Article on 2011, 16 December in Bangla
২০১১ এর ১৬ই ডিসেম্বরঃ আসুক “মিবকি”, আনুক বাংলাদেশের নবজন্ম
আর অল্প কিছুদিন পরেই আসছে ২০১১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর । ১৬ই ডিসেম্বর – ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে অনেক রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীনতা । সেদিন আমরা দেখেছিলাম অনেক মধুর স্বপ্ন । চল্লিশ বৎসর পরে আজ আমাদের সব স্বপ্ন অস্তমিত । হতাশা আমাদের নিত্য সঙ্গী, অন্ধকার আমাদের ভবিষ্যত, অন্ততঃ ২০১৩, অর্থাৎ এই সরকারের সময়কালে আমাদের আরো খারাপ ছাড়া ভালো কোন কিছুর আশা নেই । কেনই বা করবো আশা ? এই রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার খরচ যে বিপুল খরচ তা কি আমরা দিই ? অথচ এরা যে কি বিপুল পরিমান টাকা করে খরচ রাজনীতি করে তা তো আমরা সবাই জানি এবং বুঝি । এদের রাজনীতি করার খরচ যারা যোগায়, তাদের স্বার্থইতো এদের দেখতে হবে ।
অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ হলেই তো তিনি হতে পারেন বাংলা দেশের মতন একটা দেশের অর্থমন্ত্রী । অর্থনীতির মূল কথাই হচ্ছে,কেমন করে আয় বাড়াতে হবে,কেমন করে ব্যয় কমাতে হবে,কোন খাতে কেমন করে বিনিয়োগ করা হলে ভবিষ্যতে বেশি লাভ, বেশী সুবিধা পাওয়া যাবে । দেশের অর্থমন্ত্রী যদি হেসে হেসে বলেন,‘ট্রানজিটের জন্য ফি চাওয়া অসভ্যতা’ তাহলে সেদেশে আপনি কি আশা করতে পারেন ? ফলশ্রুতি ঃ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার নিয়ে সরকারের দেশ চালানো ।
বাংলাদেশের চল্লিশ বৎসরের জীবনের একটা বিরাট অংশ কেটেছে সামরিক শাসকদের কুঃশাসনে । তাদেরই কিছু সদস্য (বলা হয়,বিপথগামী সদস্য) হত্যা করেছে এই দেশের দুই জন জনগনের নির্বাচিত কর্নধারকে,যাদের একজন আবার আমাদের জাতির জনক । জনগন তাদেরকে ভয়ের চোখে দেখতেই পারে । কিন্তু জনগনের নির্বাচিত সরকারও কি তাই করবে ? দেশের মানুষ, বিশেষতঃ পরিবেশের উন্নয়নে জড়িত সংস্থাগুলি স্পষ্ট বুঝতে পারে,সরকার কি ভাবে তাদেরকে সমীহ করে চলে,আর সেই সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্ম পরিকল্পনা করে ।
উইকিলিকসের তথ্য অনুযায়ী,এদেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে আমেরিকান কোম্পানীকে গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল । এর দুই বৎসর পর সরকার সেই চুক্তি স্বাক্ষর করে । সেই দেশ কি গোপনে বিশেষ কিছু দেবে, এমন কথা দিয়েছে ? না হলে কেন এই অনৈতিক বিশেষ সুযোগ ? বাংলাদেশ ও আমেরিকার সরকারের কাছ থেকে এখন পর্য্যন্ত এর কোন প্রতিবাদ না আসায় এটা সত্যি বলেই ধরে নেয়া যায় ।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলে, যারা চাঁদাবাজি,ফুটপাথ বিক্রী আর আইন ভঙ্গকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কমিশনের টাকায় রাজনীতি করে,তাদের কাছ থেকে দেশবাসী সাধারনভাবে কিছু আশা করতে পারে থাকে না । তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করতে পারে কেবলমাত্র তারাই যারা এই চাঁদা বা কমিশন দিয়েছে বা দিচ্ছে । অভিজ্ঞতা আরও বলে, এই প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করতে হয় বলেই এদেশে সৎ মানুষেরা রাজনীতিতে আগ্রহী হয় না ।
দেশের বাজেট থেকে রাজনীতি করার টাকা দেবার ব্যবস্থা থাকলে অবস্থা অন্যরকম হতো । জনগন রাজনীতিকদেরকে বলতে পারতো, ‘কি ভাবে কোথায় টাকা খরচ করছ জানাও । টাকা আমাদের, তাই আমাদেরকে হিসাব দেখাতে তোমরা বাধ্য ।“ এখন তাদের জবাবদিহিতা আইন ভঙ্গকারী চাঁদা দাতাদের কাছে । আইন ভঙ্গকারীদের টাকায় চলা রাজনৈতিক দলের কাছে জনগনের মঙ্গলের আশা করে কোন লাভ নেই । আরো একটি বিশেষ কারনে এই সরকারের কাছ থেকে ভাল কোন কিছু আশা করা যায় না । “ঊন্নতি হয় তাদেরই যারা নিজের ভূল বোঝে, আর তা তা সংশোধনের ব্যবস্থা করে” । এই সরকার কখনই মনে করে না যে তাদের কোন ভূল হয়েছে । তাদের ব্যবহারে এটা স্পষ্ট যে, মন্ত্রী নির্বাচন থেকে শুরু করে দলের লোকদের কাজ দেয়া পর্য্যন্ত কোন কিছুতেই তাদের কোন ভূল নেই । তারপর নিম্ন মানের কাজ ধরা পড়লে চাকরী যায় নিরীহ প্রকৌশলীদের । এতো সেই কলা আর বিজ্ঞানের চিরন্তন বিবাদ । আগে বড় সরকারী আমলাদের ছেলেরা বিজ্ঞান পড়তে আসতো বলে তাদের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল । তাদের ছেলেমেয়েরা এখন এত কষ্টের বিষয় ছেড়ে বেশী লাভের সহজ বিষয় কলা আর বানিজ্য পড়ছে বলে, কলা প্রভাবিত আমলাদের আগের মনোভাব আবার ফিরে এসেছে ।
সরকারের উপর ভরসা করা বাদ দিন । আসুন দেখি,আমরা নিজেরাই কিছু করতে পারি কি না । আসুন, আমরা যারা দেশের জন্য কিছু করতে চাই তারা মনে প্রানে “মিবকি”কে আহবান করি, এর সাফল্যের জন্য চেষ্টা করি । “মিবকি” কি ? “মিবকি” হচ্ছে তিন অক্ষরের একটি শব্দ, আমরা, যারা একটি নির্বাচিত সরকারের দুঃশাসনের শিকার, যারা বাংলাদেশকে এই পৃথিবীতে একটি সন্মানজনক অবস্থানে দেখতে চাই, তারা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ঃমিবকি”কে একটা আন্দোলনে পরিনত করতে পারি । “মিবকি” হচ্ছে একটি লাইনের সংক্ষিপ্ত রূপ, যে লাইনটি হচ্ছে, “মিথ্যা বলছি / বলছেন / বলছ / বলছিস কি ?”
মিথ্যা কথা বলা বাংলাদেশীদের সবথেকে বড় দোষ । বিদেশ সম্বন্ধে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন, পশ্চিমা উন্নত দেশের মানুষ মিথ্যা কথা খুব বলে । সে দেশের বাচ্চাদের ছোটবেলায় শেখানো হয়, যত যাই হোক মিথ্যা কথা বলবে না ।“ শুধুমাত্র ব্যতিক্রম, গল্পে, খেলা আর কৌতুকে । আসলে মিথ্যা ছাড়া এগুলি বাঁচতেই পারে না ।
মিথ্যা কথার অপকারিতা সম্বন্ধে একটা গল্প বলা যাক । গল্প যেহেতু, তাই মিথ্যা এখানে থাকবেই । তবে এই মিথ্যা বলা হয় মানুষের উপকার করার জন্য । গল্পটা হচ্ছে, জামাই হিসেবে একটা ছেলেকে এক পরিবারের খুব পছন্দ হয়েছে । হবু শ্বাশুরী তবুও স্বামীকে বলছে, ‘খোজ নাও, কোন দোষ আছে কি না ।“ শ্বশুর প্রশ্ন করলেন, “বাবা, তুমি কি মদ খাও, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে জুয়া খেল বা কোন বাজে জায়গায় যাও ?” বিনয়ে গদ গদ হয়ে হবু জামাই বললো, “জীবনে এসব করি নি” । শ্বশুর খুশী হয়ে শ্বাশুরীকে বললেন, ‘নাঃ, কোন দোষ নেই । এবার খুশী ?’ শ্বাশুরী বললো, প্রশ্ন করো তো, একেবারে সামান্য, মানে ধরার মধ্যেই নয় এমন কোন দোষ আছে কিনা । এই প্রশ্ন করা হলে হবু জামাই উত্তর দেয়, “একেবারে নগন্য একটা দোষ আছে । তা হলো মিথ্যা কথা একটু বেশি বলি ।“
মিথ্যা কথা যে বলে তাকে বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারন আছে কি ? আসুন, জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা মিথ্যুকদেরকে বর্জন করি । কাউকে কিছু বলার সাথে সাথে নিজেকে প্রশ্ন করি, “মিবকি?” (মিথ্যা বলছি কি ?) আমার কথা শুনে যে জবাব দিচ্ছে তার কথার উত্তরে বলি, “মিবকি?” (মিথ্যা বলছেন / বলছ / বলছিস কি ?) । আমাদের ক্ষতি করতে পারি এমন লোক সামনে থাকলে অন্ততঃ মনে মনে বলি “মিবকি?” বাড়িতে বা পারিবারিক পরিবেশে আমরা অনেক স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারি । টেলিভিশনে আমরা প্রতিদিনই আমাদের নেতা নেতৃদের কথা শুনি । কে কার সন্তান, কে কার পত্নী, কে কার স্বামী, কে কার ভাই তা আমাদের দেখার দরকার নেই । এদের কেউ মিথ্যা বললেই আমরা উচ্চারন করবো, “বিমকি” । পরিষ্কার করে করে জানিয়ে দেবো, আমাদের পরিবারের লোকজন বা বন্ধুবান্ধবেরা যেন মিথ্যাবাদীকে চিনতে পারে, তাদেরকে উপরে বর্নিত “হবু জামাই”য়ের ভূমিকায় মূল্যায়ন করতে পারে ।
বাজারে অনেক সুন্দর সুন্দর স্টিকার পাওয়া যায়, যাতে লেখা থাকে “মিথ্যা বলা মহাপাপ” । এই শ্লোগানে আমাদের চলবে না । এই শ্লোগানের মধ্যেই সর্ষের ভুত লুকিয়ে আছে । যে সব ধর্ম ‘একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টি কর্তা ও বিচারক আছেন, তিনি সব অপরাধের বিচার করবেন, পাপীকে নরকে শাস্তি দেবেন’ এসব কথা বলে, এবং এরই ধারাবাহিকতায় বলে থাকে “মিথ্যা বলা মহাপাপ” তারা নিজেরাই কিন্তু সত্যের প্রতি একশত ভাগ সন্মান দেখাতে পারে নি । সেটা দেখাতে পারলে তারা বলতো, আমরা বাপ দাদার কাছে শুনেছি, বা পুরানো বই পত্রে পড়েছি ‘‘একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টি কর্তা …………।নরকে শাস্তি দেবেন’ ইত্যাদি । মুক্ত মন নিয়ে বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখতে পারেন ।
উপরে আমরা বলেছিলাম, বিদেশে ছেলেদেরকে ‘মিথ্যা বলোনা’ বললে তারা তা শেখে, সারাজীবন মনে রাখে । অথচ আমাদের দেশে সে একই শিক্ষা “মিথ্যা বলা মহাপাপ” রূপে শেখানোয় তারা তা শেখে না, বা কিছুদিন পরেই তা অগ্রাহ্য করে । এর কিন্তু একেবারে যৌক্তিক এবং সহজ বোধ্য কারন আছে । আমাদের দেশে মিথ্যে না বলতে বলা হয় একজনের শাস্তির ভয়ে । অথচ ছেলেমেয়েরা একটু বড় হয়ে দেশ বিদেশ সম্বন্ধে জেনে, বিজ্ঞান পড়ে সেই একজন সম্বন্ধে সন্ধিহান হয়ে পড়ে । আর সেই সঙ্গে সেই একজনের অজুহাত দিয়ে শেখানো সকল আদর্শ বাক্য তাদের কাছে অকার্য্যকরী হয়ে পড়ে । এ কথা সত্যি বলেই “আমাদের দেশের সব ধার্মিক লোক সত্য কথা বলেন” এ কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না । এর বিপরীতে বিদেশে ছেলেমেয়েদের শেখানো হয়, ‘তোমরা মিথ্যে বলবে না কারন তোমরা মানুষ । মানুষ হিসেবে পরিচয় পেতে গেলে মিথ্যা বলা চলবে না । যারা মিথ্যা বলে তারা মানুষের মতন শরীর নিয়ে আসলে অমানূষ ।‘ তাদের এই শিক্ষা সারাজীবনেও ম্লান হবার সুযোগ থাকে না ।
আমরা যদি দেশের মানুষকে সত্য কথা বলা শেখাতে পারি, তাহলেই আমরা দেশের মঙ্গলের জন্য একটা বিরাট কাজ হবে । একজন লোক যদি জানে যে তার পক্ষে মিথ্যা কথা বলা সম্ভব নয়, তাহলেই কিন্তু তার আচরনে কাজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে । বিদেশের অনুকরনে আমরাও বলবো, কেবল মাত্র গল্প, খেলা আর কৌতুকের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যাবে । এর বাইরে মানবিক কারনে (যেমন যেখানে সত্য মিথ্যার উপর কোন মানুষের বেঁচে থার মতন বিষয় জড়িত থাকে) মিথ্যা বলে যাবে ।
বাংলাদেশের মানুষকে সত্য কথা বলে শেখানোর জন্যই আমাদের আন্দোলন – “মিবকি” । শুরুই করা হবে নিজেকে দিয়ে । যে কোন কথার প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করে নিতে হবে, “মিবকি”? এরপর এই শব্দ প্রয়োগ করা হবে সর্ব ক্ষেত্রে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিঃশব্দে । তবে সেক্ষেত্রেও আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে নানা ভাবে । আমাদের বোঝাতে হবে, মিথ্যে না বলা কোন গুন নয়, এটি হচ্ছে মানুষ হিসেবে পরিচয় পাবার সাধারন যোগ্যতা ।
মিথ্যা না বলার জন্য আমরা নানা শ্লোগান তৈরী করতে পারি । কম্পিউটারে এগুলো টাইপ ও নানা আকারে প্রিন্ট করতে পারি । সেখানে লে্খা থাকতে পারে, (০১) মানুষ হিসেবে যারা পরিচিত হতে চায় তারা মিথ্যে বলে না । (০২) মিথ্যে বলবো না, কারন আমি মানুষ । (০৩) মিথ্যা না বললে ভাত পাওয়া যায় না – এ কথাটাই মিথ্যে । (০৪) যারা মিথ্যে বলে তারা অমানুষ । (০৫) যারা মিথ্যে বলে তাদেরকে, তাদের পরিবার পরিজনকে করুনার দৃষ্টিতে দেখুন । সেই সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিশেষ বাক্যও আসতে পারে । যেমন ঃ (০১) বস, আপনি মিথ্যা কথা বলেন কেন ? (০২) আমার স্ত্রী / ছেলে / মেয়ে / ভাই / বোন মিথ্যা কথা বলে একথা ভাবতে আমার ঘৃনা হয় । (০৩) আপনি মিথ্যা কথা বলায় অভ্যস্ত, তাই আমি জানি আপনাকে দেয়া ধার আমি কোন দিন ফেরত পাবো না । (০৪) মিথ্যে কথা যে বলে তার বন্ধু হওয়া বিপজ্জনক, না জানি কখন ধার চেয়ে বসে । (০৫) তিন মাস পরে আবার যখন আপনার / তোমার কাছে আসবো, আশা করি তখন একজন মানুষকে দেখতে পাব, ইত্যাদি । নানা আকারে এসব শ্লোগান লিখে বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে । মিথ্যায় অভ্যস্ত বসের টেবিলে তার চোখের আড়ালে লাগিয়ে রাখলে কাজ হতে পারে । তার কোন বন্ধু হয়তো হেসে তাকে বলে দেবেন, “তোমার অফিসের লোকজন বোধহয় তোমার টেবিলে একজন মানুষ দেখতে আশা করে ।“ তাতে যদি আপনার মিথ্যে কথা বলা বসের বোধোদয় হয় ।
আমি বিভিন্ন ধর্মের প্রার্থনাগৃহে অনেক ভালো ভালো কথা লেখা দেখেছি । কিন্তু “যারা মিথ্যা কথা বলে এখানে তাদের প্রবেশ নিষেধ” এমন বাক্য কোথাও দেখি নি । এবিষয়ে আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে, যা বলার প্রয়োজন নেই । দেশ স্বাধীন হবার পর দেশের প্রথম শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা মিথ্যা পরিহারের একটা সুযোগ পেয়েছিলাম । এরপর এই শাসনতন্ত্রে ধর্ম যোগ করা হয়, এবং তা এখনও বহাল আছে । সেই সাথে রাষ্ট্রীয় ভাবে মিথ্যাকে নির্বাসন দেবার সুযোগও নষ্ট হয়েছে ।
রাজনীতিকরা ভালো না হলে দেশের অবস্থা ভালো হবে না একথা সবাই বোঝে । দেশের যত জ্ঞানীগুনী শিখিত মানুষ, একেবারে সর্বোচ্চ পর্য্যায় থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্য্যন্ত, তারা সবাই কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের অধীন । অথচ চাঁদাবাজি,ফুটপাথ বিক্রী আর আইন ভঙ্গকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কমিশনের টাকায় রাজনীতি করা মানুষেরা যে কত ভালো হবে তা বুঝতে বেশি বুদ্ধি লাগে না ।
অর্ধেক সময়কাল শেষ করা এই সরকারের কাজের নমুনা দেখার পর এদের কাছে দেশের সাধারন মানুষের আশা করার কিছু নেই । তবে ভবিষ্যৎ কোন সরকার যদি দেশের বা মানুষের টাকায় রাজনীতি করার প্রয়োজনটা বোঝে, আর তেমন ব্যবস্থা করে তাহলেই আমরা ভালো রাজনীতিক পাব । সেই প্রয়োজনে আমাদের দরকার হবে মানুষের মধ্যে মানুষ হবার ন্যুনতম যোগ্যতা (গুন নয়) গুলি জাগিয়ে তোলা । আর এই যোগ্যতার প্রথমটিই হচ্ছে, মিথ্যা কথা না বলা । এ পর্য্যন্তি মানুষ যা কিছু করেছে সবই নিজের চেষ্টায় করেছে । ভালো কিছু করতে হলে আমাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে, কাজ শুরু করতে হবে । এক্ষেত্রে আমরা মহৎ উদ্দেশ্য পূরনের জন্য একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা শুরু করতে পারি । আমরা আগামী ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই আমরা নিজেদের একক প্রচেষ্টায় কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারি ।প্রস্তুতি সামান্যই, নানা আকারের কিছু শ্লোগান তৈরী করে রাখা । এরপর ১৬ই ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ থেকে শুরু হতে পারে আমাদের আন্দোলন, যার নাম “মিবকি” (মিথ্যা বলছি / বলছেন / বলছ / বলছিস কি ?), যার শুরু নিজেকে দিয়ে ।
অধ্যাপক বিজন বি শর্মা । স্থাপত্য বিভাগ । আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।