Europe E Low Cost Airlines
ইউরোপে লো-কষ্ট এয়ার লাইন্সের সুবিধা, ওয়াসিম খান পলাশ, প্যারিস থেকে
ইউরোপের যাতায়াত ব্যবস্থায় অনেক উন্নত। কি প্লেন, কি ট্রেন, কি সড়ক, যোগাযোগের সব ক্ষেত্রেই গড়ে উঠেছে বিশাল আধুনিক নেটওয়ার্ক। প্রতিদিন একে অপরকে পাল্লা দিয়ে যাত্রী সেবা দিয়ে চলেছে এরা। এর পছনে অবশ্য কারনও আছে। আধুনিক প্রযুক্তির সব কিছুর যাত্রা ইউরোপ- আমেরিকা থেকে। এখানে সব জায়গাতেই সময়কে কাউন্ট করা হয়। সব কিছুর হিসাব চলে ঘড়ির কাটার সেকেন্ডে সেকেন্ডে। ধর্মঘট কিংবা বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়া সময়ের হেরফের হয়না এতটুকুও। বিমানের সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রেনের গতিও বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। স্বর্পাকৃতির দ্রুতগামী ট্রেনগুলো খুবই লাক্সারিয়াস। আসনে বসে বুঝা যাবে না যে চলছে। কম্পার্টমেন্টগুলোও অত্যাধুনিক ডেকোরেটেড। এইতো বছর কয়েক আগে দ্রুতগামী ট্রেনে প্যারিস থেকে – ফ্রান্সের মার্সাই যেতে লাগতো প্রায় সাত ঘন্টা। এখন লাগে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা। গতি বাড়িয়ে সময় অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে। আবার আন্তদেশীয় বাস কোম্পানিগুলো দিচ্ছে উন্নত যাত্রীসেবা ও আকর্ষনীয় সব অফার। ইউরোপের ৫০০ টির ও অধিক সিটিতে এদের চলাচল।
ইউরোপের প্রতিটি দেশেরই আছে নিজস্ব এয়ার লাইনস। এয়ার ফ্রান্স,ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ, জার্মানীর লুফথানছা, হলান্ডের কে এল এম, ইটালীর আল ইটালীয়া, সুইজারল্যান্ডের সুইস এয়ার, ফিনিস এয়ার, আইসল্যান্ড এয়ার, এসক্যান্ডিনিভিয়ান এয়ার লাইন্স – ইত্যাদি। রয়েছে বেশ কিছু প্রাইভেট এয়ার লাইন্স। ইউরোপীয়ান এয়ার লাইন্সগুলোর সুনাম বিশ্বব্যাপী। পর্যাপ্ত ফ্লাইট, আরামদায়ক ভ্রমন, আতিথেয়তা ও সার্ভিসের দিক দিয়ে এরা পৃথিবীর সেরা এয়ার লাইন্স। এসব কারনে এই এয়ার লাইন্সগুলোর যাত্রী ভাড়াও তুলনা মুলকভাবে বেশ বেশি।
ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে লোকষ্ট এয়ার লাইন্সগুলোর বেশ কদর। এর বিস্তৃতি বেশ ব্যাপকতা লাভ করেছে। সারা ইউরোপ জুড়ে এখন এদের বিশাল নেটওয়ার্ক। অনেকটা মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত। অসংখ্য লোকষ্ট এয়ার লাইনস প্রতিনিয়ত উঠানামা করছে ইউরোপের বিভিন্ন এয়ারপোর্ট গুলোতে। প্রতিটি দেশেই আছে এদের নিজস্ব এয়ারপোর্ট, ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস। এয়ারপোর্ট থেকে শহর পর্যন্ত যাত্রীদের আনা নেওয়ার জন্য আছে নিজস্ব শাটল ব্যাবস্থা। চাহিদাকে সামনে রেখে দিন দিন এসব এয়ার লাইন্সের সংখ্যাও বাড়ছে। বাড়ছে এদের গন্তব্যও। বর্তমানে ইউরোপে যে কয়েকটি লো কষ্ট এয়ার লাইন্স চলছে তার ভিতর রায়ার এয়ার, ইজি জেট, এয়ার ভুলিং, এয়ার বারলা, নিকি জেট,স্কাই ইউরোপ,উইং এয়ার লাইন,জার্মান এয়ার লাইন্স,ফ্লাই বি, এয়ার বাল্টিক,বিএমই বেবি, উল্লেখযোগ্য। ইউরোপের প্রতিটি দেশের একাধিক শহরে রয়েছে এদের ডেস্টিনেশন। অনেকটা মাকরশার জালের মতো বিস্তৃত এদের নেটওয়ার্ক।
আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড চার্জ করে আপনার গন্তব্যের টিকেটটি কিনে নিতে পারেন। শুধুমাত্র কনফারমেশন লেটারটি প্রিন্ট করে এয়ারপোর্ট চলে যাবেন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে ঐসব এয়ার লাইন্সের ওয়েব এড্রেসটি। যারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমন করেন তাদের অবশ্য লিংক গুলো জানা। প্রতিনিয়তই খোজ খবর রাখেন তারা। কোনো কারনে যাতে যাত্রার দিন ও সময় ভুলে না যান সেজন্যে আপনার মোবাইলে সময় সময় এলার্ট ম্যাসেজ দিয়ে আপনাকে মনে করিয়ে দিবে।
লোকষ্ট এয়ার লাইনস কম্পানীগুলো অবিশ্বাস্য অল্প ভাড়ায় যাত্রী বহন করে থাকে। আবার মাঝে মাঝেই দিয়ে থাকে স্পেশাল অফার। রায়ান এয়ার তো একবার ১ লাখ সিট ফ্রি ঘোষনা দিয়েছিল। এতে কোন ট্যাক্স বা চার্জেরও প্রয়োজন হয়নি। এখন চলছে ৬ ইউরোতে তাদের যে কোনো ডেসটিনেশনে পৌছে দেয়ার অফার। ইউরোপে রায়ান এয়ারের বিশাল নেটওয়ার্ক। ইউরোপের ছোট-বড় অনেক শহরে এদের ডেস্টিনেশন। মাত্র ২০ ইউরোতে আপনি ঘুরে আসতে পারবেন ইউরোপের শহরগুলো থেকে। ইজি জেটও প্রায়ই অফ প্রাইজে টিকিট দিয়ে থাকে। এইতো গত সপ্তাহে ৪০% অফ প্রাইজে টিকিট ছেড়েছিল ইজি জেট। ভোলিং দিয়েছিল ৩০ ইউরোতে তাদের যেকোনো ডেস্টিনেশনে যাবার অফার। কম দামী এয়ার লাইন্স হলেও এদের সার্ভিস কিন্তু প্রথম শ্রেনীর। বিমানের গেটে যাত্রীদের অভ্যার্থনা,সিট পেতে সহযোগিতা করা,ম্যাগাজিন বিলি করা ইতাদি। দামী এয়ার লাইন্সগুলোতে যেমন আপ্যায়ন করা হয়। এইসব এয়ার লাইনস গুলোতে কিনে খেতে হয়। আপনি বাইরে থেকেও হালকা খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারেন। তবে বিমানের ভিতরে খাবার ও সুভেনীর বিক্রি করা হয়।
এসব এয়ার লাইন্স গুলোয় কোনো নিদিষ্ট সিট নাম্বার দেয়া হয় না। যাত্রীরা নিজের পছন্দ মতো সিট বেছে নিতে পারেন। তবে ইজি জেট ও ভোলিং এয়ার লাইন্সে আপনি অনলাইনে বোর্ডিং প্রায়রিটি কার্ড কিনে নিতে পারবেন। এর জন্যে অবশ্য আপনাকে এক্সট্রা চার্জ পে করতে হবে। এসব এয়ার লাইন্সে চলাচল করলে ব্যাগেজের ব্যাপারে সতর্ক থাকা ভালো। অতিরিক্ত ব্যাগেজ বা ওয়েটের জন্য আপনাকে এক্সট্রা চার্জ পে করতে হবে। হ্যান্ড ব্যাগে আপনি ১০ কিলো পর্যন্ত বহন করতে পারবেন।
রায়ান এয়ারের এয়ার পোর্টগুলো মেইন সিটি থেকে বেশ দূরে। যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হয়। গন্তব্যে পৌছতে সময়ও লাগে বেশ। তবে অন্যান্য এয়ার লাইন্স গুলো মেইন এয়ার পোর্ট থেকে যাতায়ত করে বলে এ ঝুকিটুকু থাকে না। ইউরোপের কোনো দেশ থেকে যেকোনো ডেসটিনেশনে যেতে প্রায় একিই সময় লাগে। দেড় থেকে দু ঘন্টায় আপনি পৌছে যাবেন যে কোনো শহরে। এ ভ্রমনে আপনার ক্লান্তি আসবে না এতটুকু।
এসব এয়ার লাইনস গুলোর কোন G S A নেই, ট্রভেল এজেন্সির মতো। টিকিট ক্রয় করতে হয় ইন্টারনেটে। টিকিট অনলাইনে টিকেট ক্রয়ের সময় একটু কেয়ার ফুল থাকা ভাল। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরুতে হয়। প্রতিটি ধাপেই অনেক গুলো ঘর পুরন করতে হয়, দিতে হয় ইনফরমেশন। ভুল করলে কম্পিউটার সাথে সাথে দেখিয়ে দিবে ভুল জায়গাটি। সর্বশেষে ব্যাংক কার্ড দিয়ে অন লাইনে আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে। টিকিট কাটার সময় আপনি একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। এতে টিকিটের দাম অনেক কমে যাবে। ভ্রমনের দুই মাস আগে যদি টিকিট কেটে রাখতে পারেন তাহলে অনেক কম দামে টিকিট পেয়ে যাবেন।
ইউরোপে স্বল্প ভাড়ার এয়ার লাইন্সের যাত্রা ১৯৯০ সালে। ইজি জেট ও রায়ান এয়ার প্রায় একই সময়ে যাত্রা শুরু করে ইংল্যান্ডের ষ্টনটেড এয়ারপোর্ট থেকে। আজ অনেকগুলো বছর পেরিয়েছে, প্রতিদিন বাড়েছে অনেক নতুন নতুন ডেসটিনেশন। বহরে যোগ হচ্ছে আরো নতুন নতুন এয়ার লাইন্স। এসব এয়ার লাইন্সের ভাড়া বাস কিংবা ট্রেনের ভাড়ার চেয়ে বেশ কম। অল্প সময়ে পৌছে দেবে অনেক দুরের কোনো জায়গায়। আর একারনেই লোকষ্ট এয়ারে যাত্রী সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
প্যারিস – ১৮।০১।২০১১ | Polashsl@yahoo.fr