রুশনারা-টিউলিপরা প্রবাসে কেন করেনা বাংলাদেশি রাজনীতি ?
লেটেস্ট স্ক্যান্ডালের ভিডিও ফুটেজটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে সুপ্রাচীণ রোমান সভ্যতার পাদপিঠ রোম নগরী থেকে। বাংলাদেশের বিশেষ রাজনৈতিক দলের ইতালিস্থ নেতা-কর্মীরা ২১ এপ্রিল রাজধানীর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার একটি মিলনায়তনে যে তুলকালাম ঘটালেন, তাতে দূর প্রবাসে বাংলাদেশের ইমেজ আবার নতুন করে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। দলীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত শাহাদৎ হোসেনের উপস্থিতিতে দফায় দফায় চলে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি। বারবার মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছিল, দুই মিনিটের মধ্যে আপনারা সবাই না বসলে সব শেষ, যদিও দেশের মান-সম্মান তখন আর অবশিষ্ট ছিলো না কিছুই।
মারামারি থামাতে এও বলা হচ্ছিল, পুলিশ ডেকে এখন আপনাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেবো। যিনি এই হুংকার দিচ্ছিলেন তিনি হয়তো জানতেনই না যে, পুলিশ এলে যে তাকেই আগে ধরতো, ‘সো কল্ড’ নেতাদের ভাগ্যেই জুটতো রোমের ‘নাজিম উদ্দিন রোড’। বিশেষ কোন একটি দল নয়, বাংলাদেশের প্রধান দুই দলেরই নেতা-কর্মীরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে আজ সমভাবে অপরাধী, লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তির বারোটা বাজানোর জন্য। গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া রকমারী স্ক্যান্ডাল থেকে মুক্ত নয় লন্ডন নিউইয়র্ক টোকিও এমনকি পবিত্রভূমির বন্দরনগরী জেদ্দাও। শহীদ মিনারকে কলংকিত করা, হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি, গ্রেফতার এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলা পলিটিক্সের করাল গ্রাসে বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশি সেখানেই আজ বিভাজন। কিন্তু এভাবে আর কতকাল ?
বিদেশ বিভুঁইয়ে রাজনীতির নামে গ্রুপিং, মারামারি, ভিলেজ পলিটিক্স যখন জয়জয়কার তখন বাধাগ্রস্ত হয় ইন্টিগ্রেশন, বিনষ্ট হয় বাংলাদেশের সুনাম। প্রবাসে রাজনীতি যদি করতেই হয়, তা হতে হবে মেইনস্ট্রিম পলিটিক্স মানে যে যেদেশে বসবাস করেন ঐ দেশের রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে রুশনার আলী, টিউলিপ সিদ্দিকীদের পথে হাঁটা। কুলিয়ে উঠতে না পারলে তথা সম্ভব না হলে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি করাই শ্রেয়। রুশনার আলী, টিউলিপ সিদ্দিকীরা কি পারতেন না দূর প্রবাসে ‘বাংলা পলিটিক্স’র জন্য নিজেদের সব মেধাকে উজাড় করে দিতে ?
উচিত কথা বললে অনেকেরই ভালো লাগবে না তা জেনে এবং ইতালিতে ১৯ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দলীয় ব্যানারে যেসব কর্মসূচী হয়ে আসছে বছরের পর বছর, তার জন্য প্রশাসনের অনুমতিটি কিন্তু সংশ্লিষ্ট দলের ব্যানারে কোনদিনই নেয়া হয়নি, নেয়ার সুযোগও নেই। অনুমতি নেয়া হয়ে থাকে ভিন্ন কোন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে। তার মানে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে। প্রশাসনকে বোঝানো হয় আমরা আমাদের কালচারকে তুলে ধরছি। বিভাজনের এই কালচার অবশ্য আজকাল প্রশাসনও ধীরে হলেও বুঝতে শুরু করেছে।
শুধু ইতালি কেন, যে কোন দেশের পেশাদার আইন বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞেস করলেই আগ্রহী যে কেউ নিশ্চিত হতে পারেন, ইতালি বা ইউরোপের এমনকি বিশ্বের যে কোন দেশের সংবিধান বা আইন তার নিজ ভূখন্ডে ভিনদেশের রাজনীতি চর্চা অনুমোদন করে কি-না ? এই ইস্যুতে পুরো ইউরোপে একই আইন বহাল আছে বছরের পর বছর। কমিউনিটি ইভেন্ট কাভার করার সুবাদে গত ৮ বছরে ইউরোপের ২২ টি দেশের ৭০টির বেশি সিটিতে বাংলাদেশ কমিউনিটির সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে গিয়ে অনেকটা দেরিতে হলেও আজ সুযোগ হয়েছে ইউরোপ জুড়ে কমিউনিটির মূল সমস্যা তথা সমস্যার গভীরে হাত দেবার। সময়ে সময়ে বিভিন্ন দেশের বেশ ক’জন শীর্ষ আইন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়েই বলছি, প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি শতভাগ অবৈধ, অসাংবিধানিক, আইন বহির্ভুত।