ইউরো পার্লামেন্ট ‘ইলেকশান ডে’ আজ : পরাজয় নেই যে নির্বাচনে
ইউরোপ জুড়ে ‘ইলেকশান ডে’ আজ। অষ্টম ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইউরোপের ২৮ টি দেশের ৪০ কোটি ভোটার তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সুযোগ পাচ্ছেন আগামী ৫ বছরের জন্য ৭৫১ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের। ৪ দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া মূলতঃ শুরু হয় ২২ মে বৃহষ্পতিবার থেকে। এদিন যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসে ভোটগ্রহণ করা হয়। শুক্রবার আয়ারল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকে পোলিং বুথ খোলা থাকে। লাটভিয়া, মাল্টা, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের ভোটাররা ভোট দিতে যান শনিবার।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে আজ রবিবার ব্যালট পেপার হাতে নিচ্ছেন অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, হাঙ্গেরি, ইতালি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেনের ভোটাররা। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতি ৫ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ইউরোপের প্রেস্টিজিয়াস এই নির্বাচন। ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইউরোপিয় ইউনিয়নের বর্তমান জনসংখ্যা ৫০ কোটি ৫৭ লাখ।
জনসংখ্যার আনুপাতিক হারেই ইউরো পার্লামেন্টে বিভিন্ন দেশের আসন বন্টন হয়ে থাকে। সোয়া ৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ জার্মানির জন্য এবছর বরাদ্দ আছে সর্বোচ্চ ৯৯ টি আসন অর্থাৎ দেশটির প্রতি ৮ লাখ ৫৯ হাজার নাগরিকের জন্য ১ জন ইউরো এমপি। অন্যদিকে ৪ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টার জন্য ইউরো পার্লামেন্টারিয়ান যথারীতি মাত্র ৬ জন। নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বিশেষ গুণগত দিক হচ্ছে, এমপি পদপ্রার্থীদের সরাসরি ভোট দেবার সুযোগ নেই ভোটারদের। এক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে সিলেক্ট করতে হয় পার্টিকে। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য আগে থেকেই তাদের প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারাভিযান চালান নিজ নিজ পার্টির জন্য, নিজের জন্য নয়।
চিরায়ত নির্বাচনি ফর্মূলা থেকে ইউরো নির্বাচনের ভিন্নতা এখানেই। দেশভিত্তিক কোটাকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ঝুড়িতে জমা পড়া ভোটের হিসেবে এবং ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় ক্রমানুসারে আগে থেকেই কে কত নম্বরে ছিলেন তার উপর ভিত্তি করেই নিশ্চিত হয় কোন প্রার্থীর ইউরো পার্লামেন্টে যাবার পুরো বিষয়টি। ফলে যে কোন প্রার্থীর সরাসরি পরাজয়ের সুযোগ নেই ইউরো পার্লামেন্ট নির্বাচনে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩ প্রার্থীও যথারীতি একই নিয়ম মেনে ঘাম ঝরিয়েছেন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে।
সুইডেনের বামপন্থী বিরোধী জোট ‘ভ্যান্সতার’র রাজধানী স্টকহলম ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিও আহমেদ প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সুইডেন থেকে। ৮ বছর আগে থেকেই ‘ভ্যান্সতার’ পার্টির স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সুইডিশ-বাংলাদেশি এই তরুন রাজনীতিবিদ, যিনি শিক্ষকতা করেন স্টকহলমের একটি কিন্ডার গার্টেনে। আসছে গ্রীষ্মকালীণ ছুটির পরপরই স্টকহলম সিটি কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসেবে নিজের আসনটি অবশ্য ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন লিও আহমেদ।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুইন্ডন সিটি থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী জুনাব আলী। পেশায় ব্যবসায়ী এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তাঁর নিজ এলাকা সুইন্ডন কাউন্সিলে পর পর দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলর৷ ইউরো নির্বাচনে ফিনল্যান্ড থেকে লড়ছেন বামপন্থী দল ‘ভাসেম্মিস্ত’র প্রার্থী ফারুক আবু তাহের। রাজধানী হেলসিংকি থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী সমুদ্রতীরের কটকা প্রদেশের একটি মেটাল ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত এই ফিনিশ-বাংলাদেশির মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে আবির্ভাব মাত্র ক’মাস আগে।
লিও আহমেদ, জুনাব আলী ও ফারুক আবু তাহের ইউরো পার্লামেন্ট নির্বাচনে আজ এমপি হিসেবে তাঁদের আসন নিশ্চিত করতে পারছেন কি পারছেন না, তার চাইতে মূখ্য বিষয় হচ্ছে ইতিমধ্যেই তাঁরা ইউরোপ জুড়ে বৃদ্ধি করেছেন বাংলাদেশের সুনাম, উজ্বল করেছেন লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি। ৩ জনের কেউই নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত নন। প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চারও ঘোর বিরোধী তাঁরা।
বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতির পেছনে শ্রম-অর্থ-সময় অপচয় না করে ইউরোপের মূলধারার রাজনীতি তথা মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সে সার্থক অংশগ্রণের মাধ্যমেই বাংলাদেশের উন্নয়নে নিজস্ব মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগানো সম্ভব বলে মনে করেন ২০১৪’র আলোচিত এই ৩ ইউরো-বাংলাদেশি।