সবাই আমার ভালবাসা চায়

সবাই আমার ভালবাসা চায়

করিম আলী’র ডুব সাঁতার – সবাই আমার ভালবাসা চায়

[করিম আলী’র ডুব সাঁতার – আমার নামে লেখা হলেও, কথা গুলো আমার নয়। করিমের অনুরোধেই তাঁর কথা গুলো আমার নামে লেখা। দয়া করে কারো সাথে কোন মিল খোজার অপচেষ্টা করবেন না।]

সাধারণত, একটা সময় পর, শিক্ষা বা ধর্ম মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে না। মানুষ নিজের চরিত্র নিজেই গড়ে, অন্য কেউ, অন্য কিছু, তা প্রভাবিত করতে পারলেও, আমূল পরিবর্তন করতে পারে না।

কেউ কেউ, তার পশুত্ব গোপন করে চলতে পারে সারা জীবন। অনেকেই পারে না, মানবতাকে, সভ্যতাকে আক্রমণ করে সুযোগ পেলেই এবং মনে করে, এটা তাদের জন্মগত অধিকার। তার নিজের স্বাধীনতাই মুখ্য, সে ছাড়া অন্য সবার জন‌্যে – সব সময়ই একটা সীমা রেখা দেয়া থাকে এবং এই সীমারেখা দেয়াটাও তাদের অনড় অধিকারের মধ্যে পড়ে।

আমি মনে করি, বয়সের কাজ বয়সেই করা ভাল এবং বয়সটা “মনে” শরীরে নয়, ভাবাটাও অযৌক্তিক মনে করি না। তবে অবশ্যই নিজের সীমানাটা নিজেকেই, নিজের জ্ঞান, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা দিয়ে নিরাপদে রাখা জরুরী। মাথায় রাখা প্রয়োজন, আমার ‘দর্শন’ যেন ‘ভণ্ডামি’ তে পরিবর্তিত না হয়।

এ ক্ষুদ্র জীবনে, সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। আনন্দ? তাতো করতেই হবে, জীবনের সার্থকতার জন্যে, জীবনকে এগিয়ে নেবার জন্যে। আমি মনে করি জীবনে আনন্দ করা, সৃষ্টিকর্তার কাছে জীবনের জন্যে শুকরিয়া জানানো সব চেয়ে ভাল রূপ। কিন্তু তার পরেও কিছু ভাবনার কথা আছে। কে আমাকে এ জীবন, এ আনন্দ করার সুযোগ করে দিয়েছে? আমি কি মনে করি? মনে আছে তাঁদের কথা, যাঁদের, সৃষ্টি কর্তার পর, অনেক ত্যাগ, অনেক বিসর্জন, আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে! আমার কি সময় আছে তাঁদের কথা ভাববার? অন্তত কিছু সময়ের জন্যে!

আমি হয়ত, শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের মধুর সময়গুলো স্মরণীয় করবার জন্যে, সামান্য একটু অবকাশ খোজার চেষ্টা করি। হয়ত কিছু দিনের জন্যে অবকাশ যাপন করি কোন পাঁচ তাঁরা’তে। বিছানাতে শুয়েই জানালা দিয়ে দেখি, দেখতে পাই, নীল আকাশ, পাহাড়, সবুজ বন। সুন্দর জীবন, প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া করি। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যে কি ভাবি, আমার মা, বাবা এ মূহুর্তে তাঁদের জানালা দিয়ে কি দেখছে? তাঁদের আকাশটা কি মেঘমুক্ত নীল? না কি, কালো অন্ধকারে ঢাকা? মা, বাবা কি ভাবছে – এ মাসের বাড়ী ভাড়া কোথা থেকে আসবে? বাজার, চিকিৎসা খরচ, শিক্ষা, ছেলে মেয়েদের খরচ? কি ভাবে চলবে এ মাস, সামনের মাস? আয়ের সাথে ব্যয়ের যে বিশাল ব্যবধান। তবুও জীবন চালিয়ে যেতে হয়, মধ্যবিত্তের একটা “ভাল আছি” মুখোশ পরে। আমি কি ধারনা করতে পারি – আমার এ পাছ তাঁরা’র অবকাশ (হতে পারে অন্য কোন তহবিল থেকে আসা), এ প্রশান্তি দেখে, সৃষ্টিকর্তা বা মা, বাবা পুলকিত বোধ করবেন? আমার মা, বাবা কি তাঁদের সমস্ত জীবনেও আমার মত একটি অবকাশের প্রাপ্য নয়?

সন্তানের সুখে, আনন্দে সব পিতা মাতাই খুশী – তবুও সৃষ্টির মন কি সৃষ্টি কর্তা পড়তে জানেন না!

আমার মনে আলো দাও প্রভু। যে আলোতে আমি পাব সৃষ্টি, স্রষ্টাকে ভালবাসার প্রেরণা।

আমায় যদি সে ভালো না বাসে
পায়ে ধরিলেও বাসিবে না সে

উপরের লাইন দু’টি রবীন্দ্রনাথের এবং ব্যাখ্যার খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আরও কতটা করলে, মা, বাবা, দাদা, দাদী, নানা, নানী আমার সত্যিকারের ভালবাসা পাবে?

সবাই যে আমার ভালবাসা এখনো চায়।

করিম আলি
ক্যানবেরা, ২২ এপ্রিল ২০১৪


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment