বিশ্ব তোলপাড়, ভারত তোলপাড় মোদি আর বিজেপি ক্ষমতায় আসলে কি হবে?

বিশ্ব তোলপাড়, ভারত তোলপাড় মোদি আর বিজেপি ক্ষমতায় আসলে কি হবে?

বিশ্ব তোলপাড়, ভারত তোলপাড় মোদি আর বিজেপি ক্ষমতায় আসলে কি হবে? বিশ্বের সর্ববৃহত গনতন্ত্রের দেশ ভারত কি গনতন্ত্রের সহায়তায় এক উগ্র হিন্দু সাপম্রদায়িক দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে? ভারতের হিন্দুরা কি উগ্র সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঝুকছে?

বাংলাদেশেও এই তোলপাড়ের ঢেউ লেগেছে, লাগতে বাধ্য। বাংলাদেশের সংখ্যগুরুরা সংকিত ভারতের বাংলাদেশ নিতি আরো বৈরি আর বৈষ্যম্যমুলক হবে ভেবে, আর সংখ্যালঘুরা সংকিত যে বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ বেড়ে যাবে আর তা প্রতিফলিত হবে ঘরের কাছের সংখ্যালঘু বিদ্বেষে।

ভারতিয় সাধারন হিন্দুরা, তথা সংখ্যাধিক্য নিচু বর্নের হিন্দুরা সাধারনত সাপ্রদায়িক নয়, যেমন নয় বাংলাদেশের নিচু বর্নের/শ্রেনির হিন্দুরা এবং মুসলমানেরা; এবং এমনকি ভারতের নিচু শ্রেনির আতরাফ মুসলমানেরাও সাধারনত সম্প্রদায়িক নয়।

বিজেপি এবং তার সহযোগি হিন্দুভাতা সংঘটনগুলি মুলত উচ্চবর্নের হিন্দু ব্রাহ্মন আর ক্ষত্রিয় গোষ্ঠির সঙ্ঘঠন, তার সাথে যোগ দিয়েছে ভারতের বানিয়া শ্রেনি। তারাই ভারতে তাদের হাজার বছরের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখতে এবং মুসলিম শাসনের পুর্ববর্তি পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন থেকেই মুসলিম বিরোধি সাম্প্রদায়িকতা উস্কিয়ে দিচ্ছে। হিন্দু পুনরুত্থানের মদকতায় নিচু জাতের/শ্রেনির হিন্দুদের উচ্চবর্নের হাতে তাদের যুগ যুগের দলিত শোষিত অবস্থান ভুলিয়ে উচ্চবর্নের হিন্দুরা আবারো তাদের ব্যাবহার করছে।

ভারতের নিচু জাতের/শ্রেনির হিন্দুরা যে বিজেপির উচ্চবর্নের হিন্দুদের উদ্দেশ্য একেবারেই বুঝতে পারছেন না তা নয়। তারা এখন উচ্চবর্নের হিন্দুদের হাতে তাদের যুগ যুগের দলিত শোষিত অবস্থান সম্পর্কে অনেক সচেতন; আর এরই প্রতিফলনে ভারতের জনবহুল উত্তরাঞ্চলের হিন্দি বেল্টে উত্থান হয়েছে মায়াবতি আর যাদবের মত নিন্মবর্নের নেতৃত্বে নিন্মবর্নের হিন্দু আর আতরাফ মুসলমানের রাজনৈতিক শক্তির। এই শক্তি এখনো অপরিপক্ক। তাই অর্থনিতিক সুবিধা আর দাঙ্গার মাধ্যমে মুসলমানদের জমি সম্পত্তি দখলের লোভে অনেক নিন্মবর্নের হিন্দুরাও বিজেপির দিকে ঝুকছেন (যার বিপরিতটা হচ্ছে বাংলাদেশে), আর তাদের অনেক নেতারাও হাওয়া বুঝে ক্ষমতার ভাগ পেতে বিজেপির দিকে ঝুকছেন।

এরকম এক হিন্দুভতার পুনরুত্থান হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫ শতাব্দিতে এক ব্রাহ্মন সেনাপতি পশুরাম সুঙ্গার বিদ্রোহে শেষ মৌর্য্য সম্রাট ব্রিহাধার্তার খুন হওয়া ও ভারতের মৌর্য্য সম্রাজ্যের পতনের পর। মৌর্য্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত জৈন ধর্ম গ্রহন করেছিলেন আর সম্রাট অশোক কালিঙ্গার যুদ্ধের ভয়াবহতায় অনুতপ্ত হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। তার পরপরই সারা ভারতে এবং ভারত ছাড়িয়ে বহু প্রতিবেশি দেশে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাহ্মনেরা জাত পাত ব্রাহ্মন বিহিন ব্রাহ্মন কতৃত্বহিন বৌদ্ধ সমাজকে কোনদিনই মেনে নিতে পারে নি। ব্রাহ্মন সেনাপতি পশুরাম সুঙ্গার বিদ্রোহে শেষ মৌর্য্য সম্রাট ব্রিহাধার্তার খুন হওয়া ও ভারতের মৌর্য্য সম্রাজ্যের পতনের পর শুরু হয় ব্রাহ্মনেবাদের পুনরুত্থান আর বৌদ্ধ ধর্মালম্বি ও বৌদ্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে চরম প্রসিকিউশন – ভারতের বেশিরভাগ বৌদ্ধবিহারই একে একে ধ্বংস করা হয় অথবা পরিত্যাক্ত হতে বাধ্য হয় – যার পরিনতিতে একসময় বৌদ্ধ ধর্মের জন্মভুমি ভারত থেকে বৌদ্ধ ধর্ম একরকম নির্বাসিত হয়ে যায়। এই বাংলাদেশেও পাল রাজাদের আমল পর্য্যন্ত (১১৫৯ খৃষ্টাব্দ) বেশিরভাগ জনসাধারন ছিল বৌদ্ধধর্মালম্বি। সেন রাজাদের আমলে এই দেশের বেশিরভাগ বৌদ্ধধর্মালম্বিকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়। তবে এই বাধ্যতামুলক জাত পাতের ব্রাহ্মনের হিন্দু ধর্ম পুর্ববঙ্গে তথা আজকের বাংলাদেশে কখনই গভির শেকড় গাড়তে পারে নাই – যার পরিনতিতে বাংলার শাসনে মুসলিম শক্তির আগমনের পর থেকেই এর বেশিরভাগ মানুষই পুনরায় ধর্মান্তরিত হয়ে জাত পাত ছেড়ে ধিরে ধিরে মুসলমান হয়ে যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে প্রায় ২০০০ বছর পরে বিজেপি আর মোদি কি সাম্প্রদায়িকতা আর মুসলিম প্রসিকিঊশনের মাধ্যমে হিন্দুভাতার দির্ঘস্থায়ি পুনরুত্থান ঘটাতে পারবে?

আমার মনে হয় মোদি আর বিজেপি কিছুদিনের জন্য ভারতে এবং এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে সাধারন মানুষের জন্য অনেক ভোগান্তি বাড়ালেও, তা হবে ক্ষনস্থায়ি। এই বিশ্বায়নের আর যোগাযোগের যুগে নিন্মবর্নের হিন্দুরা অনেক সচেতন এবং ব্রাহ্মনের চাল যে তাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য নয় তাও তার ধরে ফেলবেন। আর সারা বিশ্ব, ভারতিয় মুসলমান আর মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়াও মোদি আর বিজেপির জন্য সুখকর হবে না।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment