নতুন প্রজম্মের মুক্তিযুদ্ধ দেশপ্রেম ভালবাসা ও ন্যায়বোধ থেকে
নতুন প্রজম্মের মুক্তিযুদ্ধকে অনেকেই কাঁটাক্ষ করছেন সুকৌশলে। মুলত নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তাদের চিরায়ত অপচেষ্টা । এই মহৎ আন্দোলনকে ও এই আন্দোলনের বীর সেনানীদেরকে বিব্রত ও অপমান করে ওই রাজাকার-ধর্ষক-হত্যাকারীদের মত পৈচাশিক আনন্দ লাভ করতে চাইছেন বুঝি । বারবার তারা বলতে চাইছেন, শাহবাগ চত্ত্বরে যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার তারা তারুণ্যের আবেগ দিয়ে লড়ছেন। আমি তাদের সঙ্গে কোনভাবেই একমত হতে পারিনি। ২০০৯ সালে তারা ভোটে অংশ নিয়েছিল যেসব প্রত্যাশা নিয়ে তার অন্যতম দাবি ছিল দেশকে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের গ্রাস থেকে মুক্ত করে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া। রাজনীতির জঞ্জাল ও ময়লা থেকে দেশকে মুক্ত করতে তাঁদের সে সিদ্ধান্ত ছিল দীর্ঘদিনের একটি পর্যবেক্ষণ(রিফিলেকশান) চুড়ান্ত বহি:প্রকাশ। তারা সচেতনভাবেই অনেক তথ্য ও উপাও বিচার বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করেছিল ও মহাজোট সরকারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল।
কিন্তু সেখানে যখন নানা চ্যালেঞ্জ নানা দিক থেকে আসতে শুরু করলো তখন তাঁরা যোগাযোগ বাড়িয়ে দিল। তাদের নজরে এল এক লোভী রাজনীতি চারদিক থেকে সাইক্লোনের মত ধেঁয়ে আসছে। তাঁরা লক্ষ্য করলো দেশী ও বিদেশী শক্তি নানাভাবে সরকারকে দুর্বল করে ওই জামায়ত শিবিরকে আবার ক্ষমতায় বসিয়ে যুদ্ধাপরাধীদেরকে মুক্ত করবার ঘৃণ্য প্রয়াস চালাচ্ছে। এই চিত্র যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে তুলে ধরে ১১ জানুয়ারী ভাষণ দিলেন তখন তাঁরা নিশ্চিত হলো দেশ এক গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে। দেশকে বাঁচাতে হবে এই গভীর ষড়যন্ত্র থেকে। দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি তাঁদের ভালবাসা বিবেকে জাগিয়ে দিল। আর তাই কিছু একটা করতে হবে। রুখে দাঁড়তে হবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। সমুন্নত রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শুরু হল নতুন প্রজম্মের মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবেগ দিয়েই ঊপলব্ধি করতে হয়। মানুষ কেবল বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন পশুর প্রজাতি নয়। তাঁর মাঝে আছে আবেগ ও ভালবাসা। আর এগুলির অত্যন্ত পরিমিত বর্হি:প্রকাশ শাহবাগের আন্দোলন। এখানে নেই সহিংসতা যা গত একটি মাস ধরে জামায়ত-শিবির ও তাঁদের রাজনৈতিক বানিজ্যের অংশীদাররা করছে। তাঁদের দেশপ্রেম ও মানবতাবোধ কোনভাবেই ভাবাবেগ থেকে স্ফুরিত হয়নি। তাঁরা ইতিহাস পড়েছে, সারা বিশ্বে কি ঘটছে তা দেখছে এবং এসব তথ্য তাদেরকে বিজ্ঞজনে পরিণত করেছ। শাণিত করেছে বিবেক। তাঁদের আন্দোলন তাই কোনভাবে আবেগ তাড়িত নয়। তাঁদের আন্দোলনকে খাটো করতে বা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে নাস্তিকের আন্দোলন, ইসলাম বিরোধী আন্দোলন এমনকি আওয়ামী আন্দোলন বলা যাবে না বা এসব বলে আগ্রাহ্য করা যাবে না। তাঁদের আন্দোলন একটি ন্যায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তাঁরা জানে ন্যায় হচ্ছে রাষ্ট্রের ভিত্তি।
অনেকেই বলছেন তাঁরা কেন দূর্নীতি নিয়ে সোচ্চার নন। আমি মনে করি তারা সঠিক কাজটিই করছেন। এই আন্দোলন সফল হলে মানুষের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার আরোও সুদৃঢ় হবে। এবং তখন প্রতিটি মানুষই সুচিন্তিতভাবে তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা ও প্রয়োগের সুযোগ পাবে। জনতাই তখন দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলবে। এ আন্দোলন ব্যর্থ হবে যদি তারা র্দূনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে যেমন ব্যর্থ হয়েছিল ১/১১-র প্রচেষ্টা। তখন দূর্নীতিবাজরা ক্রাইসিস তৈরী করে সরকার ঊৎখাতের পাশাপাশি তাঁদের জীবনকেও বিপন্ন করে তুলবে। তথাপি তাঁদের আন্দোলন অন্য একটি অর্থে দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলন। আর তাহল: বিচারের নামে যেপ্রহসন যুগে যুগে সমাজে হয় সেই দূর্নীতিকে সমুলে ঊৎপাটন করতে এ আন্দোলন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে এক প্রহসন ছিল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়। নতুন প্রজম্ম আশংকা করেছিল কাদের মোল্লার মত সব যুদ্ধাপরাধীরা বাসমতি চাল খেয়ে আর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত শয়নে বাকী জীবনটা পার করবেন। আর ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা ও চার লক্ষ মা-বোনের হাহাকার ও লাঞ্চনাবোধ জাতিকে যুগের পর যুগ ধিক্কার দিয়ে যাবে। কুরে কুরে ঘুণ ধরাবে সমাজে, মহাপাপ বিকশিত হবে আগ্নেয়গিরির মত লেলিহান শিখায়। নতুন প্রজম্ম সেই আগ্নেয়গিরি মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দ করেছে দূর্নীতি ও অন্যায়ের লেলিহান শিখা। জয়তু নতুন প্রজম্ম। লাল সালাম হে ন্যায়বোধ স¤পন্ন তরুণ। তোমাদের আভা সার বিশ্বে ছড়িয়ে পড়–ক। বিশ্ব দেখুক বাঙালির ন্যায়বোধ কত উন্নত। তোমাদের জয় হোক।
ড. ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মেলবোর্ণ থেকে।