadan Starts Thursday 17th May 2018 (1439H)

Salamu Alaikum WRT, WBT (Peace be on you) The Canberra Mosque announces the start of Holy Ramadan 1439 for Thursday

যে সব কারনে এই ভোট বিপ্লব

ফজলুল বারী: নির্বাচনের পুরো সময়টাই ছিলাম অনলাইনে। দেশের প্রধান নিউজ পোর্টালগুলোর পাশাপাশি একাধিক নিউজ চ্যানেলের লাইভ সম্প্রচারে চোখ ছিল সারাক্ষন।

আর কতকাল রক্ষক হবে ভক্ষক!

ঘটনা ১ ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট। ইয়াসমিন নামের ১৪ বছরের এক কিশোরী ধানমন্ডির একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত। বাড়ি

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment