ছোট প্রশ্ন, বড় উত্তরঃ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার খরচ

ছোট প্রশ্ন, বড় উত্তরঃ  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার খরচ

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ যে বেশী তা সবারই জানা । এবৎসর সরকার এই ব্যয়ের উপর প্রথমে ১৫% ও পরে ৭.৫% ভালু আডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) আরোপ করেছিল । ছাত্ররা তা প্রত্যাহারের দাবী জানালে সরকার তাদের বিরুদ্ধে “পুলিশী নির্য্যাতন এবং বাঁশ হাতে ছাত্রলীগ” ব্যবহার করে । এতে কাজ না হওয়ায় পরে তারা এই ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার প্রেক্ষিত সংক্ষেপে বর্ণনা করা যেতে পারে । অর্থনীতির নিয়ম বলে, কোন দেশ সমৃদ্ধ হয় তখন যখন তার সম্পদ বাড়ে । মানুষের নানা প্রয়োজন মেটানোর জন্য দেশের সম্পদ দিনে দিনে কমতে থাকে । এটা তিন ভাবে হতে পারে – (১) দেশের মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে দেশীয় ব্যবহার করে, (২) দেশের মানুষের প্রয়োজনে বিদেশ থেকে সম্পদ আনতে হয় এবং এই প্রয়োজনে বিদেশে নিজ দেশের সম্পদ পাঠাতে হয় এবং (৩) দেশে অশান্তি বা নিরাপত্তা না থাকলে দেশের নাগরিক বিদেশে সম্পদ পাচার করে ।

একটি দেশের সম্পদ যাই থাকুক না কেন তার বৃদ্ধি নির্ভর করে এগুলির ধী-সম্পন্ন ব্যবহারের উপর । বলা বাহুল্য এই ধী-সম্পন্ন ব্যবহারের পুরো দায়িত্বই থাকে সরকারের হাতে । আমাদের দেশে ১৯৭১ সন থেকে ১৯৭৪ পর্য্যন্ত চলেছিল সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটি দেশের অরাজক পরিস্থিতি । এই সময়ে দেশে গনতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হয় । কিন্তু ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রথম গনতন্ত্র ভূলুন্ঠিত হয় । এরপর নানা নামে শাসন চললেও গনতন্ত্র আর প্রতিষ্ঠিত হয় নি । অগনতান্ত্রিক সরকারগুলি টিকে থাকার জন্য কখনও ধর্ম, কখনও দলীয় পেটোয়া বাহিনীকে ব্যবহার করে । এর বাইরে প্রায় সবক্ষেত্রেই তাদেরকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আর সশস্ত্রবাহিনীর উপর নির্ভরশীল হতে হয় এবং নানাভাবে তাদের খুশী রাখতে হয়। এইসব কারনে বাংলাদেশের ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলিকে দলীয় পেটোয়া বাহিনী, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আর সশস্ত্রবাহিনীকে খুশী রেখেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং শাসন চালিয়ে যেতে হয়েছে ।

দেখা যাচ্ছে, গনতন্ত্রে যেখানে দেশের সাধারন মানুষের মঙ্গলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবার কথা, অগনতান্ত্রিক সরকারকে সেখানে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সর্বক্ষন দলীয় পেটোয়া বাহিনী, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আর সশস্ত্রবাহিনীর মঙ্গলের কথা চিন্তা করতে হয় । এর বাইরে তারা অর্থের প্রয়োজনে বিশেষ বিশেষ লোক বা প্রতিষ্ঠানকে অন্যায় সুযোগ দিয়ে থাকে এবং পরিবেশ ও ভূসম্পদ বিনষ্টকারী প্রকল্প গ্রহন করে থাকে । এ ধরনের সরকার সাধারনতঃ নানাবিধ ভৌত ও নির্মান কাজের উপর জোর দেয় । কারন এর ফলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে । দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ঐতিহ্য, গৌরব ইত্যাদির উন্নয়নের স্থলে এগুলির বিনিজ্যিক ব্যাবহার তাদের শাসনকালে বেশী গুরুত্ব পায় । অনেক সময় অবৈধ লেনদেনের গোপনীয়তার স্বার্থে এমন ধরনের প্রকল্প গ্রহন করা হয় যে গুলি দেশীয় কোম্পানী করতে পারে না । এই সব কাজে ‘কিক ব্যাক’ দিতে ইচ্ছুক বিদেশীদের নিয়োগ করা হয় । এধরনের সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে । কারণ তারা দেশে কাজ করলে দূর্নীতি আন্তর্জাতিক স্তরে জানাজানি হবার সম্ভাবনা থাকে । এধরনের কর্ম পরকল্পনার ফলে একদিকে যেমন রাস্ট্রের সূদুর প্রসারী উন্নয়ন ব্যহত হয়, অন্য দিকে দেশে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারারা ফলে মানুষ দেশে থাকা নিরাপদ বোধ করে না এবং সুযোগ পেলেই দেশ থেকে সম্পদ বিদেশে পাচার করে থাকে । এইধরনের অবস্থা দীর্ঘকাল যদি চলতে থাকে, আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে জনসংখ্যা, তাহলে একটি দেশের আভ্যন্তরীন সম্পদ ক্রমে ক্রমে কমতে থাকে । সেক্ষেত্রে সরকারকে জনগনের উপর কর বাড়িয়ে এবং আরো নানা পন্থায় আয় বাড়াতে হয় ।

যে সব দেশে ধনী মানুষের সংখ্যা বেশী সেসব দেশে ধনীদের ছেলেমেয়ের জন্য কিছু সংখ্যক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা যুক্তিযুক্ত । কিন্তু গরীব দেশে বেশী সংখ্যক মানুষের উচ্চ শিক্ষার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো কম খরচের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় । একটি গনতান্ত্রিক সরকার এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও অগনতান্ত্রিক সরকারের এসব বিবেচনা করার সুযোগ থাকে না । তারা নিজেদের গদী বাঁচানোর জন্য যাদের সহায়তা বেশী প্রয়োজন বলে মনে করে, তাদের সুবিধার জন্যই কাজ করে থাকে । এই বিবেচনা থেকেই বাংলাদেশে ব্যাপক হারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় । এখানে এই ধরনের সরকারের সুবিধাগুলি হলোঃ (১) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয় তা সরকারকে দিতে হয় না, (২) নিজেদের লোক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক আর্থিক ও অন্য ভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে । দেখা যাচ্ছে পাবলিক এর বদলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তারা হলো দেশের গরীব ও সৎ জনগন । অসৎ লোকেরা চাপে পড়লেই নানাভাবে তাদের আয় বাড়িয়ে নিতে পারে । তবে এসব সুক্ষ বিষয় কেবলমাত্র গনতান্ত্রিক সরকারই চিন্তা করতে পারে ।

সাধারনভাবে বলতে গেলে ১৯৭৫ থেকে এ পর্য্যন্ত এদেশে কোন গনতান্ত্রিক সরকার ছিল না । আর বর্তমান সরকার তো গনতন্ত্রের ক্ষেত্রে চরম ব্যার্থতা দেখিয়েছে। এই সরকারের শাসনকালে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিদেশে বাংলাদেশীদের “জল-কবর, বন-কবর ও গন-কবর” সূচিত হয় । যে সব ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমান সরকার এই “জল-বন-গন-কবর”এর সূচনা করে করে তার মধ্যে আছে, (ক) দেশে গুম এবং গুপ্তহত্যা চালু করে সাধারনভাবে মানুষের জীবন দূর্বিষহ করে তোলা, (খ) মামলা, গ্রেপ্তার, গুম এবং গুপ্তহত্যার মাধ্যমে বিরোধী দলের মানুষের জীবনে চরম অশান্তি এনে প্রকারান্তরে তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা, (খ) দেশে কর্ম সংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি না করা এবং (গ) কম খরচে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না বাড়িয়ে বেশী খরচের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা এবং এভাবে গরীব ও সৎ মানুষের সন্তানদের লেখা পড়ার সুযোগ সংকুচিত করা ইত্যাদি। সরকারের এহেন কার্য্যক্রমের ফলে বিপুল সংখ্যক বিপন্ন, দরিদ্র এবং সৎ মানুষের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে । এদিকে এই সময় এই সরকার নিজেদের ক্ষমতা সামলাতে এতই ব্যস্ত ছিল যে দেশের ক্ষমতাধর নৈতিকতাবিহীন মানুষেরা যে আর্থিক স্বার্থে দালালদের মাধ্যমে এই যুবকদেরকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে তা দেখার সুযোগ তাদের ছিল না ।

নিজেদের স্থায়ী রাজনীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সরকার ইতিমধ্যেই নিজেদের দলীয় লোকদেরকে প্রচুর সংখ্যক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং নানাভাবে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করছে। ঠিক এমনই একটা অবস্থায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র বিশাল ব্যায়ের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে । কেন বর্তমান সরকারকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে তা উপরে বলা হয়েছে ।

এমতাবস্থায় সমস্যার সমাধানের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানোর কথা এই সরকারকে বলে লাভ নেই । এই সরকার তার নিজের উদ্দেশ্য সামনে রেখে নিজস্ব পদ্ধতিতে চলেছে । সেখানে অন্য কারো কথা শোনার ইচ্ছা বা সময় যে তাদের নেই তা ইতিমধ্যেই প্রমান হয়ে গেছে । দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই সরকারকে ভোট দেয় নাই । নীতিগত ভাবে তাই জনগনের কথা রাখার দায়ও এই সরকারের নাই । আওয়ামী লীগের অনেক কিছুই রহস্যময়, যা এদেশের মানুষ অনেক সময়ই বুঝতে পারে না । এদেশের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের হাত থেকে বাচতে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভোট দেয় । পাকিস্তানের শাসনকর্তা হবার পরিবর্তে তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন যার ফল এই দেশের ত্রিশ লক্ষ নিরীহ মানুষ মৃত্যু বরণ করে । এর ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ভারত-রাশিয়া সহ কিছু আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে । আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের এই “জল-বন-গন কবর” কাজের জন্য হয়তো ভবিষ্যতে কোন অভাবিত পুরস্কার আসবে ।

যে কথা বলছিলাম, বোঝাই যাচ্ছে এদেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্রকে অদূর ভবিষ্যতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করতে হবে । এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ একটু কম হলে তাদের সুবিধা হতো, এবং আরো কিছু বেশী সংখ্যক ছাত্র এখানে পড়াশোনা করতে পারতো । কোন কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যে পড়াশোনার খরচ বেশী নেয় তা ইতিমধ্যেই প্রমান হয়ে গেছে । যেমন, ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলনের সময় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষনা করেছিল যে তারা ছাত্রদের কাছ থেকে ভ্যাট নেবে না । যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসান দেবার সুযোগ নেই তাই ধরে নেয়া যায় যে এই বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়টি ভ্যাটের সমপরিমান টাকা কমালে তাদের কোন ক্ষতি হবে না, এমনটা বুঝেই তারা এমন ঘোষনা দিয়েছিল । এখন যেহেতু সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে তাই ছাত্রদের উচিত হবে তাদের দেয় ফী থেকে এই পরিমান খরচ কমানোর জন্য চাপ দেয়া । অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলি এ কথা বলেনি, তাই তাদেরকে এই চাপ দেয়া যাচ্ছে না ।

আমাদের দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গড়ে উঠেছে প্রধানতঃ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরনে, অন্ততঃ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এমনটাই দাবী করে থাকে । আমেরিকায় অনেক কাল ধরে নানা ভাবে নানান ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে । এগুলি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে গড়ে ওঠার অনেক কারণও আছে । অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে ধনী মানুষের দানে । এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তাদের নিজেদের বিশেষ বিশেষ ইচ্ছার প্রতিফলন ।

প্রসঙ্গতঃ আমরা আমাদের আলোচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমেরিকার কয়েক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিষয় আলোচনা করব। সেখানে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৎসরে দুইটি সেমিস্টার, আবার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি সেমিষ্টার রয়েছে । প্রশ্ন হতে পারে, সাধারনভাবে বৎসরে দুই সেমিষ্টার গ্রহনযোগ্য এবং ভালো প্রমানিত হবার পরেও তিনটি সেমিষ্টার থাকার কারণ কি? এর কয়েকটি কারণ হলো- (০১) কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দোক্তারা চেয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন রিসার্চ কাজ বেশী চলে । তারা দেখেছেন, দুইটি সেমিষ্টার সমানে চললে শিক্ষকরা রিসার্চের সুযোগ তেমন পায় না । তাই তারা একটি তৃতীয় সেমিষ্টার রেখেছে যখন রিসার্চের কাজ চলবে । (০২) পড়াশোনার দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়া ছাত্ররা যাতে তাদের পিছিয়ে পড়া বিষয়গুলি কভার করতে পারে সেই জন্য কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় দুই সেমিস্টারের মাঝে আরও একটি সেমিষ্টার রেখেছে । (০৩) অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিষ্টারটি রেখেছে আর্থিক ভাবে দূর্বল ছাত্রদের জন্য, যাতে তারা অতিরিক্ত সেমিষ্টারটিতে পার্ট-টাইম কাজ করে কিছুটা পড়ার খরচ যোগাড় করে নিতে পারে ।

দেখা যাচ্ছে, উপরের একটি কারণও আমাদের দেশের প্রযোজ্য নয় । আসলে আমাদের দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দোক্তারা বিদেশ থেকে সেই নিয়মটিই গ্রহন করেছে যেটি তারা তাদের ব্যবসা সহায়ক হবে বলে মনে করেছে । বৎসরে তিনটি সেমিষ্টার থাকলে প্রতি সেমিষ্টারে কিছুটা বেতম কম রেখেও বৎতসরে দুই সেমিষ্টারের চেয়ে বেশী আয় করা যায় । যেমন, বৎসরে দুই সেমিষ্টার এবং প্রতি সেমিষ্টারের খরচ এক লক্ষ টাকা হলে বৎসরে খরচ হবে দুই লক্ষ টাকা। বৎসরে তিন সেমিষ্টার এবং প্রতি সেমিষ্টারে খরচ আশি হাজার টাকা হলে বৎসরে মোট খরচ হবে দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা । তিনটি পরীক্ষায় ফি বাবদেও বেশী টাকা নেয়া যায় । প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আগে প্রিপারেটরী লিভ, পরীক্ষা গ্রহন, ফল প্রকাশ ইত্যাদি বাবদ অনেক সময় লাগে । এর ফলে বৎসরে তিনবার পরীক্ষা হলে শিক্ষাদানের সময় পাওয়া যায় কম । যে সব বিশ্ববিদ্যালয় পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে কাজ চালায়, তারা সাধারনণতঃ লেকচারের সংখ্যার ভিত্তিতে টাকা দিয়ে থাকে । তিনটি সেমিস্টার চালু থাকলে শিক্ষার দিন-সংখ্যা কমে যায় এবং এতে তাদের কিছু আর্থিক সাশ্রয় হয়ে থাকে ।

এরপর আসা যাক কোর্স এর সংখ্যার বিষয়ে । আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বা পাচ বৎসর মেয়াদী স্নাতক কোর্সে সাধারনতঃ ১৪০ থেকে ২০০ ক্রেডিট স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয় । আমাদের দেশের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কিছু অতিরিক্ত কোর্স যুক্ত করে, বা কোন কোন ক্ষেত্রে একটি কোর্সকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে কোর্সের সংখ্যা বাড়িয়েছে । সহজেই বোঝা যায় যে, কোর্সের সংখ্যা বাড়ালে আয় বাড়ে । অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আবার তাদের বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কিছু প্রকল্পের বিষয়কে অনাবশ্যক ভাবে বিভিন্ন প্রোগ্রামে ঢুকিয়ে কোর্সের সংখ্যা বাড়িয়েছে । কোর্স বা সেমিষ্টারের সংখ্যা বাড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ে, কিন্তু পড়ার মান বাড়ে না ।

সাধারনভাবে বলা যায়, তিন সেমিস্টারের স্থলে দুই সেমিস্টার করা হলে এবং কোর্সের সংখ্যা কমালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কমবে এবং সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছাত্রদের বেতনও কিছুটা কমানো সম্ভব হবে । তবে এ বিষয়ে ছাত্রদেরকেই অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে। আশার কথা এই যে আমরা দেখেছি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইতিমধ্যেই তাদের একটি ন্যায্য দাবী আদায় করার সংগ্রামে সাফল্য লাভ করেছে ।
অধ্যাপক বিজন বিহারী শর্মা । স্থাপত্য বিভাগ । আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।


Place your ads here!

Related Articles

বন্ধুত্বের স্বরূপ

“আমি ভালোবাসি যারে সে কি কভু আমা হতে দুরে যেতে পারে!” পারে। খুব পারে। আজ কাল কাছে থাকা নির্ধারন করা

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment