ল্যাম্প পোস্টের নিচে সূর্যোদয়
রাত ৯ টা। উত্তরা ১২ ও ১৩ সেক্টরের জনপথ রোড। প্রশস্ত রাস্তা, সবাই চিনে সিটি কর্পোরেশন ময়লার ডাম্পিং এলাকা হিসেবে। রাস্তার অপর পাশে হঠাৎ চোখ আটকে গেল।
দুটো বাচ্চা ছেলে গভীর মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে ফুটপাতে সোডিয়াম লাইটের হলুদ ঝাপ্সা আলোয়। ওদের শরীরের ভাষা বলে দিচ্ছিল ওরা পড়ালেখায় কতটুকু নিমগ্ন। অনেকক্ষন খেয়াল করলাম রাস্তার গাড়ির শব্দ বা পথচারীর আনাগোনা কোন কিছুই তাদের এই নিমগ্নতা ভাঙ্গনের কারণ হচ্ছে না। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম একজনের নাম রাজু। আর একজন আমি যেতে যেতেই চলে গেল।
রাজু রাস্তার পাশের ঐ ঝুপড়ি ঘরে একা মায়ের সাথে থাকে। বাবা নেই। ক্লাস টু তে পড়ে। খুব বুদ্ধিদীপ্ত, স্মার্ট কথাবার্তা এবং অসম্ভব বিনয়ী। রাস্তার পাশের একটি বাচ্চা ছেলের মুখে এত শুদ্ধ উচ্চারন দেখে মুগ্ধ হলাম। বাসায় একটি মাত্র কুপি, তাতে মা অন্য কাজ করেন বলে রাতের বেলা রাস্তায় এসে লাইটের আলোয় পড়ালিখা করতে হয়।
তাদের ঠিক পিছনে আলকোজ্জল আলিসান দালানের সারি। মনে আসল ঐসব দালানে বকে যাওয়া সন্তানদের চিন্তায় মা-বাবা নির্ঘুম রাত কাটান। সর্বস্ব দিয়েও একটি সন্তান মানুষ করতে পারেন না। রাজুকে দেখে তাঁর জন্য দীর্ঘশ্বাস নয় বরং গর্বিত হলাম যে একটি লাইট পোস্টের নিছে একটি সূর্যের দেখা পেলাম।
চেতনা জুড়ে অদ্ভুত এক সুখানুভুতি এনে দিল এই আলোর প্রদীপটি। আসার সময় এত সুন্দর করে Thank You বলল যে এখনও সেই মিষ্টি শব্দের রেশ কানে বাজে। মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো নেড়ে দিয়ে বাসায় ফিরলাম আর মনে মনে গাইছিলাম –
ও আলোর পথযাত্রী এযে রাত্রি এখানেই থেম না।
সুত্রঃ realtya2z.com