এভরি ক্লাউড হ্যাজ এ সিলভার লাইনিং
আমার খুব পছন্দের একটি ইংরেজি ফ্রেজ হলো আমার আজকের লেখাটির শিরোনাম। সাদা বাংলায় বলা যায়, খুব খারাপ অবস্থার মধ্যেও থাকে ভালো কিছু। তাই কখনো আশাহত হতে নেই। যেহেতু আমি কখনই নৈরাশ্যবাদীদের দলে পরিনা, কাজেই আমি অতি দুঃসময়েও আশার আলো দেখতে পাই।
দেশের এই গুমোট রাজনৈতিক অবস্থার মাঝেও হাসিনা-খালেদা দুজনের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকান্ডে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
১।
১৫৩ আসনে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে নজিরবিহীন ন্যাক্কারজনক নির্বাচনের দ্বারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান রক্ষা করেছেন, কিন্তু সেইসাথে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে নিন্দিত হয়েছেন। নির্বাচনের আগে দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচনের পর এই সংসদ ভেঙ্গে নতুন নির্বাচন দেবেন এমন কথা শেখ হাসিনা বললেও, এখন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে শেখ হাসিনার বাহিনী আগামী পাচ বছরের আগে সংসদ থেকে নামবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এই যখন হতাশাজনক রাজনৈতিক অবস্থা, তখন হঠাতই এক ঝলক আশার আলো নিয়ে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা কর্তৃক নির্বাচিত ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা।
দেখা যাচ্ছে যে, আগের সংসদের মন্ত্রিসভার ৩৫ জনই বিভিন্ন কারণে বাদ পড়েছেন। তবে সব থেকে যে কারণ বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তা হলো বাদ পড়া মন্ত্রীদের সীমাহীন দুর্নীতি ও নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা।
আওয়ামিলীগ দুর্নীতিকে সীমাহীন প্রশ্রয় দিয়েছিল। আবুল হোসেনের দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতার পরেও তাকে দেশপ্রেমিক ঘোষণা করায় আমরা জনগণ নিরাশায় ডুবে যেতে থাকি। সুরঞ্জিত সেনের ঘুষ কেলেংকারী, মখা আলমগীরের দায়িত্বহীন কথাবার্তা সেইসাথে দিপু মনির মত অদক্ষরা যখন মন্ত্রী আসন অলংকৃত (!) করেছিলেন, তখন আওয়ামী উন্নয়নের সদিচ্ছা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকে বৈকি!
আওয়ামিলিগের মন্ত্রীদের অনেকেই যে, অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এ কথা পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন সময় প্রমানসহ উত্থাপিত হবার পরেও দু-একজনকে শুধু সেসময় সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সব থেকে অদক্ষ মন্ত্রী দীপু মনি কি জাদুবলে পুরো সময় মন্ত্রিত্বে ছিলেন, তা আসলে এখন আর কারো অজানা নয়। তারপরও যখন দীপুমনিদের মত খুঁটি শক্ত মন্ত্রীরা নতুন মন্ত্রীসভায় জায়গা পান না, তখন আমরা আশার আলো দেখি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নির্বাচনোত্তর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কোনো দুর্নীতিবাজের দায়িত্ব তিনি নেবেন না, দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের বিপুল সম্পদ আহরণের উৎস খুঁজে বের করতে যখন দুর্নীতি দমন সংস্থা তদন্ত করবে বলে আমরা জানতে পারি, তখন আমরা আশার আলো দেখতে পাই।
অতীতের ভুল শুধরে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আওয়ামী অঙ্গীকার আমাদের নিরাশার মাঝে আশার আলো দেখায়।
২।
নির্বাচনের আগে পিছে আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর খেলা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব ছারখার করে দেয়া, হরতাল অবরোধে যখন আমরা সবাই বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই আন্দোলনের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে আশা জাগানিয়া কিছু শুনতে পেলাম।
আন্দোলনের নামে চারিদিকে সংগঠিত জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও নাশকতার যাবতীয় দায়ভার যখন এসে পরছে বিএনপির ঘাড়ে, তখনি বিএনপি নেত্রীর পক্ষ থেকে জামায়াতের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী- “জামায়াত-শিবিরের নাশকতার দায়ভার বিএনপি আর নেবে না”, এবং সেই সাথে কর্মসূচির নামে তাণ্ডব, নৈরাজ্য ও সহিংসতা ছাড়তে জামায়াতকে কড়া নির্দেশ দেয়ার মাঝে আমরা বিএনপি নেত্রীর সুমতির লক্ষণ দেখতে পাই।
বিএনপির নেতাদের মাঝে ক্ষতিকর জামায়াতকে ছেড়ে রাজনীতি করার যে মানসিকতা দেখা যাচ্ছে সত্যি তা অনেক প্রশংসনীয়। এভাবে একতরফা নির্বাচন না হলে,জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার দেশী-বিদেশী চাপ ও সেইসাথে জামায়াতের সহিংস রাজনীতির ক্ষতিকর প্রভাবে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন হবার উপক্রম নিয়ে বিএনপির আদৌ টনক নড়ত কি না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
আমরা আশা করতেই পারি যে, বিএনপি খুব শীঘ্রই চরম উগ্র জামায়াতকে ত্যাগ করে শুদ্ধ রাজনীতি করবে।
৩।
ইদানিং প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী নেতারা বারবার বক্তৃতায় বলে বেড়াচ্ছেন যে, বিএনপি জামায়াতকে ছাড়লেই নাকি তারা আলোচনায় তথা সংলাপে বসবেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়াও পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে বারবার আলোচনা করার তাগিদ দিচ্ছেন।
কাজেই বিএনপি নেত্রী জামায়াতকে ত্যাগ করার মধ্য দিয়েই সব কূল রক্ষা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যেই সংবিধান নিয়ে এত ক্যাচাল তা যেনতেন নির্বাচন দ্বারা অলরেডি রক্ষা হয়েছে। সহিংস জামায়াতকে নিয়ে জনমনে যে অশান্তি, তা বিএনপি কর্তৃক জামায়াতকে বর্জন ও আওয়ামী কর্তৃক নিষিদ্ধকরনের দ্বারা চিরতরে নির্মূল করা যেতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে শুধু মাত্র জামায়াতকে ত্যাগ করলেই যদি পুনরায় সকলের অংশগ্রহনে একটি নির্বাচন হয়, তবে জামায়াতকে ত্যাগ নয় কেন?
জামায়াতকে ত্যাগ করে নতুন করে নির্বাচন হবে। জনগণ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের জন্য সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, এটাই তো এখন সময়ের দাবী। এত এত খারাপ অবস্থার মাঝেই তো দেখি আশার আলো। তাইতো মনে মনে শক্তি যুগিয়ে আওড়িয়ে যাই, এভরি ক্লাউড হ্যাজ এ সিলভার লাইনিং।