সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে

সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে

অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরের সপ্তাহেই একটা বাংলা দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকরির অফার পাই। বন্ধুদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতেই সফি বলল, দোস্ত আমাদের মতো ছাত্ররা দিনের পর দিন চেষ্টা করেও একটা চাকরি পায় না। এই সিডনিতে ওভারসিজ স্টুডেন্টদের কেউ চাকরি দিতে চায় না। অফারটা ফিরিয়ে দিয়ে কাজ নেই। শুরু করে দাও। বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে দেখা হবে। কথা হবে। আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়বে। ইংলিশে কথা বলার জড়তাও কেটে যাবে।

ভাবলাম ভালোই তো। শুরু করা যাক। খরচের টাকাটাও হবে। পরে সুবিধা মতো ভালো কোনো চাকরি পেলে ছেড়ে দেব। দুটো ডলার কেই-বা কাকে দেয়।
তারপর শুরু হলো বাংলা দোকানে চাকরি। শনিবার ও রোববার, দুদিন সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা। ক্লাস থাকে অবশ্য সপ্তাহে তিন দিন। বাকি সময়টুকু পড়াশোনা আর অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।

একদিন শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে একজন বাঙালি দোকানে এসে ঢুকলেন। সাদা দাঁড়ি। বয়স হয়তো সত্তরের বেশি হবে। কুশল বিনিময়ের পর আমাকে বললেন, আপনার নাম?

বললাম, ইসহাক হাফিজ।
—অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আসছেন?
জি। এই দশ দিন হয়।
—আপনার বাড়ি?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
—আমার নাম দবির। সিলেটে সুরমা নদীর পাড়ে আমাদের বাড়ি। ছোটবেলায় ওই নদীতে অনেক মাছ ধরছি। সাঁতার কাটছি। নৌকা দিয়ে নানার বাড়ি বেড়াতে গেছি। দেশ ছেড়ে এসেছি আজ ৪২ বছর। ইংল্যান্ডে ছিলাম ১০ বছর। ভিজিট করতে এসে এই দেশটা বড় ভালো লাগে। তারপর ছেলেমেয়ে বড় হয় এখানে। পরিবার নিয়ে আটকা পড়ে গেছি। তাঁর কণ্ঠ জড়িয়ে এল।
তারপর তিনি কাউন্টারের সামনে থেকে শেলফের আড়ালে চলে গেলেন। বুঝতে আর বাকি রইল না, তিনি অশ্রুজল গোপন করতেই নিজেকে আড়াল করছেন। কয়েক মিনিট পর তিনি আবার কাউন্টারের সামনে এসে বললেন, আচ্ছা ভাই, আপনি কি ওই কবিতাটা পড়েছেন?
জি বলেন, কোন কবিতাটা?
—কোন ক্লাসে যে পড়ছি মনে নেই। ওই যে সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে। সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
আহা ভাই। মাইকেল মধুসূদনের কপোতাক্ষ নদ। কী এক অপরূপ ঝংকার এ কবিতার ভেতর। আমার প্রিয় কবিতা। ক্লাস নাইনে আমাদের পাঠ্য ছিল। তিতাস নদের পাড়ে বসে চানাচুর মুড়ি লেবু সালাদ দিয়ে মেখে সব বন্ধুরা মিলে খেতাম আর প্রতিদিনই তিতাসের দিকে চেয়ে আবৃত্তি করতাম এই কবিতাটি।

দবির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি আর ওয়েটমেশিনে মেপে এক কেজি করে ডাল প্যাকেট করছি। স্টিকার লাগিয়ে প্রাইস লিখে প্যাকেটগুলো সামনে রাখছি। এ সব ব্যস্ততার ভেতরই কথাবার্তা চলছে। হঠাৎ চোখ তুলে দেখি দবির ভাইয়ের দুচোখ ছেপে গড়িয়ে পড়ছে জল। যদিও ভাই বলে ডেকেছি, কিন্তু বাবার বয়সী মানুষটাকে কাঁদতে দেখে আমার কথা বলার শক্তিই যেন লোপ পেয়ে যায়। নিজেকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে বললাম, ভাই আপনি, কী যে বলব ভাই। দেশকে এত মিস করেন। তাই তো…।

এদিকে দেশের কথা স্মরণ হতেই মুহূর্তে আমার মনে পড়ল বাবা–মা, ভাইবোন, বন্ধু বান্ধবদের ঘিরে ফেলে আসা মুখর দিনগুলোর কথা। মনে পড়ল এইচএসসি পরীক্ষার পরপর মাত্র উনিশ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে যাওয়া ভাগনি লিয়ার কথা। আমার গলা জড়িয়ে এল। এরই মধ্যে তিনি আর কিছু না বলেই দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ভাবি কি কাজে এসেছিলেন তিনি? কোনো কেনাকাটাও করলেন না যে।

তারপর থেকে মনে মনে তাঁকে খুঁজি। এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ। ক্রমে মাস পেরিয়ে গেল আর খবর নেই। হঠাৎ করে একদিন শনিবার ঠিক একই সময়ে তিনি উপস্থিত। সেদিন অবশ্য তার কথাবার্তার ধরন ভিন্ন। নানান বিষয়ে আলোচনা শেষে তিনি বললেন, ইসহাক সাব। বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ছিলাম। শরীরটা ভালো না। কোন দিন কী হয়!
বলেন কী ভাই! রোগ–শোক জীবনেরই অংশ। এত ভেঙে পড়লে কী চলে।

—নারে ভাই। সত্যিই বলছি…। বয়স হয়েছে, শরীরের অবস্থাটা টের পাই তো। যা হোক ভাই, আপনাকে দেখেই আমার একজন আপন ভাই মনে হয়েছে। আপনার মনে মাটির ঘ্রাণ আছে।
আরে ভাই, এই পরবাসে আমাদের তো আর দেশের মতো পাড়াপড়শি, আত্মীয়–জ্ঞাতি নেই। এখানে আমরা বাঙালি মানেই একজন আরেকজনের আপন ভাই। নইলে চলব কী করে!
—আহা, হিরার চেয়ে দামি একটা কথা বললেন ভাই। এত সুন্দর করে কয়জনেই আর ভাবে।

এই আর কী। জি ভাই বলুন।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীতএকটা হালকা নিশ্বাস ফেলে দবির ভাই বলতে লাগলেন, ভাই আমার খুব ইচ্ছা দেশের বাড়িতে বাবা–মায়ের কবরের পাশে যেন আমার কবরটা হয়।
প্রসঙ্গটা হালকা করতে মুচকি হেসে বললাম, ভাই সবেমাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন তো। তাই আপনি আসলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কয়েক দিনেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
তাঁর চেহারায় কেমন এক অচেনা গাম্ভীর্যর ছাপ। বললেন, আমার ছেলেমেয়েরা কিছুতেই চাইবে না। ওদের তো জন্ম এখানে। অস্ট্রেলিয়ান স্টাইলে বড় হওয়া। আমাদের মনের মূল্য ওরা কোনো দিন বুঝবে না। শুনেছি ওরা ভাইবোন মিলে রোকোড সেমেট্রিতে (গোরস্থান) বাপ–মায়ের জন্য কবরের পজেশন কিনে রাখছে। ওই পজেশন দেখতে কোনো দিন যাইনি। কথাটা ভাবতেই আমার আর শান্তি লাগে না ভাই। ওরা এমন করে চাচ্ছে, তাই আর জোর দিয়ে কিছু বলতেও পারছি না। বলবই বা কী করে, দেশের বাড়িতে এখন আমাদের কেউ নেই তো। বাড়ি খালি পড়ে আছে।

মাত্র মাস দেড়েক হলো অস্ট্রেলিয়ায় আমি। চিনি না জানি না কিছুই। অথচ এই লোক আমাকে দিয়ে বসল এক মহান দায়িত্ব। এমন এক গভীর আবেগে তিনি আমাকে বললেন কথাগুলো, বিষয়টা এড়িয়ে যেতে আমি যে কিছু বলব, উপায় নেই। পারব কী পারব না সে খেয়াল ছিল না। এরই মধ্যে তিনি নাম ঠিকানা ফোন নম্বর সব লিখে আমাকে একটি কাগজ ধরিয়ে দিলেন। কাগজটা ওয়ালেটে রেখে নিজের কাজে মন দিলাম। তিনি হালকা কয়েকটি আইটেম কেনাকাটা করে চলে গেলেন।

তারপর দবির ভাই প্রায়ই আমাদের দোকানে এসেছেন। কখনো ভাবি, ছেলে–মেয়েসহ এসেছেন, আলাপ-পরিচয় হয়েছে। ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। ঈদে উৎসবে ওনার বাসায় গেছি। বাঙালি একটা পারিবারিক পরিবেশে খানিকটা সময় বেশ ভালোই কেটেছে। এভাবেই চলে যাচ্ছে দিনগুলো।

বছরখানেক পরের কথা। তখন অবশ্য বাংলা দোকানের কাজ ছেড়ে দিয়েছি। সেদিন আমি ক্লাসে। হঠাৎ বন্ধু সফি মেসেজ করল, দোস্ত দবির ভাই একটু আগে মারা গেছেন। দুপুরে খাওয়া শেষে হঠাৎ বুকে ব্যথা। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই…।

সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস ফেলে ছুটে এলাম। ট্রেন থেকে নামতেই দেখি সফি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। দবির ভাইয়ের বাসার দিকে হাঁটতে হাঁটতে ওকে ঘটনাটা আদ্যোপান্ত বললাম। সব শুনে সে বলল, দোস্ত কথা তো বললি না, মাথার ওপর যেন পাথর চাপিয়ে দিলি। ওনার ছেলেমেয়েরা এ দেশে জন্ম। ওরা কি চাইবে বাবাকে দেশে নিয়ে দাফন করা। যতই বলি, ওদের জন্মের দেশ তো এই অস্ট্রেলিয়া।

বললাম, চলো দোস্ত, বলেই দেখি।

দবির ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখি শোকে মুহ্যমান পরিবার। দবির ভাইয়ের মৃত মুখখানা এক নজর দেখে ড্রয়িং এসে বসলাম। অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা বিভিন্ন বিষয় লেখালিখি করছে। আছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। দবির ভাইয়ের বড় ছেলে সায়েম (বর্তমানে নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে) নানান দিকে সে তখন ব্যস্ত। ড্রয়িংরুমে বসা সবাই তখন ফিউন্যারাল নিয়ে আলোচনা করছেন। রোকোড সেমেট্রিতে দাফনের প্রসঙ্গ উঠলে আমি আর সফি দুজনই পাশে বসা শামিম ভাইকে ডেকে বারান্দায় নিয়ে ঘটনাটা বললাম। দবির ভাইয়ের শেষ ইচ্ছার কথা শুনে শামিম ভাই তো কেঁদেই সারা।

শামিম ভাই বললেন, উনি আমার চাচাতো ভাই। আপন ভাইয়ের অধিক আমাকে আদর করেছেন। এই ভাইয়ের কারণে আজ অস্ট্রেলিয়ায় মুখ দেখছি। আমি এসে আমার দুই ছোট ভাইকে আনছি। আনছি ভাইগনাকে। শুধু আমাকেই নয়, এমন কতজনকে যে দবির ভাই স্পনসর করছেন। ভাইয়ের একটা শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকব? ভাইকে নিয়ে আমি যাব দেশে। এই ভাই ছিলেন আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেন।

পরে সফি ভেতরে গিয়ে সায়েমকে ডেকে আনল। আমাদের সকল শঙ্কা ধূলিসাৎ করে দিয়ে সায়েম সঙ্গে সঙ্গেই রাজি। একে একে রাজি হলেন ভাবি, মেয়ে জেনি। স্কাইপেতে কথা হলো ইংল্যান্ডে সেটেলড দবির ভাইয়ের ভাতিজি ও ভাস্তেদের সঙ্গে। শুধুমাত্র সদ্য জন্ম নেওয়া বেবি আর আসন্ন পরীক্ষার কারণে দুজন আসতে পারছে না। বাকি সবাই রাজি হলো তাদের দবির কাকাকে শেষবারের মতো দেখতে।

এরই মধ্যে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা দবির ভাইয়ের নিথর দেহখানা স্ট্রেচারে করে বাইরে এনে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে গেল। দুই দিন পর লাকেম্বা মসজিদে জানাজা হলো। তারপর হিমঘরে রাখা হলো দবির ভাইয়ের মরদেহ।

সাত দিন পরের কথা। সেদিন পরিবারের লোকজন আর বন্ধুবান্ধবসহ তেরো জনের এক বহর নিয়ে আমাদের দবির ভাই জন্মের দেশে রওনা হলেন। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে যাবতীয় ফর্মালিটিস শেষে যখন বাসার দিকে রওনা দিই, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। দবির ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে কেন যে আমার ঘুম হচ্ছে না। চোখ বন্ধ করলেই নানান কিছু দেখি। তবে সেদিন মনটা কেমন যেন করছে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। সফি ড্রাইভ করছে। এয়ারপোর্ট টানেল পার হয়ে গ্র্যান্ড প্যারেড ধরে আমাদের গাড়ি প্রেসিডেন্ট অ্যাভিনিউতে মোড় নেওয়ার আগে আগে সফিকে বললাম, দোস্ত মনটা ভালো না। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। চল, ব্রাইটন বিচে কোন একটা গাছের ছায়ায় একটু বসি।

সফি হাতজোড় করে বলল, দোস্ত ÿমাফ করিস। আমার কাজ আজকে আফটার নুন শিফটে। তোকে সময় দিতে পারলাম না। তুই বরং এখানে নেমে পর। একটু ঘোরাঘুরি করে মনটা হালকা হলে বাসায় চলে যাবি।

ঠিক আছে দোস্ত।

লেখকপ্রেসিডেন্ট অ্যাভিনিউর ট্রাফিক লাইটের কাছাকাছি সফি গাড়ি পার্ক করলে আমি নেমে পড়ি। সফি ডেকে বলল, দোস্ত সাবধান। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে তোকে একা রেখে যেতে। বেখেয়ালি হয়ে পড়িসনে। ট্যাক্সি করে বাসায় চলে যাস…।

ঠিক আছে দোস্ত।

সফি চলে গেল। ব্রাইটন বিচের এক অচেনা গাছের ছায়ায় একটা বেঞ্চিতে বসে আছি আমি এক অচেনা। সামনে নীল সমুদ্রের ঢেউয়ে নগ্ন প্রায় অসংখ্য তরুণ তরুণীদের আনন্দ বিহার। কখনো নিবিড় জড়াজড়ি। চকচকে সাদা দেহ বালির ওপর মেলে ধরে কখনো গড়াগড়ি। আমার মনের খবর ওরা জানে না কেউ। স্থির দৃষ্টে চেয়ে আছি ওই দিগন্ত আকাশে। একখণ্ড সাদা মেঘ সরে যায় ধীরে। দৃষ্টির শেষ প্রান্তে ওখানে আকাশ আর সাগর মিশে গেছে। চেয়ে আছি একটু শান্তির আশায়। এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের প্রকাণ্ড প্লেনটি এক দৌড়ে রানওয়ে ছেড়ে আকাশে উড়াল দেয়। এক গম্ভীর প্রতিধ্বনিতে শিহরিত হয়ে ওঠে পরিবেশটা। আমাদের বড় ভাই, জীবনের বেশিরভাগ সময় পরবাসে থাকা আমাদের দবির ভাই আজ মায়ের কাছে যাচ্ছেন। মাটির হিম ঘরে মা–ছেলে পাশাপাশি থাকবেন। একপর্যায়ে প্লেনটি ছোট্ট আরও ছোট্ট হয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলে দিবাস্বপ্নের মতো চোখে ভেসে উঠল এক বছর আগে, বাংলা দোকানে ওই প্রথম দিনটা।

ভাই। আপনি কি ওই কবিতাটা পড়েছেন? সততা হে নদ তুমি পড় মোর মনে। সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে।
সুরমা নদীর বুক থেকে ধেয়ে আসা শীতল বাতাস। দুচোখে চিরনিদ্রায় দবির ভাই। আমাদের বাংলা। মা–মাটি। মায়া আর মায়া…।


Place your ads here!

Related Articles

প্রিয় মানুষের শহর – ৪

[প্রিয় মানুষের শহর] আবুল ভাইদের একটা সবার উপরে আমরা গ্রুপ আছে – এই প্রবাসে। সব অনুষ্ঠান তাঁরা নিজেরা আয়োজন করে।

The Case For Calculations: Attempting to Curtail The Crescent Controversies

A very long lecture to justify using Calculations in Islam by Shaykh Dr Yasir Qadhi . It seems even calculating

Canberra Eid-ul-Fitr 1445 Wednesday 10th April 2024

Assalamu Alaikum – Eid day will be WEDNESDAY, 10th April 2024. Eid Mubarak from the Imams Council of ACT, IA, completing 29 days

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment