বাংলাদেশের সম্পদ ধংসের হাত থেকে রক্ষা করুন

বাংলাদেশের সম্পদ ধংসের হাত থেকে রক্ষা করুন

ব্রিটিশরা যেমন এই উপমহাদেশে শিক্ষিত করতে চেয়েছিল যাতে তারা চেহারায় হবে ভারতীয় আর চিন্তায় হবে ব্রিটিশ। সেরকম বাংলাদেশের শাসকরাও বাংলাদেশের শিক্ষার ভালো ব্যবস্থা করেছেন যাতে করে তাদের কোনও সিধান্ত কেও বিরোধিতা করতে না পারে । আর তাই বিশ্ববিদ্যালয় এর বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিক্ষকের ঘুষি খেয়ে ছাত্রী অজ্ঞান খবর আমাদের তেমন চোখে পড়ে না । আমাদের আজকের মূল আলোচনা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। মোঘল আমলে দিল্লির অধিবাসী মোল্লা নাথন ফরাসী ভাসায় তার রচিত একটি বইতে বাংলাদেশ কে ” অজানা চির বসন্ত-ভূমি ” বলে আখ্যা দিয়েছিলেন । তার কাছে বাংলাদেশ চির বসন্তের দেশ বলেই মনে হয়েছিল । তিনি সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন গ্রীষ্মের ভয়াবহ গরমেও সিলেট এর হাওর এ জল দেখে । কিন্তু ইতিহাস এর এমনি পরিহাস সেই দিল্লির শাসকরা এখন বসন্তের দেশ কে মরুভূমির দেশ বানাতে চাইছে । ফারাক্কা গজাল ডোবা সহ বিভিন্ন নদীর উজান এ অসংখ্য বাধ দিয়ে এবার টিপাই বাধ দিয়ে বাংলাদেশকে গলা টিপে মারার আয়োজন করছে । জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না বলে ভারত আশ্বাস দিলেও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মোট ভিন্ন । তারা বলছেন ভারত উজানে পানি প্রত্যাহার করে না নিলেও বিশাল এই বাধ এর ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ এবং পানির বৈশিষ্ঠে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে ।পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম পলিবাহিত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ যা গঙ্গা (পদ্মা) – ব্রহ্মপুত্র -মেঘনা (বরাক ) (GBM ) বেসিন বা অববাহিকার সৃষ্টি । বাংলাদেশের চার-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে এই GBM অববাহিকার মাঝে। এর আয়তন পৃথিবীর মোট স্থলভূমির মাত্র ১ দশমিক ২ ভাগ হলেও পৃথিবীর প্রায় দশ ভাগ মানুষ এই অঞ্চলে বাস করে। এই নদী গুলোর সম্পদের ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের লোকজনের জীবন চলে। ভারত ও বার্মার থেকে আসা ৫৭ টি নদীর মধ্যে ভারত ৪৮টি নদীর প্রবাহকে একতরফা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যার ফলে উত্তর দক্ষিণাচলের ১৮ জেলায় মরুকরণ, ভুগর্বস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও আর্সেনিক দূষণ, সুন্দরবনে আগামরা রোগ সহ সামগ্রিক ভাবে ৪ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক বিশেষজ্ঞর মতে কৃত্রিম বাধ ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ায়। চীনে বান্কিয়াও বাধে এক হাজার বছরের সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ বিবেচনা করে নকশা তৈরি করার পরেও ১৯৭৫ সালের অগাস্ট মাসে ২ হাজার বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ায় বাধটি ভেঙ্গে ২৬ হাজার লোকের তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বাধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মত দিলেও সরকার ও তার উপদেষ্টারা (যারা বছরের ১১ মাস থাকেন দেশের বাইরে এবং কেও কেও আবার বিদেশের নাগরিক ) বলে যাচ্ছেন বাধ নির্মাণ বাংলাদেশের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসার পর পর কাগজ কলম নিয়ে হিসেব করতে বসেন তাদের শাসনামলে কতটুকু পানি পাওয়া গেল। যদি পরিমাণ মত বা এর চাইতে বেশি বৃষ্টি হয় তাহলে উপরওয়ালার রহমত বলে কোনও ভাবে শাসন কাল পার করতে পারলেই হয়। যখন খরা দেখা দেই তখনি বাংলাদেশের লোক জন জানতে পারে ফারাক্কা দিয়ে কত পানি আসলো। কাগজে কলমে হিসেব করে যদি কম বেশি হয় তখন সরকার ও তার ‘হালুয়া রুটির’ উপদেষ্টারা উঠে পরে লাগে ভুতের ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্য। ১৯৫৪ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় জল কমিশন আসামের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বহুমুখী জলাধার প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ শুরু করে। ১৯৭৪ সালে বাধের চূড়ান্ত স্থান হিসেবে টিপাই-মুখ নির্ধারিত হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন বৈঠকে টিপাই-মুখ প্রকল্প সম্পর্কে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৮২ সালে ভারত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সংযোগ খালের মাধ্যমে গঙ্গার পানি বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দেয় তাতে টিপাই-মুখ বাধ অন্তর্ভুক্ত ছিল। মনিপুর রাজ্যের লোকজনের বিক্ষোভের কারণে পিছিয়ে গেলেও ২০০৬ সালে মনিপুরে টিপাই-মুখ বাধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৮ সালে ভারতের পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পটিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়।২০১১ সালের অক্টোবর এ যৌথ অংশিদারিত্ব ও বিনিয়োগ চুক্তি সাক্ষর হয়। বিশ্ব ব্যাঙ্ক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।এই দীর্ঘ সময় বিএনপি, জাতিয় পার্টি, আওয়ামীলীগ পালাক্রমে দেশ শাসন করেছে এবং জামায়েত ইসলামী ক্ষমতার শরিক থেকেছে। তারা যৌথ নদী কমিশন এর বৈঠকে এবং বিভিন্ন সময় ভারতের সাথে আলোচনা করেছেন বলে দাবি করেন কিন্তু ভারতের যুক্তি ও বক্তব্য কি ছিল আর আমাদের যুক্তি আর বক্তব্য কি ছিল এই সকল বিষয়ে জনগণ কিছু জানতে পারেনি। এখন বিরোধী দলে থাকার কারণে বিএনপি-জামাত-জাতীয় পার্টি লোক দেখানো প্রদর্শনী ও বক্তব্য রেখে ভোট নিশ্চিত করছে। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য আওয়ামীলীগ ভারত কে ‘বন্ধু’ রাষ্ট্র এবং বিএনপি-জামাত ও মৌলবাদী দলগুলো ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বলে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করে লোকজনকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু দেশের বিরোধী চুক্তি করতে কেও পিছিয়ে থাকে না। বাংলাদেশ গ্যাস এর ওপর ভাসছে বলে একে একে সব ব্লক বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছে।বিএনপি ১৯৯৩ সালে ৮ টি ব্লক এবং আওয়ামীলীগ পরবর্তীতে ৪টি ব্লক বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছে।চুক্তি অনুসারে বিদেশী কোম্পানি থেকে ৭৯% যেটা তারা উৎপাদন বণ্টন অনুযায়ী পাবে সেটা বাংলাদেশকে কিনতে হবে আন্তর্জাতিক বাজারদরে। পেট্রোবাংলা থেকে যেখানে সরকারকে গ্যাস কিনতে হয় ২৫ টাকা করে (প্রতি হাজার ঘনফুট ) সেখানে বিদেশী কোম্পানি থেকে কিনতে হচ্ছে ৩ ডলার ( প্রায় ২৩৫ টাকা ) দামে। এই দামের সমনই করতে গিয়ে প্রতি বছর সরকার হারাচ্ছে ২৫০০ কোটি টাকা। এই সব দেশদ্রোহী নীতির বিরুধ্যে দেশী বা বিদেশী (যারা বিদেশ থেকে সরকার কে প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন ) শিক্ষিত বিশেষজ্ঞরা কিছুই বলেন না। এই অসম চুক্তি এবং অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে এখন নতুন বাড়িতে বা শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। এই সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি আমরা কথা না বলি, যদি আমরা এই দল র ওই দল এর অনুসারী হয়ে বার বার ভুতের ঘাড়ে দোষ চাপায় তাহলে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি দিয়ে কিছু হবে না।

2012/pdf/Bangladesher_Shompod_490385037.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment