দয়াকরে এবার থামুন
বিরোধীদল ও সরকারী দল এবার দয়া করে থামুন। দেশের কেমন উন্নতি আপনারা চান তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। দেশের মানুষের পক্ষে আপনাদের অবস্থান কেমন তাও আমাদের কাছে সুস্পষ্ট। এই যে প্রতিদিন আপনাদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ছুড়ে দেয়া পেট্রল বোমা আর ককটেলের আঘাতে রাজনীতির সাথে বিন্দুমাত্র সংযোগহীন নিরীহ জনগণ নিদারুন যন্ত্রনায় মৃত্যুবরণ করছে, এর জন্য আপনারা দুনেত্রীই সমান দায়ী।
জনগনের জন্য রাজনীতি করেন বলে দুজনেই বেশ বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। তো সেই জনগনের কাতারে কি নাহিদ, রবিন, মোজাম্মেল, মাহবুব, শফিকুলেরা পড়ে না? আপনারা কি বার্ন ইউনিটের জ্বলন্ত শরীরগুলোকে জনগণ ভাবেন না? ওদের পুরে যাওয়া শরীরের দুঃসহ কষ্টের আর্তনাদ কি আপনাদের কানে যায় না? আপনারা কি পত্রিকা পরা, টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছেন? ওদের যন্ত্রনাক্লিষ্ট শরীর, মমির মত সারা শরীরে বাঁধা ব্যান্ডেজ কি আপনাদের নজরে পরেনি? তাদের মৃত্যু কি আপনাদের বিবেককে একটুও নাড়িয়ে দেয় না? নাকি বিবেক বলে আপনাদের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই?
আমাদের দেশের আজকের এই দুর্গতির জন্য দায়ী আপনাদের দুনেত্রীর ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন লোভ। দু’দলের দুজন তো পালাক্রমে বহুবছর ক্ষমতায় বসলেন, এরপরও কি আপনাদের ক্ষমতার সাধ মেটেনি? নাকি রক্তচোষা ড্রাকুলার মতো ক্ষমতার স্বাদ ছাড়া আপনাদের বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন হয়ে ওঠে?
আপনারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিন। যেভাবে ইচ্ছে সমঝোতা করে নিন। কিন্তু আমাদের বাঁচতে দিন।
আমাদের মত দুর্ভাগা জনগণ আর কে বা আছে। পেটের দায়ে ঘরে থাকা দায়, ঘর থেকে বের হলে বেঁচে থাকা দায়। সত্যি যদি উপায় থাকত, তবে আমরা ঘর হতে কেউ বের হতাম না। পরিবার পরিজনদের সাথে ঘরে বসে বসে রসিয়ে রসিয়ে আপনাদের দেয়া টক শো নামক কমেডি দেখতাম আর নির্মল আনন্দ উপভোগ করতাম। কিন্তু তাতে তো আবার আপনাদের অবরোধ সফল হত না। আপনাদের দরকার মাংস। আপনাদের দরকার রক্ত। যে করেই হোক, আমাদের নিরীহ জনগনের রক্ত-মাংস দিয়েই ক্ষমতার মসনদ আপনারা ডেকোরেশন করে নিতেন।
অন্যদিকে, সরকার দলকে যখন দেখি প্রধান বিরোধীদলকে বেমালুম অস্বিকার করে নির্বিকারভাবে নির্বাচনের পসরা সাজায়, তখন প্রশ্ন জাগে এরাই কি জনগনের জান-মালের হেফাজতের শপথ নেয়া দল? কোথায় তাদের চৌকষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী? কেন এখন পর্যন্ত পেট্রোল বোমা ছুড়ে দেয়া একজন ব্যক্তিও গ্রেফতার হলো না? গাড়ির পর গাড়ি পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে সবার চোখের সামনে, কেন কোনো প্রতিরোধ করা হচ্ছে না?
নির্বাচন তফসিল, মনোনয়ন নিয়ে তাদের মধ্যে যেই উত্সব উত্সব ভাব দেখছি তাতে তো একটি বারের জন্য মনে হচ্ছে না যে, কেউ জনগনের কথা ভাবছে। সরকারী দল এমনভাবে আছে, যেন দেশে কিচ্ছুটি হয়নি। সব স্বাভাবিক। কোনমতে ৫ তারিখের নির্বাচন হলেই যেন তারা নিশ্চিন্ত। কিন্তু হিসাব কি এতই সহজ? কোনমতে নির্বাচন করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
ক্ষমতায় বসার কৌশলে একদিন যে জামায়াতকে নিয়ে হাসিমুখে এক মঞ্চে বসে ফটোসেশন করেছিলেন, দেখুন তারাই আজ অন্য নেত্রীর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে তাদের দলের ঘাড়ে সিন্দাবাদের দৈত্যের মত চেপে বসে কেমন তান্ডব চালাচ্ছে। যে স্বৈরাচারকে হটিয়ে আপনারা দুজন গণতন্ত্রের মন্ত্র জপে যাচ্ছেন, সেই মিথ্যেবাদী স্বৈরাচারকে আজ গণতান্ত্রিক বলে আপনারাই সার্টিফিকেট দিচ্ছেন! ক্ষমতায় যাবার সিড়ি তৈরী করতে আপনারা দুনেত্রী পারেন না এমন কিছুই নেই।
এই অগ্নিদগ্ধ লাশ, এই আর্ত চিত্কার, এই জ্বালাও-পোড়াও এর প্রত্যক্ষ দায় বিএনপির। বিনপির অবরোধ সফল করে তুলতে, জনমনে আতংক তৈরী করতে এই সব করছে তাদের দু’পয়সার ভাড়াটে খুনিরা। যতই ফখরুল, রিজভি সাহেবেরা বলুক না কেন যে, সরকারী দল তাদেরকে বিতর্কিত করার জন্য এসব করছে, আমরা জনগণ তা বিশ্বাস করিনা। কারণ অবরোধ আপনারাই দিয়েছেন, এর সাথে সম্পৃক্ত সকল সহিংসতার দায় শুধুই আপনাদের দলের।
অন্যদিকে এই সহিংস আন্দোলনের পরোক্ষ দায় অবশ্যই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের। সরকারী দল যদি এভাবে একলা নির্বাচনের গো ধরে না থাকত, তবে বিরোধীদল এভাবে অবরোধের পথে যেত না। বিরোধীদল অবরোধ না দিলে এভাবে নাহিদ, রবিনের মত তাজা প্রাণগুলো পুড়ে কয়লা হয়ে যেত না।
অনেক তো হলো। অনেক কিছুই তো জনগনের জন্য করলেন! এখন থামুন। আমরা আর আপনাদের প্রতিহিংসার শিকার হতে চাইনা। আমাদের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতির নোংরা কূটচাল এবার বন্ধ করুন। দেয়ালে পোড়া শরীর ঠেকে গেছে। আপনাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাড়ানো ছাড়া আমাদের পোড়া জনগনের সামনে কোনো পথই যে আর খোলা নেই। তাই আবারও বলছি, দয়া করে এবার থামুন।