Research Paper on Dhaka Transport Part 2

Research Paper on Dhaka Transport Part 2

ঢাকার যাতায়াত ও অন্যান্য সমস্যার

একটি নিশ্চিত সমাধান

(দ্বিতীয় পর্ব)

(০২) কেমন করে ঢাকা শহরে যান বাহন সমস্যার সৃষ্টি হলোঃ

উপরের আদর্শ সরকার সম্বন্ধীয় আলোচনাটি ঢাকা শহরের যানবাহন সমস্যার সমাধান আলোচনার ক্ষেত্রে আদৌ প্রয়োজন কি না এ প্রশ্নটি অনেকের মনে আসতে পারে । আসলে আদর্শ সরকার না হলে ঢাকার যাতায়াত সমস্যা কেন, দেশের কোন সমস্যারই সমাধান হবে না ।

এবারে ঢাকা শহরের যাতায়াত সমস্যার কথায় আসা যাক । রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা শহর গুরুত্বপূর্ন, এটা সবারই জানা । গনতান্ত্রিক দেশে এই শহরটির উন্নয়ন হবে সামগ্রিক ভাবে দেশের এবং দেশের মানুষের স্বার্থে এবং দেশটির সম্পদ ও সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে । রাজধানী হবার সাথেই ঢাকা শহরের গুরুত্ব, জনসংখ্যা, জমি ও বাড়ির মূল্য বেড়েছে । এই সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে জিনিসপত্র ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে । এই প্রেক্ষিতে দেশপ্রেমিক সরকারের বদলে ব্যবসায়ী মনোভাব সম্পন্ন সরকার প্রচলিত থাকায় তারা চেয়েছে, এই গুরুত্ব বৃদ্ধির সুফল (যেমন জমি, বাড়ি, জিনিসপত্র ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি) যেন প্রধানতঃ তারা এবং তাদের দলের লোকজন ভোগ করতে পারে । এবং ঢাকা শহরকে তারা সেই ভাবেই গড়ে তুলতে চেয়েছে ।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের উন্নতির জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকগন বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞদের উপদেশ চেয়েছেন । উল্লেখ করা প্রয়োজন যে দেশী-বিদেশী ডিগ্রী স্বত্বেও বাংলাদেশের সব বিশেষজ্ঞের জ্ঞান, বুদ্ধি বা সততা কোনটাই প্রশ্নাতীত নয় । এদের অনেকের আবার ব্যক্তিত্বের মান এতই নীচু যে নীতিনির্ধারকগন কি চান বা পছন্দ করেন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তারা উপদেশ দিয়ে থাকেন ।

নীতিনির্ধারকগন হয়তো প্রশ্ন করেছেন, বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে কি আরও সম্প্রসারিত করা উচিত ? কোন বিশেষজ্ঞ হয়তো বলেছেন, আমাদের দেশটি ছোট, কিন্তু মানুষ অনেক, আর সীমিত সম্পদ । বিদেশীরা সব সময় চেষ্টা করবে কি করে আমাদের সম্পদ তাদের দেশে নিতে পারে । রাজধানী হিসেবে এটি হবে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র । এটি হবে বিদেশীদের কাছে আমাদের সংস্কৃতি ও প্রাপ্তির প্রতীক । এখানে থাকবে এমন সব প্রতিষ্ঠান যা সারা দেশের সামনে আদর্শ স্থাপন করবে । সারা পৃথিবীর লোক এখানে আসবে আমাদের দেশের আদর্শ জানতে, শিক্ষা নিতে । আর দেশের লোক আসবে দিক নির্দেশনা নিতে । বিদেশীরা আসবে আমাদের সততা, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির স্বাদ নিতে । বাংলাদেশের সকল ধরনের লোকের এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রয়োজন নেই । বরং এই শহরের জন্য যাদের থাকা প্রয়োজন, কর্মরত অবস্থায় তারা যাতে এখানে থাকতে পারে তার সব রকম ব্যবস্থা এখানে থাকবে । কাজ শেষ হয়ে গেলে তারা মফঃস্বল শহর বা গ্রামের শান্ত এলাকায় গিয়ে অবসর জীবন যাপন করবেন । এখানে সকল ধরনের সকল বয়সের মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করতে গেলে শহর প্রকান্ড রকম বড় হয়ে যাবে । আমাদের সীমিত সম্পদে তত বড় শহর গড়া সম্ভব হবে না । শহর বেশি বড় হয়ে গেলে দক্ষ ও দ্রুত যাতায়াত নিশ্চিত করা যাবে না, একটি রাজধানীর জন্য যা একান্ত প্রয়োজন । তাছাড়া আমাদের উৎপাদন হয় প্রধানতঃ জমি থেকে । রাজধানী শহরে বস্তুগত উৎপাদন তেমন হয় না, বরং অতি প্রয়োজনীয় কৃষি জমি নষ্ট হয় । তাই এর আয়তন যত কম করা যায় ততই ভাল ।

আবার ব্যক্তিত্বহীন কোন বিশেষজ্ঞ নীতি নির্ধারকদের ইচ্ছার কথা বুঝে বলেছেন আমাদের রাজধানী যত বড় করা যায়, যত বেশি মানুষ এখানে ঠাসা যায় ততই এখানকার জমির দাম বাড়বে, ব্যবসায় বেশী লাভ হবে, যান বাহনে চলার খরচ বাড়বে, দেশ অনেক বেশী বেশী বিদেশী গাড়ী আর তেল ক্রয় করতে পারবে । এতে আমাদের অর্থনীতি জোরদার হবে, বিদেশে আমাদের সন্মান বাড়বে । বিদেশী দাতা বা প্রকৌশল উপদেষ্টাগন কোনটা চাইবেন তা বলার প্রয়োজন নেই ।

এমন অবস্থায় ব্যবসায়ী মনোভাব সম্পন্ন আমাদের নীতিনির্ধারকগন কোনটি পছন্দ করবেন ? স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দুইটি সামরিক সরকার এবং চারটি গনতান্ত্রিক সরকার তাদের স্বার্থ আর ব্যবসায়ীক মনোভাবের কারনে আগাগোড়া দ্বিতীয় প্রস্তাবটিই পছন্দ করে এসেছেন । তারা মনে মনে ভেবেছেন, তাইতো, এমনটি করা হলে ঢাকায় প্রচুর মানুষ থাকবে, প্রচুর গাড়ি চলবে, বাড়ি ভাড়া বাড়বে, অনেক তেল আর গাড়ী আমদানী করতে হবে । প্রচুর কাজ হবে, ব্যবসা হবে । এ থেকে আমরা প্রচুর সম্পদ বানাবো, আর আমাদের রাজনৈতিক যুব ছাত্র চামচাদেরও প্রচুর আয়ের ব্যবস্থা করতে পারবো । এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক কালে কয়েক লক্ষ একর উর্বর জমি নষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় বা বিকল্প প্রক্রিয়ায় কাজ চালানো সম্ভব এমন একটি প্রকল্প (আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর) বাস্তুবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের প্রবল আগ্রহের কথা স্মরন করা যেতে পারে । দেশবাসীর সৌভাগ্য, প্রবল গনআন্দোলনের কারনে সরকার এটি বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে ।

বাংলাদেশে ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন সরকারের নেয়া দেশের স্বার্থবিরোধী অনেক প্রকল্প বাস্তুবায়িত হতে পারে নি শুধুমাত্র গনআন্দোলন, পরিবেশবাদী সহ বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার প্রচার এবং বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের কারনে । ভাবতে অবাক লাগে, যেখানে সরকারের কাজ হবে দেশের ও জনগনের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা করা, সেখানে এটি নিশ্চিত করার জন্য এখন জনগনকে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বা বিচার বিভাগকে সরকারকে নির্দেশ দিতে হয় ।

স্বাধীনতার পর থেকে ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন নীতিনির্ধারক প্রভাবান্বিত এদেশের সরকার তাদের পোষা বিশেষজ্ঞদের উপদেশে উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় ঢাকা শহরের সমস্যা একে একে বাড়িয়ে এখন এমন অবস্থা করেছে যে, বলা হচ্ছে আগামী এক দশকের মধ্যেই ঢাকা বসবাস-অযোগ্য নগরীতে পরিনত হবে ।

(০৩) বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমস্যাটির একটি সমাধান ঃ

সমাধানের কথায় আসা যাক । অনেক দেরী হয়ে গেলেও ঢাকা শহরকে এখনও সমস্যামুক্ত এবং একটি আদর্শ শহর হিসেবে রূপান্তরিত করা সম্ভব । যে কোন সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় হচ্ছে এর মূল কারনটি খুঁজে বের করা । আমরা জানি, ঢাকা শহরের সকল সমস্যার মূল কারন গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত দেশটির সরকারের ব্যবসায়ী মনোভাব আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের মাধ্যমে ত্যাগী, নির্লোভ মানুষদেরকে নীতিনির্ধারক হিসেবে না আনা পর্য্যন্ত ঢাকা শহরের সমস্যা কেন, দেশের কোন সমস্যারই সমাধান হবে না । এই সরকারের পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে তেত্রিশ মাস চলে গেছে । বিদেশী ঋননির্ভর বড় বড় প্রকল্প গ্রহন ছাড়া সরকার দেশের বা জনগনের মঙ্গলের জন্য আর তেমন কিছুই করতে পারে নি ।

এই সরকার বরং তাদের ভুল পরিকল্পনা ও কাজের মাধ্যমে আগের সরকারগুলির সৃষ্ট ঢাকা শহরের সমস্যা দিনে দিনে আরও বাড়িয়েছে । এমন অবস্থায় জনগন, বিশেষতঃ ঢাকাবাসীর আর হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই । জনগনের শেষ ভরসা এখন বিচার বিভাগ । জনগনের বোঝা উচিৎ, যারা এখন এদেশের রাজনীতিক তারা এই পর্য্যায়ে এসেছেন রাজনৈতিক দলের জন্য কাজ করে, যেখানে তাদের কাজ ছিল ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন কাজ করে টাকা উপার্জন করা, তারপর তা থেকে দলকে কিছু দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করা । চূড়ান্ত পর্য্যায়ে অনেক টাকা খরচ করে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এখন তাদের কাজ হচ্ছে নিজের, দলের লোকদের এবং দলটির আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করা । সরকারের ঢাকা শহর উন্নয়নের যাবতীয় কাজকে এখন থেকে এই দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে হবে । তাদের নিজেদের স্বার্থে নেয়া যে কোন পদক্ষেপ দেশ বা জনস্বার্থ বিরোধী মনে হলেই প্রতিবাদ জানাতে হবে বা বিচার বিভাগের আশ্রয় নিতে হবে । এভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে একটি দেশপ্রেমী সরকারের আগমন পর্য্যন্ত ।

অধ্যাপক বিজন বিহারী শর্মা, স্থাপত্য বিভাগ, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

2011/pdf/Transport__02_107631045.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment