Economic downturn, Public and Politics
মন্দা অর্থনীতি, দেশের জনগণ ও পলিটিক্স: আলমামুন আশরাফী
সারা পৃথিবীতে এখন অর্থনীতির মহামন্দা চলছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অর্থনৈতিক মহামারী আগে আসেনি, এমনকি বিশ্বযুদ্ধের সময়েও। এই ইকোনোমিক ডাইনটার্ণের সাইক্লোনে পড়ে প্রথম বিশ্বের অনেক দেশও এখন দিশেহারা, বেল-আইট নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে খোদ আমেরিকা। এতে সর্বশান্ত জনগণ রাস্তায় বসে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। হালের গ্রিস মন্দায় জনগণের ভাষ্য, আমার টাকা কেন সরকারকে দেব, যুক্তি কোথায়? দেশের দুরাবস্থার জন্য দায়ী সরকার, তাকেই অর্থের যোগান দিতে হবে। উল্লেখ্য, ইউরোপের বেলা-আইট নেয়ার পর প্রতি গ্রিস $৪০,০০০ ডলারের ঋণ বহন করছে। ধর্মঘটে এথেন্স এখন নির্বাক, জনগণ রাস্তায় স্বশ্বত্র। লন্ডনে শিক্ষকরা আন্দোলনে ও ধর্মঘটে ব্যস্ত নিজেদের চাকুরী ঠেকাতে। ছোটবেলায় শুনেছিলাম বন্ধ/ধর্মঘট নাকি ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের ফসল। কিন্তু এখন দেখছি এটা এশিয়া ছেড়ে ইউরোপ ঘুরে আমেরিকায় পাড়ি দেয়-দেয় অবস্থা।
গ্রিসে ও পর্তুগালে প্রায়ই ধর্মঘট হচ্ছে, আর পুলিশ পেদানি দিচ্ছে জনগণের (ভিডিও)। স্পেনে, আয়ারল্যান্ডে ও ইটালিতে বেশ ক’বার অঘটন ঘটতে গিয়ে থেমে আছে। ফ্রান্সে ও বৃটেনে নানাকারনে বেশ ক’বার আন্দোলন হল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বৃটেনের পুলিশের সামনে জনগণের আগুনের দামামা আর লাঞ্ছিত রাজপরিবার। অতিসম্প্রতি লন্ডনে ছাত্র আন্দোলন ছিল এ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য রায়ট যেখানে স্বয়ং রাণী এলিজাভেদের ফ্যামিলি লাঞ্ছিত হয়। ফলে পুলিশ মারমুখি হয়ে ছাত্র পেটায়, আহত হয় অসংখ্য। ফলে ইউরোপের পুলিশও যে জনগনের পেদানি দেয় তা সত্য যা এ ভিডিও ক্লিপ দেখলেই পরিষ্কার হবে। এখন মানবাধিকার এখানে মন্দা অর্থনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট, মরীচিকার মত ঘুরে ফিরছে নেতা/নেত্রীর বক্তৃতায়।
প্রথম বিশ্বের নেতারা অর্নগল মানবাধিকারের ধুয়া তুলে নাস্তানাবুদ করে উন্নতবিশ্বকে। কথায় কথায় চায়নার ও ইন্ডিয়ার মানবাধিকারের দিকে আঙ্গুল তুলে, সাবধান করে সাহায্য অপ্রাপ্তির। কিন্তু পরিস্তিতির আমুল পরিবর্তন হয়েছে। তাই এবারের ইউরোপ ভিজিটে ওয়েন জিয়াবাও পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিল, আগে নিজের চরকায় তেল দাও; রাস্তায় মানুষ পেঠানো বন্ধ কর। অন্যথায় আমাকে ডেকে যে আশার আলো ছড়াতে চেয়েছিল আপামোর জনগণকে তা থেকে বিরত থাকব (অর্থনীতির হুমকি!)। বলা বাহুল্য, চায়নাকে ডেকে আশার আলো ছড়াতে বলছে ইউরোপ যাতে নেতাদের গদিটা ঠিক থাকে। একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজী; গরু হারানোর জ্বালা কত ভয়ংকর তা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে ইউরোপ।
আমেরিকার অর্থনীতি এখন অত্যন্ত নাজুক, যে কোন সময় জনবিষ্ফোরণ ঘটতে পারে। টিভির টকশো এখন বলতে শুরু করেছে যে আমেরিকা আর কখনো অর্থনীতির মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না (29 June 2011 CBS NEWS)। ঠেলা সামলাও, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়! টেরোরিষ্ট তাড়াও স্লোগান এখন ভাত-রুজির আকালে পরিণত হতে চলেছে। কেউ যদি ভবিষ্যত বানী করে যে, আমেরিকার অবস্থা খুব তারাতাড়ি গ্রেট বৃর্টেনের অবস্থা হবে (নিজে বাচলে বাপের নাম) তবে মোটেও উত্যক্তি হবে না। কারণ সেদিন সামনে, অচিরেই দেখা যাবে ভাতের অভাব, শিক্ষা-দীক্ষা থমকে আছে টাকার অভাবে। যদি আমেরিকার পলিসিতে আমুল কোন পরিবর্তন না ঘটে (যেমন অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ ও রপ্তানী করা; তেল বা খনিজ) তবে বিপদ আসন্ন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাজেট কাটে শিক্ষাখাতে লালবাতি জলছে; লেখাপড়া গুটিয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। ব্যাংক মার্কেট অচল, রিয়েল এস্টেট খাবি খাচ্ছে কুল পাবার আশায়। টেরোরিষ্টের আড়ালে মুসলিম ঠেকাও বলে যে যুদ্ধ সারা দুনিয়ায় আমেরিকা শুরু করেছে তার শেষ হবে আমেরিকার ফকিরি দিয়ে।
ফ্রান্স ও জার্মানি বুঝতে দেরী করলেও এখন অনুধাবণ করছে হাড়ে-হাড়ে। তাই ওয়েন জিয়াবাউকে ডেকে আগুনে পানি ঢালার ব্যবস্থা করছে ইউরোপ (২২ জুন ২০১১)। কিন্তু সে আশা শাপে-বর কারণ চায়না কারো জন্য কিছু করলে এখন আগে নিজের কথা ভাবছে। তাই আগাম কোন বার্তা দিচ্ছে না। খোদ আমেরিকা এখন চায়নাকে বন্ধু বানাতে তৎপর (ওবামা ২০১০ সালের ভ্রমণে – চায়না আর শত্রু নয়, আমাদের প্রতিদ্বন্দি) কারণ ইতিমধ্যে চায়না আমেরিকাতে ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়ে রেখেছে; অনাদায়ে সব সাহায্য বন্ধের হুমকি। এতেই আমেরিকার মাথায় হাত, বাজেট ঘাটতিতে বেসামাল। তাই লিবিয়া থেকে গাদ্দাফি হঠাও স্লোগানে তেল চুরির পায়তারা করছে। কিন্তু বাধ সেধেছে ফ্রান্স ও জার্মানি, সাপে-নেউলে সম্পর্ক হতে বেশী দেরী নাই। বর্তমানে আমেরিকার বাৎসরিক বাজেট ঘাটতি ট্রিলিয়ন ডলারে। যদি এভাবে চলতে থাকে তবে আগামী ৫/১০ বছরে এর পরিমাণ দাড়াবে কয়েকশত ট্রিলিয়ন ডলারে। মার্কিন অর্থনীতিবিদরা এখন বসে বসে হুকা টানছে, চুরটের অভ্যাস প্রায় ফুড়ুৎ। ভাবছে কিভাবে ফেরা যাই ট্রাকে দাদাগীরি ফলাতে। অন্যথায় রসাতলে যাবে দাদাগীরি চিরতরে। ফলে আমেরিকার কাছে চায়নার মানবাধিকার এখন মরীচিকা।
হিলারি এখন ঝাড়ির বদলে মুচকি হাসি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে; নিজের অসময়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া’কে তাই তাড়া দিতে সময় নিচ্ছে। এতে মহাখুশি হাসিনা, জরাজীর্ণ/পুরাতন নিয়ম-কানুন আপডেট করছে বিরোধী দলকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে। জনগণের সামনে ডিজিটাল বাংলাদেশের মুলা ঝুলিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় রত। তাই খালেদার হুঙ্কার (দৈনিক ইত্তেফাক, ১ জুলাই ২০১১) হাসিনা জনগণের কথা অগ্রাহ্য করে সংবিধান পরিবর্তন করছে এবং দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যপক্ষে হাসিনা মসনদে বসে জনগণের দোহায় দিচ্ছে যে, আমরা জনগণের ইচ্ছা পুরণে কাজ করে যাচ্ছি (দেশ টিভি, ২৯ জুন ২০১১)। এখন প্রশ্ন হল, এখানে কে সত্যি কথা বলছে? দু’দল সমানে জনগণকে নিয়ে টানাটানি করছে, আর ঘোলাজলে মাছ শিকার করছে সুবিধাবাদীরা। এখানে জনগণ কিভাবে জড়িত? ভোটের মাধ্যমে ম্যান্ডেট দিয়েছে বলে? গুনীজনেরা বলছে এটা একটা ব্লাক গেম, দেশ সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে (ভোরের কাগজ, ১ জুলাই ২০১১)। জনগণ দু’দলকে বলেনি যে মারামারি কাটাকাটি কর, গাড়ী-বাড়ীতে আগুন লাগাও! উপরের চিত্র দেখলে আত্তারাম খাচাছাড়া হয়ে যাই, রাস্তায় বেরুতে বুক দুরু-দুরু করে। ভালোর পসরা খুলে বাইস্কোপ দেখালে চলবে না (bdnews24.com, ২৬ জুন ২০১১), জনগণ হাতেনাতে তার প্রমান চায়, প্রমাণ। দু’দলকে একসাথে বসে ডিসিশন নেয়া উচিত পরবর্তী ইলেকশন কিভাবে হবে, এখানে কোর্ট কি বলছে সেটা অগ্রাহ্য। কোর্টের প্রতি অতি ভক্তির যথেষ্ট কোন কারণ নাই যেখানে টাকায় বিচার কেনাবেচা হয় যা কিনা স্বয়ং এক্স প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেছেন (জাস্টিস কনভেনশন, ঢাকা ২০১১)।
দেশ যখন উন্নতির স্বপ্ন দেখছে তখন নষ্ট পলিটিক্সে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। দু’দল মারমুখি অবস্থানে। খালেদা হরতাল দিচ্ছে আর হাসিনা পুলিশ দিয়ে মানুষ পিটিয়ে তক্তা করছে। মাঝপথে জনগণ হারাচ্ছে দেশের যশ, খ্যাতি ও অর্থ। এখন কথা হল, জনগণের অর্থ নিয়ে কেন পলিটিক্স হচ্ছে? তারা ভোট দিয়েছে দেশ সত্য ও সঠিক পথে পরিচালনা করতে, নষ্ট করার জন্য নয়। যদি তাই হয়, তবে দু’দল বসে এর সমাধান না করে সংঘর্সে জড়িয়ে পড়ছে কেন? গদিতো সারাজীবনের জন্য নয়! গাদ্দাফি ও বাসার আল আসাদ তাদের মসনদ ধরে রাখতে পারছে না যা কিনা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি বিগত ৩০/৪০ বছর ধরে। আজ হোক কাল হোক, দেশের ক্ষমতার পরিরর্তন হবে, আসবে নূতন দল। তবে সাময়িকভাবে কেন দেশের অর্থ ও স্বার্থ জলাজ্ঞলি দেয়া; পরিবেশ নষ্ট করা? রিয়েলিটি অগ্রাহ্য করে সংসদের সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে কেন তবে এ মাস্তানি? আমি যা করবো তাই হবে, সবাই বসে আঙ্গুল চুসবে এ মনভাবের কারণে একবার ১/১১ হয়েছে! মনে রাখা দরকার যে, স্বয়ং আমেরিকা আজ ধরাশয়ী, ইউরোপ হাওমাও করছে টাকার অভাবে সেখানে আমরা কেন সংযত হচ্ছি না! রাজনীতিবিদরা কেন তা না বুঝে নষ্ট পলিটিক্স করছে জনগণের সাথে! জনগণ আশা করে যে, বড় দু’দল একসাথে বসে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিক, দূরে থাক অনাচার থেকে যা দেশ গঠনে অন্তরায়। দু’দল বসে একত্রে বসে সঠিক ডিসিশন নিয়ে জাতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাক এ প্রত্যাশা করে জনগণ।
গভেষক ও শিক্ষক