মোদী করে বাড়াবাড়ি? মোদী নিয়ে কাড়াকাড়ি!

মোদী করে বাড়াবাড়ি? মোদী নিয়ে কাড়াকাড়ি!

১।

ভারতের সদ্যজাত কান্ডারী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে সমালোচনার থেকে বিরূপ আলোচনাই বেশি হয়। বিরূপ আলোচনা সত্বেও বিপুল ভোটে মোদীর জয়যাত্রার অন্যতম প্রধান কারণ হলো কংগ্রেসের সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরা। এছাড়াও ভারতের অগ্রগতির পাগলা ঘোড়ার হঠাত ঝিমিয়ে পরার পিছনে কংগ্রেসের কৌশল ব্যর্থতাকেও অন্যতম কারণ বলেও বিশ্লেষকেরা মনে করে থাকেন।

কাজেই মোদী কট্টর ধর্মপন্থী, মোদী অতীতে এই করেছে, মোদী সেই করেছে বিস্তারিত জানার পরও ভারতের জনগণ “পরিবর্তনের” আশায় জেনেশুনে মোদীকে বেছে নিয়েছে। ভারতের “আচ্ছে দিন আ গেয়া” অথবা “বুড়ে দিন আ গেয়া”” সেটা আগামী দিনগুলোতেই প্রমান হবে। অথবা অন্যভাবে বলা যায় সময়ই প্রমান দেবে ভারতের জনতা জেনেশুনে “মোদী বিষ” পান করল নাকি কংগ্রেসের রাহু থেকে মুক্তি পেল!

কিন্তু ভারতের প্রাক-নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর খুঁটিনাটি সব কিছু নিয়ে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোও বেশ চিন্তিত। বিশ্বায়নের যুগে অর্থনৈতিক কারণে একে অপরের উপর নির্ভরশীলতাই মূলত এর কারণ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভারত ও চায়নার অর্থনৈতিক বিভিন্ন পলিসির দিকে অন্যান্য দেশগুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে।

বিশেষ করে বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ভারতের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পলিসি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ মানুক আর না মানুক এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভারতের বিভিন্ন পলিসির উপর অনেকাংশেই আমাদের অর্থনৈতিক পলিসির বাস্তবায়ন কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করে।

ভারতের একগুয়েমির কারণে আটকে যাওয়া পানি, কিংবা ২০০৭-২০০৮ এর দিকে সিডরে আক্রান্ত বাংলাদেশে সাময়িক চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বেড়ে জনগনের সীমাহীন দুর্ভোগ, কিংবা আমাদের বাম্পার ধানের ফলনের সময় হঠাত করে ওদের দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক কমিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করে দেয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি শত শত কারণ দেখানো যাবে
যেখানে ভারতের নিজের স্বার্থের জন্য নেয়া পলিসির কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

একারণেই বাংলাদেশেও মোদীকে নিয়ে আশা-হতাশার নানা কথা ভারতের নির্বাচন শুরুর অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। মোদী অলরেডি তার নির্বাচনী ওয়াদায় বাংলাদেশ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে এদেশে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। যদিও বিজেপির বিভিন্ন নেতারা মোদীর বাংলাদেশ নীতিতে ভয়ের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করছেন কিন্তু আদৌ কি কেউ আশ্বস্ত হতে পারছে?

ক্ষমতার চেয়ারে বসেই নাকি মোদী সরকার ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে বিশেষ দপ্তর দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করবে এমন খবর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বাতাসে ভাসছে। এই অনুপ্রবেশকারী দেশের তালিকায় সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের যে নাম আছে তাও আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি।

অবৈধ প্রবেশকারীদের ঠেকাতে কঠোর অবস্থান মোদী সরকারের নির্বাচনী প্রতিজ্ঞাসমূহের মধ্যে অন্যতম। কাজেই এই প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে তারা পদক্ষেপ নেবে এটাই তো স্বাভাবিক।

অবৈধ প্রবেশকারীদের ঠেকাতে বর্ডারে কড়াকড়ি পৃথিবীর সেব দেশেই আছে। মালয়েশিয়ার জঙ্গলে দিনের পর দিন লুকিয়ে থাকা কঙ্কালসার অনুপ্রবেশকারীকে জেলে ভরে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো, তুষারের উপর দিয়ে দিনের পর দিন হেঁটে ইওরোপের কোনো দেশে প্রবেশে বাঁধা কিংবা নৌকায় করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অন্যকোনো দেশের কুলে পৌছালেও সেই দেশে প্রবেশের অনুমতি কারোরই মেলে না।

সেক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়া ভারত যদি অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে কঠোর মনোভাব নিয়েও থাকে তাতে, ভারতের দোষের কিছু নেই। আর ভারতের এই কঠোরতার কারণে বাংলাদেশ কেন উদ্বিগ্ন হবে এটা সত্যিই বোধগম্য নয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুন-খারাবি করেই বাংলাদেশের দাগী আসামীরা ভারতে পালিয়ে যায়। এছাড়াও বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়েও হিন্দু ধর্মালম্বী অনেকেই ভারতে যাবার কথা চিন্তা করে। সন্ত্রাসী দাগী আসামী বা রায়টের কারণে একটি দেশের নাগরিক অন্য দেশে যেতে চাইলেই, অন্য সেই দেশ মেনে নেবে কেন?

ঠিক যেমন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ কঠোরতার আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথম দিকে দুই লাখের মত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ মানবতার খাতিরেই হোক, আর দাতাগোষ্ঠির চাপেই হোক আশ্রয় দিয়েছিল। সেই রোহিঙ্গারাই এখন এদেশে সিন্দাবাদের ভুতের মত চেপে বসেছে।

বিভিন্ন সময়েই রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের খবর আমরা পত্রিকায় দেখতে পাই। এমনকি গলাকাটা পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক সেজে বিদেশের মাটিতে বসেও তারা নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে এদেশের নাম ডুবিয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ সরকার ক্রমঅগ্রসরমান দেশ মায়ানমার অভ্যন্তরীণ সমস্যার শিকার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোরতার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

কাজেই ভারত যদি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে কঠোর হয়, তাতে আমাদের আদৌ উদ্বিগ্ন হবার কিছু আছে কি? বরং আমাদের পানি বন্টন, ট্রানজিট, আমদানি-রপ্তানী, বর্ডার পলিসিসহ আনুসঙ্গিক সকল ব্যাপারে ভারতের নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার অনেক কারণ আছে বৈকি।

২।

পত্রিকা পড়েই জানতে পারছি, মোদীকে নিয়ে বিএনপির সীমাহীন উচ্ছ্বাস। বিএনপির জনাব ফখরুলের হাবভাব দেখে মনে হবে যেন মোদী বিএনপির নিজস্ব সম্পদ। অথচ এই মোদী যে আমাদের জন্য বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথার প্রধান কারণ হতে পারে, বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণ কম বেশি উপলপ্ধি করে।

বিএনপিকে সর্বদা ভারতের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে দেখি। আওয়ামিলিগ ক্ষমতায় এলে নাকি ভারতের কাছে দেশ বিক্রি হয়ে যাবে এমন কথা বিএনপির নেতাদের মুখে শুনতে শুনতে বড় হলাম। এহেন ভারত বিদ্বেষী কি মনে করে মোদীকে তাদের “ভাই” মানছে বোঝা বড় দায়!

ভারতের কাছ থেকে না আওয়ামিলীগ না বিএনপি কেউ কোনো সুবিধা আদায় তো দুরে থাক, বরং দাদাদের আমরা আজীবন তোষামোদ করেই গেলাম কিছু পাওয়ার আশায়। এখন সময় এসেছে মেরুদন্ড সোজা করার। মোদী নিয়ে কাড়াকাড়ি না করে, মোদীর ভবিষ্যত বাড়াবাড়ি কিভাবে রুখে দেয়া যায় সে বিষয়ে সকলকেই ভেবে একতাবদ্ধ হতে হবে


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment