এই সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার দেশ
সজিব ওয়াজেদ জয়
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফরে ব্যস্ত থাকায় কয়েকদিন পোস্ট দিতে পারিনি। একটু আগে সিলিকন ভ্যালি থেকে ফিরলাম। সেখানে আমাদের সফ্টওয়্যার এসোসিয়েশন বেসিস আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আইটি শিল্পকে আরও উঁচু স্তরে নিয়ে যেতে বক্তব্য রেখেছি । তবে অন্য একটি ঘটনা আমাকে গভীরভাবে আহত করেছে।
আমাদের সবচেয়ে বড় বাংলা পত্রিকা ‘প্রথম আলো’ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর মাধ্যমে তারা একাত্তরের ত্রিশ লাখ শহীদকে অপমান করলো। আমি মনে করি, এটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে বরখাস্ত করা উচিৎ।
যাই হোক, এটা আমাকে খুব অবাক করেনি। আপনি যদি ২০০৭-২০০৮ সালের কথা মনে করেন, তাহলে দেখবেন প্রথম আলো তখন খোলামেলাভাবে সামরিক স্বৈরশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। প্রথম আলো আবারও প্রমান করলো যে, তারা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
এবার তারা নতুন করে প্রমান করলো, তারা বাংলাদেশেও বিশ্বাস করেনা। চলুন প্রথম আলো বর্জন করি এবং তাদের কাছে এই বার্তা পৌছে দেই, যারাই বাংলাদেশ সমর্থন করে না আমরা তাদের রুখে দিবো ।
আব্দুন নূর তুষার
মোদীর জীবনী নিয়ে ত্যানা প্যাঁচানো বন্ধ করে ইতিহাস বোঝার চেষ্টা করেন ! ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দুটো যুদ্ধ করেছে , একটা বাংলাদেশের সাথে ,আরেকটা ভারত এর সাথে I বাংলাদেশের সাথে ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর , ভারত এর সাথে দুই ফ্রন্ট এ ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর !
পশ্চিম ফ্রন্ট এ আক্রমন করেছিল পাকিস্তান আর পূর্বে আক্রমন করেছিল ভারত ! পাকিস্তানের মরেছিল প্রায় ৪৩৬০ জন সৈনিক আর ভারতের ৯০০০ এর বেশি ! এখন মোদী কে পরিচয় করিয়ে দিতে যে যুদ্ধটির কথা বলেছে সমকাল ও প্রথম আলো , সেটা মোদী নামক লোকটির নিজের দেশের যুদ্ধ , যার মেয়াদ ছিল ১৪ দিন !
এর জন্য প্রথম আলো বা সমকাল কে গালাগাল করার কিছু নাই , কারণ এই জীবনী মোদীর অফিসিয়াল জীবনী , এটা যেভাবে আসবে আই এন এস এর কাছ থেকে সেভাবেই অনুবাদ হবে I
আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধ ৯ মাসের , এর সাথে পাক ভারত যুদ্ধের কোনো তুলনা হয় না, কোনো সম্পর্ক ও নাই , ওই যুদ্ধে ভারত হারলেও কি আমাদের যুদ্ধ শেষ হতো ?
হতো না ! আমরা পালেস্তিনিয়ান দের মত ৬৭ বছর যুদ্ধ করতাম , ৬৭০ বছর যুদ্ধ করতাম !
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার ! গালি পার্টি কেবল প্রথম আলো পড়ে l অন্য পত্রিকাটি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা
নাইI
ডঃ জাফর ইকবাল
জিপিএ পাঁচ ও আনন্দঃ
অন্যদিনের মত সেদিনও আমি আমার অফিসে বসে কাজ করছিলাম। তবে দিনটা যে অন্য আর পাঁচটা দিনের মত নয় সেটা আঁচ করলাম এক অভিভাবকের ফোন পেয়ে। উনি জানালেন তার মেয়ে জিপিএ পাঁচ পেয়েছে। বুঝতে পারলাম মাধ্যমিকের ফল বেরিয়েছে। তবে টিভি দেখলে ততক্ষণে জেনে যেতাম কি হালচাল। কিন্তু ওটা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর মনে হয়, কেমন যেন বাক্সের মত। তাই ওটার দিকে আমি চোখ দিই না। এরপর অবশ্য অনেক ফোন আসতে থাকল। সবারই এক কথা, ‘স্যার, আমার ওমুক জিপিএ পাঁচ পেয়েছে, তার জন্য দোয়া করবেন।’
পত্রিকায় যখন এই ছেলেমেয়েদের হাসিমাখা নিষ্পাপ মুখগুলো আর ভি চিহ্ন দেখি তখন খুব পুলক অনুভব করি। আবার নিরানন্দিতও হয়ে যাই তাদের এই হাসি আর কদিন থাকবে এই ভেবে। এই যে এতগুলো ছেলেমেয়ে জিপিএ পাঁচ পেল তাদের অর্ধেকের বেশিই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাবেনা। আমি জানি সরকার তাদের এই হাসিমাখা মুখগুলো নিয়ে রাজনীতি করছে। কিন্তু আমি রাজনীতির কিছু বুঝি না। কিন্তু এটা বুঝি যে প্রশ্নফাঁস, উদার মানসিকতা আর শিক্ষার মান উন্নয়নে কেবল জিপিএ পাঁচই আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এদের বেশিরভাগই পাস করতে পারছেনা।
একটা মেয়ে আমাকে ফোন করে বলল সে জিপিএ পাঁচ পেয়েছে। আমি খুব খুশি হলাম। তারপর সে বলল আমার লেখা তার খুব ভাল লাগে। আমার সবগুলো লেখাই নাকি সে পড়ে ফেলেছে। এমনকি আমার কলাম গুলোও নাকি সে পড়তে ভুলেনা। কিন্তু সে বেশ করুণার স্বরে বলল স্যার, আমি কি ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সুযোগ পাব না? আমার খুব আশা আমি আপনার ভার্সিটিতে পড়ব। আপনার সাথে দেখা করব, কথা বলব। স্যার, আমার ইচ্ছা কি পূরণ হবেনা? আমি তাকে নিশ্চয়তা দিতে পারিনি তবে আমি তাকে বলেছি, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমার ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। যদিও আমার এই লাগামছাড়া আশাবাদ শোনে আমার কাছের মানুষের অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, আমাকে পাগল বলে। এতে আমি কিছু মনে করিনা। কারণ আমার এই দীর্ঘজীবনে আমার অধিকাংশ আশাই সত্য হয়েছে এবং এবং এর জন্য আমি অনেক সুখে দিন কাটাই। আমি তাকে বললাম, চিন্তা করোনা, আশা রাখ, স্বপ্ন দেখ। আর কেউ না পাক তুমি চান্স পাবেই। মনেরেখ,
সংসার সাগরে সুখ তরঙ্গের খেলা,
আশা তার একমাত্র ভেলা।
মাইনুল রাজু
যে একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করতে আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সে শব্দটা মনে হয় ‘অভিনন্দন’। ইউনুস সাহেব যখন নোবেল পেলেন, তখন যারা ‘টূ’ শব্দটিও করলেন না, উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর তারা সবাই গবেষণায় মেতে উঠলেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে দুনিয়ার সব ব্যাংকের সুদের হার মুখস্থ করে সেগুলো প্রত্যেকটি সুদের হার গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ে কত কম, বিশেষজ্ঞের মত গ্রাফ পাপারে সেটি দেখিয়ে দিলেন তারা। কার কার বাসার টিন খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, সেটারতো মনে হয় একটা ডাটাবেইজও আছে।
এবার আসেন বেশ কয়েক বছর আগের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার মেধা তালিকার কথা। আমাদের সময়ের কথা বলছি। প্রতি বোর্ড থেকে বিশ জন স্ট্যান্ড করতো। তারা দেশের সবচেয়ে মেধাবী স্টূডেন্টদের মধ্যে পড়ে, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু, সেই স্ট্যান্ড করা স্টূডেন্টদের জন্য কি করা হয়েছে? তাদেরকে কি ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি করিয়ে নেয়ার কথা ছিলো না? তাদেরকে কি বিসিএস পরীক্ষার বিদঘুটে ভাইভা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে না গিয়েই, তাদের পছন্দের ক্যাডারের জবটা দিয়ে দেয়ার কথা ছিলো না? সত্যি বলতে কি, আমার ফার্স্ট স্ট্যান্ড করা পরিচিত বন্ধু আছে, চাকুরি খুঁজতে খুঁজতে যে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মানুষজনের ভাবখানা এমন যে, স্ট্যান্ড করসো? আচ্ছা, ঠিক আছে, গুড, ভালো করসো, এখন দূরে সরো। নোবেল পাইসো? আচ্ছা, ঠিক আছে, গুড, ভালো করসো, এখন দূরে সরো।
এখন শুরু হয়েছে A+ আর গোল্ডেন A+ নিয়ে। আমি জানি না সারা বিশ্বের অন্য আর কোনো দেশে ভালো ফলাফল করার পর ছাত্র-ছাত্রীদের এতটা অবহেলা সইতে হয় কি-না। শুধু একটা শব্দ বলবে, ‘কংগ্র্যাচুলেশানস্’; অথচ, সেটা বলতে সবার কত আপত্তি। সেই এক শব্দ না বলে আরো একশোটা কথা বলবে; তাও বলবে না, ‘অভিনন্দন’; তার উপর আবার যুক্তি নিয়ে আসবে “আরে ভাই, তাদের জন্যতো যে জীবনটাই দিয়ে দিতাম, কিন্তু প্রশ্নতো আউট হইসে।” তাদের জন্যই উপরে আমার ফার্স্ট স্ট্যান্ড করা বন্ধুর কথা বললাম। না সরকার, না জনগন, কারো থেকেই কিছু পেলো না। আর, প্রশ্ন আউট হওয়ার দায়তো আমার-আপনার-আমাদের উপর বর্তায়। সে-দায় এইসব ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের না-কি।
যারা A+ আর গোল্ডেন A+ নিয়ে এবারের পরীক্ষায় পাশ করেছে, সন্দেহাতীতভাবে তারা দেশের সবচেয়ে মেধাবী এবং সুযোগ্য ছাত্রছাত্রী। তাদের এবং তাদের পরিবারের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন।