পদ্মাসেঁতুতে বিশ্বব্যাংককে সরকারের না , সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত
১.
প্রত্যেক মানুষ , হউক সে ছোট কিংবা বড় ; ধনী কিংবা দরিদ্র ।আত্মসম্মানবোধটি হোল মানুষের আসল সম্পদ । আত্মসম্মানবোধটি যখন মানুষের না থাকে , কিংবা লোপ পায় ; তখন বলতে হবে তার মনুষ্যত্ব লোপ পেয়েছে , যা মানুষ হিসেবে তার দেউলিয়াত্বের প্রকাশ বৈ অন্য কিছু নয় । সেই মানুষ , না কিছু করতে পারে তার ব্যাক্তি জীবনের জন্যে ; না পারে কিছু করতে সমাজের জন্যে । মানুষ হিসেবে তখন তার বেঁচে থাকাটা , আট-দশটি প্রাণী বৈ অন্য কিছু নয় । ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ও তাই, রাষ্ট্রের যদি আত্মসম্মানবোধ না থাকে সেই রাষ্ট্র বেশী দূর এগুতে পারে না ; বিশ্ব সমাজে তার কোন দাম থাকে না । আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন জাতিই পারে কেবল নিজের পায়ে দাঁড়াতে , অন্য কেউ নয় । জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু আত্মসম্মানবোধ সমপন্ন তা প্রমাণের সময় মনে হয় জাতির জীবনে আবার ও এসেছে । এখন আমাদের উচিত এ চ্যালেঞ্জকে গ্রহন করা এবং প্রমাণ করা যে বিশ্ববাসী তোমরা দেখ , আমরা কি করতে পারি আর না পারি । অবশ্য জাতি হিসেবে আমরা যে কি করতে পারি বিশ্ববাসী বহুবার তা অবলোকন করেছে । আবার ও করবে নিকট ভবিষেৎ ইনশাল্লাহ —
২.
বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে দক্ষিণবঙের মানুষের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন হোল পদ্মার উপর একটি সেঁতু হবে এবং সে সেঁতু দিয়ে মানুষ রচনা করবে তার আগামীর না দেখা , না পাওয়ার অনেক লালিত স্বপ্নগুলো । পদ্মার এপাড় থেকে ওপাড়ে গাড়িগুলো ছুটে চলবে দিনরাত্র বাধাঁহীনভাবে ।মানুষের রঙিন স্বপ্নগুলো আরো বেশী স্বপ্নময় হবে ,পদ্মাসেঁতুর ল্যাম্পপোষ্টের আলোতে , সেঁতুর দৃশ্যমান কঠিন দাঁড়িয়ে থাকবার মত করে ।এ রকম একটি স্বপ্ন দেখা বোধ হয় একবিংশ শতকের বাংলাদেশের মানুষের নিকট বাহুল্য কিছু নয় । তা সম্ভব এবং বাস্তবিক একটি স্বপ্ন । সরকার তথা জনগণের নিকট সেই মহার্ঘ্য সময়টি উপস্থিত হয়ে গিয়েছে, এখন শুধু কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় ।
বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেঁতু থেকে অর্থায়ন করার পথ থেকে সরে গিয়েছিল গত জুন মাসে /২০১২ তে , অভিযোগ ছিল দূর্ণীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে – কিন্তু এক টাকাও তখনও পর্যন্ত ছাড় পরেনি । কিন্তু যাই হউক পরবর্তীতে যখন তাদের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশে বিদেশে তুমুল প্রতিবাদের ঝড় উঠে তারপর ইচ্ছাকৃত হউক কিংবা অনিচ্ছাকৃত হউক ২০১২য়ের সেপ্টেম্বরে দূর্ণীতির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্তের শর্ত দিয়ে পুনরায় ফিরে আসে । তাদের এ ফিরে আসাটা রাজনৈতিক কারণে আমাদের জন্যে খুবই দরকার ছিল । তা না হলে বিশ্ববাসীর নিকট তারা আমাদের উপর যে কালিমা লেপন করতে চেয়েছিল তা কাটানো বেশ মুশকিল হয়ে পরত ।যাই হউক সবকিছু যখন ঠিকঠাক মত চলছিল তখন দেখা যাচ্ছিল যে , তারা একের পর এক বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে লাগল তদন্ত এভাবে হবে না , ঐভাবে করতে হবে । ওকে ধর ত ,একে ছাড় ইত্যাদি ইত্যাদি নানা ভঙচঙ খেলা আর কি ! কিন্তু সরকারকে সাধুবাদ জানাব এ কারনে যে , নানা ভঙছঙ খেলার মধ্যে ও সরকার মাথা গরম করে তাদের পাতানো খেলায় পাঁ দেয়নি । বরং সরকার অত্যন্ত সাবলীল এবং যুক্তিগ্রাহ্যভাবে তাদের অভিযোগ অনুযোগের পজেটিব আচরণ দেখাচ্ছিল । মাঝখানে গত মাসে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের প্রধান নিজেই নিজেকে ইতিহাসের স্বর্নাক্ষরের পাতায় লিখিয়ে ফেলেছিলেন , আমি অশ্চর্য্য হয়ে যাই – এ সকল ফাউল লোকজন বিশ্বব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায় কি করে ? আমাদের পিএস হওয়ার যাদের যোগ্যতা নাই তারা যদি বিশ্বব্যাংকের কোন একটি দেশের প্রধান হয় , তাহলে বিশ্বব্যাংক সম্বন্ধে মানুষের মনোভাব যা হবার তাই হবে । অবশ্য বিশ্বব্যাংকের এখানে দোষ কি আর দেব , এই ব্যাংকটি যত না আর্থিক প্রতিষ্ঠান ,তার চেয়ে ঢের বেশী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান , আর এখানে চাকরী করার শর্ত ত হবে যোগ্যতার চেয়ে ও কর্তার আর্শীবাদপুষ্ঠতা ।
যাই হউক সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার মাহেন্দ্রক্ষণটি উপস্থিত হোল যখন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিং গত ৩০শে জানুয়ারী ২০১৩তে এক ঘোষণায় বলে দিলেন যে, দূর্ণীতির তদন্তের ব্যাপারে সব শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেঁতুতে অর্থ ছাড় করবে না ।অপর দিকে সরকার ও বলছিল যে , জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক সেঁতুতে অর্থছাড়ের ব্যাপারে সুুসপষ্ট নির্দেশনা না জানালে সরকার তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে । বিশ্বব্যাংক প্রধানের উপরোক্ত ঘোষণার পর সরকার পরিষ্কার বুঝতে পারছিল তাদের মনোভাব এবং বিশ্বব্যাংক যে , নানা ছুঁতোয় সময় ক্ষেপন করতে যাচ্ছে ; তা যখন সরকারের নিকট পরিষ্কার হোল ঠিক তৎক্ষনাৎ সরকারও কাল বিলম্ব না করে ৩১ শে জানুয়ারী ২০১৩ তে বিশ্বব্যাংকে অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় জানিয়ে দিল যে, আমরা এই বিষয়ে তোমাদের আর সময় দিতে পারছি না । আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কমিটমেন্টের ব্যাপারে । সুুতরাং তোমাদের অনেক ধন্যবাদ আগ্রহের কারণে , তবে এই ব্যাপারে তোমাদের অংশগ্রহণ আমাদের আর দরকার হচ্ছে না , পরবর্তী প্রকল্পগুলোতে তোমাদের আগ্রহের এবং অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ রইল । সরকারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেবার জন্যে । জনগণ সরকারের নিকট এ ধরনের সময়োচিত সঠিক সিন্ধান্তই আশা করে এবং এ সরকারের উপর জনগণের আস্থা যে এখনো অটুট তা জনগণের কর্মকান্ডেই সুুস্পষ্ঠ । বিরোধী দলের শত কাকুতি-মিনতিতে ও জনগণের সাঁড়া মিলছে না । তার কারন সরকারের উপর জনগণের আস্থা ।
৩.
যাই হউক, সরকারকে এ ব্যাপারে আবারো ধন্যবাদ দিতে বাধ্য হচ্ছি যে , সরকারের মুখপাত্র অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেঁতুর ব্যাপারে গতকাল ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে জাতীয় সংসদে পদ্মা সেঁতুর ব্যাপারে তার মনোভাব সুুস্পষ্ট করাতে ।সরকারকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ কারণে যে , সেঁতুর বর্তমান নকঁশাটিকে অঁটুট রাখবার কারণে। আমি যতটুকু জানি সেঁতুর বর্তমান নকশাটি চমৎকার একটি নকশা এবং এ নকশার ভিত্তিতে সেঁতুটি গড়া হলে খুবই সুুন্দর হবে । জানি এটি একটি অত্যন্ত ব্যায় বহুল প্রকল্প ,কিন্তু তাতে কি আমরা সকলে মিলে কি এ ধরনের একটি সুুন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি না ? আমরা সকল বাংলাদেশী ভাই-বোনেরা প্রয়োজনে আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে হলে ও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চাচ্ছি ।এখন সরকারের দরকার রুপরেখা । জানি বহু মাথাবিদ এ ব্যাপারে বহু বিশেষণে সরকারকে ছবক দেবে , কারন দেশে অযাচিত মাথাবিদদের সংখ্যা ইদানীং এত বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে যে , জাতি না জানি কখন বলে বসে এবার চুপ যা । একটি সেকেন্ড ও নষ্ট না করে সরকার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুক , আমরা সকলে এ ব্যাপারে সরকারের পাশে রয়েছি । সরকার যেন মনোবল আটুট রাখে এবং প্রয়োজনে সৌর্ন্দয্য বদ্ধনশীল টুকিটাকি ছোট ছোট প্রকল্প ও এর সাথে যুক্ত করে । আমারা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে বিশ্ববাসীর নিকট ৬ .১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেঁতু নয়, সর্বাধুনিক স্থাপত্য একবিংশ শতকের এই দশকে আগামী তিন বৎসরের মধ্যে হাজির করব এইটিই হউক , আজকে এই জাতির প্রতিজ্ঞা ; সম্পূর্ণ নিজের টাকায় , নিজস্ব মেধায় , নিজস্ব লোকবলে ।সকলকে আহবান সুুন্দর একটি প্রকল্পে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ অবদান রাখবার জন্যে । সকলে ভাল থাকুন সুুস্থ্য ,থাকুন এই কামনায় ।
লেখক –
আরশাদ হোসেন ভূঁইয়া ।
এডেলেইড , আস্ট্রেলিয়া ।
৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ।