বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং জিয়ার ঘোষণাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা – ইউরোপের প্রথম বাঙালি এমপি ড. কস্তা

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং জিয়ার ঘোষণাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা – ইউরোপের প্রথম বাঙালি এমপি ড. কস্তা

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁদের অবদান অপরিসীম, এমন যে কারো কফিনের ওপর ‘রাজনীতি’ না করার জন্য বাংলা মায়ের প্রতিটি সন্তানের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন ইউরোপের প্রথম বাঙালি এমপি ড. হিউবার্ট রঞ্জন কস্তা। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এই পোলিশ এমপি মনে করেন, ‘‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যারা কটাক্ষ করেন, তারাই প্রকৃত স্বাধীনতা বিরোধী।’’

৪ জুন বুধবার এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ড. কস্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ফ্রন্টলাইনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজ আমি দুঃখিত লজ্জ্বিত ব্যথিত মর্মাহত, যখন দেখি আমার দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল একাত্তরের মূল চেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রতিপক্ষের নেতার চরিত্র হননে।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘ইতিহাস তার আপন গতিতেই চলেছে এবং আগামীতেও চলবে। আমরা যাঁরা একাত্তরে জীবন বাজি রেখেছিলাম নিঃস্বার্থভাবে, ইতিহাস নিয়ে আমাদের হাইকোর্ট দেখিয়ে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমান দু’জনের যে কাউকে কোনভাবেই খাটো করার ন্যূনতম অবকাশ নেই।’’ যারা এসব করছে তাদের ইতিহাস বিকৃতির অপকর্ম সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন ড. কস্তা।

ইউরোপের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি বংশদ্ভোত এমপি তিনি। মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে তাঁর সাফল্যের পথ ধরেই পরবর্তিতে ইউরোপে এমপি হয়েছেন নরওয়ের সায়েরা খান ও যুক্তরাজ্যের রুশনারা আলী। ড. হিউবার্ট রঞ্জন কস্তার জন্ম ১৯৫৩ সালে ঢাকার অদূরে কালিগঞ্জে। বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকায়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হবার কিছুদিন পরই স্কলারশিপ নিয়ে পোল্যান্ডে চলে আসেন তিনি। পেশায় চিকিৎসক ড. কস্তা ২০০৫-২০০৭ পোল্যান্ড পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। জার্মান সীমান্তবর্তী ব্রসলাভ নগরীতে তাঁর বসবাস।

একাত্তরের প্রসঙ্গ উঠতেই চোখে জল আসে এই সাদা মনের মানুষটির। অনেক সময় তিনি চান ভুলে যেতে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতি। কারণ হিসেবে বললেন, ‘‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সবসময় গণতান্ত্রিক থাকবে এবং কখনোই স্বৈরতন্ত্রের মুখোমুখি হবে না, এই ছিলো একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গত ৪ দশকে হতাশ হয়েছি বারে বারে।’’ সাবেক পোলিশ এমপি ড. কস্তা দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং তাঁর ক্যারিশমাটিক লিডারশিপ যুদ্ধের ময়দানে আমাদের এনার্জি দিয়েছিল শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার। বঙ্গবন্ধুর শোকাবহ মৃত্যুই ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সবচাইতে বড় ট্র্যাজেডি।’’

স্বাধীনতা সংগ্রামে ২ নং সেক্টরে সক্রিয় অংশ নেন পুরনো ঢাকার ছেলে ড. কস্তা। স্মৃতির পাতা থেকে আরো কিছু সত্য উচ্চারণ তাঁর, ‘‘জিয়াউর রহমান ছিলেন আমার সেক্টরের কম্যান্ডার-ইন-চিফ। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখেছি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর অসীম সাহস আর বীরত্বগাঁথা ভূমিকা। তাছাড়া কালুরঘাট থেকে সেদিন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পেরেছিলাম, যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং হানাদারদের শায়েস্তা করা পর্যন্ত তা চলবে।’’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের প্রতি অন্তর থেকে বিশেষ শ্রদ্ধাশীল ড. কস্তা আরো বলেন, ‘‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন পলিটিক্যাল লিডার আর জিয়াউর রহমান ছিলেন মিলিটারি লিডার। যুদ্ধের ময়দানে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি সত্বেও আমরা ভাবতাম, বঙ্গবন্ধু নেই তো কি হয়েছে, জিয়াউর রহমান তো আছে আমাদের।’’ লাখো শহীদের রক্তে কেনা বাংলাদেশে আজ যারা নতুন প্রজন্ম তারা মুক্তিযুদ্ধের এই কঠিন সত্য ইতিহাস সবসময় মনে রাখবে, এই আশাবাদ ইউরোপের প্রথম বাঙালি এমপি ড. হিউবার্ট রঞ্জন কস্তার।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment