হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি – আমার কিছু মন্তব্য -১

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি – আমার কিছু মন্তব্য -১

আমি একাধিক পোষ্টে, একে একে হেফাজতের ১৩ দফা দাবির ওপর আলোচোনা করে আমার ব্যক্তিগত মতামত আর সাজেশন উপস্থাপন করছি, এই দাবির সমর্থক এবং বিরোধিতাকারি সবার বিবেচনার জন্য। আমি কোন বুদ্ধিজিবিও নই বা কোন আলেমও নই, আমি আমার সাধারন বুদ্ধি আর যুক্তি তর্কেই আমার মতামত তুলে ধরছি, যা হয়তো বাংলাদেশের বহু সাধারন মানুষের মনেই জেগেছে। আশাকরি সকলেই আমার বক্তব্যকে সেই হিসাবেই ক্ষমসুন্দর আর সহনশিল চোখেই দেখবেন।

১. সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।

এই দাবির বিপরিতে হেফাজতের ব্যাখ্যা শুরু হয়েছে এদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জিবনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা এবং ধর্মিয় চেতনার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে। এব্যাপারে নিজের মনে পরিস্কার হওয়ার জন্য আমার কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আছে হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্যে।

প্রথমত, একজন মুসলমান হিসাবে আমি এবং সকল মুসলমানই বিশ্বাস করে এক এবং অদ্বিতিয় সর্বশক্তিমান আল্লাহয়। আর সে বিশ্বাসের সুত্রেই আমরা নিশ্চয় বিশ্বাস করি যে অন্য ধর্ম্বাবলম্বিরা যে নামেই তাদের ইশ্বরকে ডাকুন না কেন, আমাদের থেকে ভিন্নভাবে বিশ্বাস করুন না কেন – সে আল্লাহ ব্যাতিত আর কেউ হতে পারেন না। এমনকি তথাকথিত নাস্তিকেরাও তাদের ধারনায় আল্লাহ/ইশ্বর/ভগবান অস্বিকার করে যখন সৃষ্টির সব কৃতিত্ব প্রকৃতি বা নেচার বা কোন অদৃশ্য শক্তিতে অর্পন করেন, তখনও তাদের অজান্তেই তারাও কিন্তু এক এবং অদ্বিতিয় সর্বশক্তিমান আল্লাহর কথাই বলছেন – বলতে বাধ্য, কারন বিজ্ঞানের মতেও সব সৃষ্টির নিয়ন্তাও এক এবং অদ্বিতিয় হতে বাধ্য। তাই আমার মতে আল্লাহ বা সর্বশক্তিমানের অবস্থানের ব্যাপারে বিতর্কের কোন অবকাশই নেই, আর সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যালঘিষ্ঠ ইস্যু নিতান্ত্যই অবান্তর।

দ্বিতিয়ত এবং মূল ইস্যু, “সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে” এই দাবির ব্যাপারে মনে হয় আমাদের সুক্ষ্মভাবে অনেক কিছুই ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে।

কাগুজে বা আইনি ব্যাবস্থার মাধ্যমে কি রাষ্ট্রিয়, সামাজিক বা ব্যাক্তি পর্য্যায়েই কি আমরা আমাদের জিবনের প্রতিক্ষনে প্রতিটি কর্মে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস নিশ্চিত করতে পারি বা তা কি কখোনই বাস্তবে সম্ভব? একমাত্র রসুলাল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন মানুষ কি কোনদিন বুকে হাত রেখে বলতে পারবে যে সে তার জিবনের প্রতিটি কর্মে প্রতিটি ক্ষনে একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই কাজ করেছেন। বাকি সব দুর্বল মানুষের পক্ষে সেই লক্ষ্যে পৌছানোর চেষ্টা করা সম্ভব, কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌছানো কি সম্ভব? বোধহয় না, আর কেঊ সে লক্ষ্যে সত্যিই পৌছেছে কিনা তা অন্তর্যামি আল্লাহ ব্যাতিত আর কারো পক্ষে কি তা নিশ্চিত করা সম্ভব? সেই অবস্থায় আজকের জটিল বিশ্বে সংবিধান, আইন আর রাষ্ট্রের মাধ্যমে কি করে সম্ভব “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা, কারন দুর্বল মানুষই তো ঐ সব ব্যাবস্থা পরিচালনা আর বিচার করবে। আমরা কি করে জানবো আর বিচার করবো তাদের নিয়ত আর অন্তরের অন্তস্থলের কথা। বরং সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে, প্রকাশ্যে জাতিগতভাবে ঘোষনা দিয়ে আমরা যদি তা নিশ্চিত করতে না পারি, তবে কি আমরা জাতি হিসাবেই মোনাফেক হয়ে যাব না?

আমরা কি বলতে পারি যে পঞ্চম আগে বাংলাদেশ পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন হয়েছিল?

আমার তো মনে হয় এধরনের পোষাকি বা কাগুজে ভাবে বাংলাদেশ পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন আমাদেরকে মনাফেকির পথেই ঠেলে দেবে। তার চেয়ে আমরা নিশ্চয় অনেক ভাল ফল পাব যদি দৈনন্দিন, সামাজিক বৈষয়িক আর পেশাগত কর্মকান্ডে আমরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাই আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ চালাই। এব্যাপারে নামাজসহ আমাদের অন্যান্য ধর্মিয় আচার কর্তব্য সমুহ আর ওলেমা ও ধর্মিয় নেতাদের দৃষ্টান্তমুলক জীবন আমাদের নিরন্তর স্মরন করিয়ে দিতে পারে আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের প্রয়োজনিয়তা।

এইব্যাপারে হেফাজত আরো দাবি তুলেছে সংসদের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করে তাদের দাবি পূরনের। আমি তাদের এই পন্থাকে ভিষন অযৌক্তিক মনে করছি, কারন যখন একইভাবে পঞ্চম সংশোধোনি আনাতেই তারা আজকে তাদের দাবি তুলতে বাধ্য হয়েছেন, তখন এব্যাপারে তাদের আরো গভিরভাবে ভাবনা চিন্তা করা উচিত ছিল বলেই আমি মনে করি।

প্রথমত, আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের বর্তমান সংসদিয় গনতানন্ত্রিক ব্যাবস্থায় সংসদের দুই তৃতিয়াংশ আসন সেই অনুপাতে জনসমর্থন নির্দেশ করে না। গত নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসিন জোট সরকার সমগ্র ভোটের ৫০% এর সামান্য অধিক ভোট পেয়েছিল মাত্র। তদোপরি বাংলাদেশের সংসদ ও রাজনৈতিক দল সমুহের মধ্যে কোন গনতন্ত্রের চর্চার লেশমাত্র নেই, চলছে গনতন্ত্রের নাম একনায়কত্ব। সেই অবস্থায়, সংবিধানের যে কোন মৌলিক সংশোধন ব্যাপক আলোচনার পর গনভোটের মাধ্যমে সর্বসাধারন সিদ্ধান্তেই হওয়া বাঞ্ছনিয়।

নির্বোধ/মরেনো
১৪ ই এপ্রিল ২০১৩

2013/Hefazats_Dabi___comments_907706098.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment