Beyadopy Maaf Korben

Beyadopy Maaf Korben

বিয়াদবী মাফ করবেন

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। স্রষ্টা প্রদত্ত স্বর্গ থেকে পাওয়া ভাষা। যে ভাষার জন্য এত রক্তপাত, যে ভাষায় এনেছে স্বাধীনতা, দেশ এবং পতাকা, সে দেশেই বাংলাভাষা যেন অচল, অবহেলিত। এখন কারো বাসায় আর বাংলা টিভি চলে না। বাংলাদেশে বাংলা নেই অবস্থা! পথে পথে ভুল, ভুল সর্বত্র। বুঝি না ‘এসো না’ এবং ‘এসোনা’ শব্দের পার্থক্য। খাই নি, চাই নি, যাই নি সব সময় দুই শব্দ। এখন আমরা এক করে নিয়েছি। লিখি ‘খাইনি’। সাধু- –চলিত ভাষার বাছ-বিচার বর্তমানে অনেকের কাছে নেই বল্লেই চলে। এই ভুল বড় বড় লেখকেরাও করেন। আমরা মাইন্ড কনি না। কারণ, তিনি বড় (?) লেখক।

প্রসঙ্গক্রমে বলি, পাথর ঘাটার সেবক কলোনীর পাশের রাস্তায় একটি পোষ্টার আমার নজর কাড়ে। হিন্দু ভাইদের একজন পরম পুরুষের স্মরণ সভা হবে। কিন্তু বানানটি করেছেন ‘স্বরন’ করে।

নজরুল স্কোয়ার্ড (ডিসি হীলে) জেলা প্রশাসক পকেটের টাকায় একটি শুভেচ্ছা বাণী লিখেছেন।—‘নব বর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বাসীকে শুভেচ্ছা’। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কোন ধরণের শুভেচ্ছা? ‘বাসী’ শব্দটি আলাদা হওয়াতে এর অর্থ হবে পুরাতন, পচাঁ-গলা, বা যা তাজা নয়। কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য যদি ‘বাসী’ সম্ভাষণ হয়, তিনি যদি চট্টগ্রামবাসীকে ‘বাসী’ মনে করেন তা হলে আমার কিছু বলার অধিকার থাকার কথা নয়।

গত ১১ মে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে চট্টগ্রাম ইতিহাস গবেষক সম্মিলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। তার পরের দিন একই সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য মাওলানা ইসলামাবাদী উচ্চ বিদ্যালয়ে যাই। আমি অন্যান্যদের জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করতে ছিলাম। খুটিয়ে খুটিয়ে ব্যানার, দেয়াল লিখন ও পোস্টার পড়া আমার অভ্যাস। সেখানে প্রধান শিক্ষকের অফিসের সামনে দেখলাম মাওলানা সাহেবের গ্লাস ভাঙ্গা প্রতিকৃতি। একটু নিচে তাঁরই রচিত ছয় লাইনের একটি ছান্দিক কবিতা। কিন্তু পড়তে গিয়ে আমি পড়তে পারছিলাম না। কারণ, কর্তৃপক্ষ নিচের দিক থেকে শেষের পঞ্চম লাইনে মিল যথাযথ রাখেন নি। কবিতাটি যেহেতু সমিল, সেহেতু শব্দের সঠিক ব্যবহার যুক্তি যুক্ত ছিল। যাঁর নামে এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান তাঁকে দুই হাত জায়গা ছেড়ে দেন নি কর্তৃপক্ষ। আর আরবী বানানরীতি অনুযায়ী ‘মৌলানা’, ‘মওলানা’ না হয়ে ‘মাওলানা’ হওয়াটাই সঙ্গত আরবী গ্রামার মনে করে।

আমরা সারা জীবন ‘রবীন্দ্রনাথ’ এক শব্দ পড়েছি। স্কুলের ২য় তলার শ্রেণী কক্ষের দরজায় দেখলাম ‘রবীন্দ্র নাথ’। দুই শব্দ। সক্রেটিসের একটি বাণীতে ‘গুণ’ শব্দটি হয়েছে ‘গুন’। ভাগ্যিস ‘ঘুণ’ হয়ে যায় নি। ‘যথাক্রম’ এক শব্দ হওয়া নিয়ম। লেখা হয়েছে দুই শব্দে ‘যথা ক্রম’ রূপে। ‘স্কুল পরিচালনা পর্ষদ’এর একটি তালিকা চোখে পড়ার মত। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছে, কর্তৃপক্ষ কারা কারা স্কুল চালান তার একটি তালিকা জনগণকে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু একটি ‘দাঁড়ি’র কারণে তাঁদের সে মহৎ প্রত্যাশা সফল হয় নি । ‘স্কুল পরিচালনা পর্ষদ’ লিখে কর্তৃপক্ষ ‘দাঁড়ি’ বসিয়েছেন। শিরোনামে দাাঁড়ি। যার কারণে, বর্ণিত ব্যক্তিবর্গ কে তা আর পরিস্কার হয় নি। ধরে নিলাম, পরিষদের সভাপতি আ জ ম নাছির ভাই। কিন্তু আ-তে কমা, জ-তে কমা, ম-তে কমা কেন হবে তা আমার ঘিলুতে আসে না। প্রশ্নটি তাঁরাই প্রকট করেছেন। কারণ, মোমিন রোর্ডের মেইন গেইটের সাইনবোর্ডে কর্তৃপক্ষ আ-তে ফুল ষ্টপ, জ- তে ফুলষ্টপ, ম-তে ফুলষ্টপ বসিয়েছেন। তা হলে শুদ্ধ বানান কোনটি? উত্তরটি একমাত্র নাছির ভাই-ই দিতে পারবেন। কারণ, নামটি তাঁর পিতা প্রদত্ত সম্পদ। এ ছাড়াও আরো অনেক ভুল বানান বা ভুল সাংকেতিক চিহ্নের প্রয়োগ চোখে পড়ার মত। যা একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলের দেয়ালে মানায় না। তদুপরি, এলাকাটি ‘সংবাদপত্র পাড়া’ নামেও পরিচিত।

আমরা ইউরোপে বসে অনেক কষ্ট করে বাংলা চর্চা করি। পরিবেশটি আমাদের অনুকুলে নয়। তারপরও আমরা লিখে যাই। বাংলা-ইংরেজি মিলে আমার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৯। বাংলা ভাষার উপর আমার অনেকগুলি প্রবন্ধ- নিবন্ধ আছে। বাংলাভাষার ঐশ্বর্য, শব্দের লালিত্য, ছন্দের মোহময় দ্যোতনা নিয়ে আমি ইউরোপের পত্রিকায় বহুবার লিখেছি, সেমিনার করেছি। বাংলাদেশের বাংলাই তো আমার আদর্শ এবং ঠিকানা । প্লিজ, আমাকে হতাশ করবেন না।

জানি, ইউরোপ থেকে এসে এ সব কথা বলা মানে বিয়াদবী করা। তাই নিজ গুণে মাফ করবেন বলে আশা করি।

বিনীত,

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাবিবী
প্রফেসর এন্ড কো-অর্ডিনেটর দি সেন্ট্রাল কলেজ অফ লন্ডন।
sagarsahara@hotmail.com

2011/pdf/Letter_to_news_806318959.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment