Article on Bangladesh by Nirbodh 3rd part

Article on Bangladesh by Nirbodh 3rd part

বাংলাদেশ বার বার ঘুইরে মাগুড় চ্যাং – এর গভীর শিকড় কোথায়? (৩য় পর্ব)

অনেকেরি সংশয় কাটে না যে বাংলদেশের কালা উপনিবেশিক প্রথিষ্ঠানগুলির আর আমাগো উপনিবেশিক মানসিকতাই আমাগো আজকের অবস্থার মূল কারন। এইটা কয়েক পুরুষ অই উপনিবেশিক প্রথিষ্ঠানগুলির আর মানসিকতার অধিনে থাকারই ফল – আমাগো অজান্তেই আমাগো মগজে বড় গভীর এর মূল, ভীষন সর্বব্যাপি এর প্রভাব আমাগো চিন্তা আর চেতনায়। তার উপর ওই কালা উপনিবেশিক প্রথিষ্ঠানগুলিতে আছে আমাগো শিক্ষিত ভদ্রলোকদের ভাই, বাপ চাচা, মামু আর দোস্তেরা, তাই বুইঝাও না বুঝতে চাই না – দেশের সমষ্টিগত ভয়াবহ ভবিষ্যত বুঝতে চাই না।

হাতের কাছে পৃথিবির মানচিত্র থাকলে একে একে এশিয়া, আফ্রিকা আর দক্ষীন আমেরিকার মানচিত্র খুইলা গুনেন – গুইনা দেখেন কতোগুলি দেশ ইউরোপিয়ান দেশগুলির উপনিবেশ ছিল। তারপর চেক কইরা দেখেন, তাদের স্বাধিনতার প্রায় ৬০ বছর পর এই প্রায় শখানেক দেশের মধ্যে কয়টা দেশ তার বেশিরভাগ নাগরিকের আর্থসামাজিক ভাগ্য উন্নয়নে সমর্থ হইছে? খালি সিঙ্গাপুর মালায়েশিয়ার মতো হাতে গোনা কয়টা দেশ পাইবেন যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমি নেতাদের অধিনে সফল্ভাবে সব উপনিবেশিক জঞ্জাল উপড়াইয়া নিজেদের মতো কইরা নিজেদের স্বার্থে নতুন কইরা যাত্রা শুরু করছিল; এছাড়া আছে তেলের পয়সায় ভাসা, যতদিন তেল আছে ততোদিনের কয়টা দেশ।

আর বাকি সব দেশগুলি? বাকি সবাই মাশাল্লাহ্ আমাগো মতোই বার বার ঘুইরা মাগুড় চ্যাং হইতাছে গত ৬০ বছর ধইরা। নিজস্ব কিছু পরিপারশিকতা বাদে তাদের সবার অবস্থা মোটামুটি আমাগো মতোই – সিমাহিন দুর্নিতির মাধ্যমে ৫% রাজনিতিক, আমলা জেনারেল, আর তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি ধনিক বনিকদের হাতে দেশের সব সম্পদ আর ক্ষমতা পঞ্জিভুত, নামেমাত্র গনতন্ত্র থাকলেও তা অই ৫% এর হাতে বন্দি; বাকি ৯৫% মানুষের জন্য আইন নাই, বিচার নাই, অধিকার নাই – রাষ্ট্রের কোনো কিছুতেই কোনো ভুমিকা নাই – মানবেতর ভাবে তারা শুধু কোনোমতে বাইচা থাকার চেষ্টায় সদা ব্যাস্ত। আর একটা বিশেষ বিষয়ে আমাগো সাথে তাদের সবাইর ভিষন মিল – মারহাব্‌ আমাগো মতো তাগো ৫% শাসক শ্রেনীও কালা উপনিবেশিক রাষ্টিয় প্রথিষ্ঠান, শিক্ষা আর মানসিকতারে স্বযত্নে লালন করতাছে নিজেদের স্বার্থে।

অনেকে হয়তো ইন্ডিয়ার কথা তুলবেন একটা ব্যাতিক্রমি উদাহরন হিসাবে। ইন্ডিয়ার ইদানিং কালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইন্ডিয়ার বিপুল সম্ভবনারই ইঙ্গিত দেয়, কিন্তূ এই উন্নতির সুফল শুধু ১০-১৫% ভাগ উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত, এবং উচ্চ বর্নের কাছেই পৌছাইতেছে, ইন্ডিয়ার বাকি বিশাল দরিদ্র, নিন্মবিত্ত আর অচ্ছুত জনগোষ্ঠির ভাগ্য বদলাইতে পারতেছে না – বিশেষ কইরা ইন্ডিয়ার সবচেয়ে জনবহুল ও পশ্চাদপদ প্রদেশগুলিতে – বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ সহ বহু প্রদেশে ক্রমবর্ধমান বিশাল আর্থসামাজিক বৈষম্যের কারনে চরম রাজনৈতিক মেরুকরন ঘটতেছে, প্রচন্ড সামাজিক ক্ষোভ পঞ্জিভুত হইতেছে যার বিস্ফোরনে ভারত অদুরভবিষ্যতে মুখথুবরাইয়া পরতে বাধ্য, এমনকি ভাইঙ্গাও যাইতে পারে। এর গভিরেও আছে ওই একি কারন – স্বাধিনতার পরে ইন্ডিয়ার শাসক শ্রেনীও কালা উপনিবেশিক রাষ্টিয় প্রথিষ্ঠান, শিক্ষা আর মানসিকতার সাথে সাথে তাদের আদি জাত পাত সমাজব্যাবস্থা স্বযত্নে রাইখা দিছে – সমাজ ও রাষ্ট্রিয় ব্যাবস্থা বদলানের এবং জনগোষ্ঠিকে রাষ্ট্র সম্প্রিক্ত কইরা সমষ্টিগত উন্নয়নের বিশাল উদ্দ্যোগ নেই নাই। এত বিশাল সম্ভবনা থাকা সত্তেও সেই কারনেই ইন্ডিয়া তার বিশাল সংখাগরিষ্ঠ নাগরিকের আর্থসামাজিক ভাগ্যোন্নয়নে ব্যার্থ হইতেছে – ইন্ডিয়াও আমাগো মতো আর সব প্রাক্তন কালা উপনিবেশের ধারায় তার টিমের বাকি সবাইরে চরম অবজ্ঞায় বসাইয়া রাইখা ১-২ জনের টিম নিয়া খেলার অসম্ভব স্বার্থপর বেকুবি চেষ্টায় ব্যাস্ত –

আর চিন, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর মালায়েশিয়ার ভিয়েতনামের মতো দেশগুলি খেলতাছে ১১ জনের স্বমন্নিত পুরা টিম নিয়া, উন্নত দেশগুলির মতো, বা তাদের চেয়েও অনেক বেশি সংঘঠিত ভাবে। এইদেশগুলি হয় কোনোদিনই উপনিবেশ ছিল না, অথবা উপনিবেশিক প্রথিষ্ঠানগুলিরে আর মনসিকতারে শেকড় গাড়তে দেয় নাই, আর নাইলে স্বাধিন হইয়াই উপনিবেশিকতার সব শিকড় উপড়াইয়া ফেলছিল।

এখন বেশির ভাগ প্রাক্তন ইউরোপিয়ান উপনিবেশগুলির বার বার ঘুইরে মাগুড় চ্যাং হওয়ার এই ধারা কেন? এর মূল কারন কি? এর উৎস কি? এর উৎস খুজতে ও এর স্বমন্ধে পরিস্কার ধারনা পাইতে হইলে আমাদেরকে অবশ্যি ইউরোপিও বানিজ্যিক উপনিবেশের ঐতিহাসিক বিকাশের সাথে জড়িত কতোগুলি গুরুত্তপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা বা অবস্থা ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বিবেচনায় নিতে হবে। সংক্ষেপেঃ

এক। পনেরো ষোলোশো শতকের দিকে তুর্কি অটোমোন সম্রাজ্যের বিস্তারের কারনে, (যার শুরু ১৪৫৩ সালে অটোমোন সম্রাজ্যের হাতে কনস্টান্টিনোপোল বা বর্তমান ইস্তাম্বুলের পতনের পর থাইকা, ইউরোপের স্থল বানিজ্যের সব পথগুলি, বিশেষ কইরা ইন্ডিয়া, চিন এবং প্রাচ্য ও দুরপ্রচ্যের অনেক দেশের সাথে স্থল বানিজ্যের সিল্ক রুট ও তার শাখা প্রশাখা আস্তে আস্তে অটোমোন সম্রাজ্যের হাতে চইলা যায়। এছাড়া পুরা মধ্যপ্রাচ্যতো তখন অনেকদিন ধইরাই অটোমোন সম্রাজ্যের অন্তরভুক্ত, সেইখানকার বানিজ্য অনেক আগেই তুর্কিদের হাতে।

দুই। এরই প্রতিক্রিয়ায় স্পেন, পর্তুগাল, ইংলান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড এবং ইতালির মতো সমুদ্র উপকুলবর্তি ইউরোপিয়ান দেশগুলি সমুদ্র বানিজ্যের পথ খোলার জন্য বেপরোয়া হইয়া উঠে। তাদের এই বেপরোয়া চেস্টার ফলে তারা সামুদ্রিক নেভিগেশন, জাহাজ নির্মানে পারদর্শি হইয়া উঠে – আর সেইসাথে পারদর্শি হইয়া উঠে নৌযুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র উন্নয়নে আর নৌযুদ্ধে –

– প্রাথমিক অবস্থায় ওই উপকুলবর্তি ইউরোপিয়ান দেশগুলি তাদের এইসব নবলদ্ধ বিদ্দ্যা জলদস্যুতায় নিয়োগ করলেও, ঐসব বিদ্দ্যায় ঊৎকর্সতা সাধনের সাথে সাথে নুতুন আবিস্কৃত উত্ত ও দক্ষিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরে ট্রেডিং পোষ্ট স্থাপনের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে তারা সমুদ্র বানিজ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা কইরা ফালাইলো।

– মালামাল পরিবহনে স্থল বানিজ্যের তুলনায় সমুদ্র বানিজ্যের পরিবহন ক্ষমতা বহুগুন বেশি থাকায় এবং পরিবহন খরচ কম থাকায়, স্থল বানিজ্য কইমা যাইতে লাগলো এবং বিশ্ববানিজ্য দ্রুত সমুদ্রবানিজ্য নির্ভর হইয়া পড়লো। আর ইউরোপিয়ানরা সেই সুত্রে বিশ্ববানিজ্যেও তাদের আধিপত্য কায়েম কইরা ফালাইলো।

– এই অসম বানিজ্য আধিপত্যের সুদুরপ্রসারি অর্থনৈতিক সুবিধায়, একদিকে পুজি জমতে থাকলো ক্ষুদ্র ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলির হাতে, আর সেই প্রভাবে তাদের সামরিক ও নৌ শক্তি; অন্যদিকে স্থলবানিজ্য নির্ভর দেশগুলি পুজি হারাইতে হারাইতে, অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় ভাবেই দুর্বল হইতে লাগলো।

তিন। ওই ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে বানিজ্যিক শ্রেনীর ক্রম উত্থানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় তাদের প্রভাব বাড়তে লাগলো; এবং রাজতন্ত্রিক রাষ্ট্র ক্ষমতার শিথিলিকরন, বিকেন্দ্রিকরন, ও বানিজ্যকায়ন শুরু হইলো। এর প্রভাবে তাদের বৃহত্তর সমাজও সামন্ততান্ত্রিকতা থাইকা বাইর হইয়া মুক্ত হইতে থাকলো, বানিজ্যিক স্বার্থেই বিভিন্ন পেশাদার আর্টিজান শ্রেনীর তথা মধ্যবিত্ত শ্রেনির উদ্ভব হইতে লাগলো। বানিজ্যের বিস্তার ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর আর্থিক সমর্থ বাড়ার সাথে সাথে, প্রথমবারের মতো সামন্ত শাসক ও যাযক শ্রেনীর বাইরে মধ্যবিত্ত্য শ্রেনির মধ্যেও শিক্ষার বিস্তার শুরু হইলো। একসময় বিশাল উদ্ধবৃত্ত বানিজ্যিক পুজির বিনিয়োগ আর মধ্যবিত্ত্য শ্রেনির মধ্যে শিক্ষার বিস্তার, এই দুইয়ের সংযোগ ১৮০০ শতাব্দির প্রথমে ভাগে ইংলান্ডে, এবং পরে অন্যান্য ইঊরোপিয়ান দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটলো –

চার। শিল্প বিপ্লব একদিকে ইউরোপে শিল্পের কাচামালের নতুন বিশাল চাহিদা তৈরি করলো আর ইউরপিয়ানদের সমৃদ্ধি বাড়াইয়া আমদানিকৃত ভোগ্যপন্যের চাহিদাও বাড়াইতে থাকলো। আর অন্যদিকে নতুন শিল্প ও উৎপাদিত শিল্প পন্যের বিস্তার ও মুনাফা বাড়াইয়া যাওয়ার জন্য নতুন নতুন বাজারও দরকার হইয়া পরলো। বিনিয়গত পুজির জোরে শিল্পমালিক হইয়া যাওয়া ঐসব দেশগুলির বনিক-শিল্পপতি শ্রেনি তাদের উৎপাদিত শিল্প পন্যের জন্য নিজ নিজ দেশের একচ্ছত্র বাজার আর শিল্পের কাচামালের একচ্ছত্র উৎস প্রতিষ্ঠার জন্য প্রবল প্রতিযোগিতায় নাইমা পড়লো। কলিকাতা আর মাদ্রাজ এর মতো আগেই প্রথিষ্ঠিত বানিজ্যিক পোষ্টগুলি আর নতুন নতুন প্রথিষ্ঠিত পোষ্টগুলি থাইকা এশিয়া, আফ্রিকা আর দক্ষিন আমেরিকায় বানিজ্যিক উপনিবেশ প্রথিষ্ঠার প্রবল প্রতিযোগিতায় ঝাপাইয়া পড়লো। বিশ্বব্যাপিএকচ্ছত্র শিল্প ও বানিজ্যের আধিপত্যলধ্য বিশাল থাইকা বিশাল হইতে থাকা মুনাফা আর পুজির পাহাড় ইউরোপিইয়ান দেশগুলির রাষ্ট্র ক্ষমতায় বনিক-শিল্পপতি শ্রেনির প্রভাব তখন অপ্রতিহত। রাষ্ট্র ক্ষমতার সর্বোত সহযোগিতায় মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এইরকম বিস্তৃত বানিজ্যিক সাম্রাজ্যিক উপনিবেশের উদ্ভব হইলো। আর এই অভিযানে তাদেরকে বিশাল এডভান্টেজ দিল নবলদ্ধ্ব শিল্প বিপ্লব উৎপাদিত অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সহায়ক টেকনলজি।

এইখানে আমাগো বিশেষভাবে খেয়ালে নিতে হবে ততদিন পর্যন্ত বিদ্যমান সনাতন সাম্রাজ্যিকতার সাথে বানিজ্যিক সাম্রাজ্যিক উপনিবেশিকতার মৌলিক পার্থক্যগুলি।

– সনাতন সাম্রাজ্যিকতার মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্রাজ্যের উপর সম্রাট বা রাজার একচ্ছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা বা কতৃত্ত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং তারপর পুরা সম্রাজ্যকে তার একক ইচ্ছায় বা আইনে চালানো। এই ব্যাবস্থায় টাক্স বা খাজনা আদায় ছাড়া উৎপাদন, বিপনন, ব্যাবসা, বানিজ্য, বাজারসহ সব অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা সাধারনত স্বাধিনভাবেই চলত দেওয়া হইতো পুরা সম্রাজ্যের স্বার্থেই – রাজপরিবার ও শাসকগোষ্ঠি বাদে সম্রাজ্যের আর বাকিসব প্রজা বা নাগরিকরা, ভালো বা মন্দ যেভাবেই হোক, অঞ্চল নির্বিশেষে সাধারনত একই আইনের অধিনে একই ব্যাবস্থার মধ্যেই থাকতো।

– এর বিপরিতে বানিজ্যিক সাম্রাজ্যিক উপনিবেশিকতার মূল এবং একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল একচ্ছত্র বাজার আর শিল্পের কাচামালের একচ্ছত্র উৎস প্রতিষ্ঠা। সেই উদ্দেশ্য সাধনে উপনিবেশের উৎপাদন, বিপনন, ব্যাবসা, বানিজ্য, বাজারসহ সব অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাকে নিজেদের সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে নিয়া ঢাইলা সাজনোর জন্য উপনিবেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার সম্পুর্ন বানিজ্যিকায়ন ছিল তাদের জন্য অতি আবিশ্যিক।

পাচ। ইউরোপিয়ান কালা বানিজ্যিক উপনিবেশিকগুলিতে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা সম্পুর্নভাবে বানিজ্যকায়িত হইয়া তার প্রভুদের একচ্ছত্র বাজার আর শিল্পের কাচামালের একচ্ছত্র উৎস প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হইলো। উপনিবেশের স্থানিয় উৎপাদন, বিপনন, ব্যাবসা, বানিজ্য, বাজারসহ সব অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাকে ভাইঙ্গা তাদের মুখাপেখি করা হইলো, তাদের একচ্ছত্র বাজার আর শিল্পের কাচামালের একচ্ছত্র উৎস হিসাবে। ম্যানচেষ্টারের কাপড়ের মিলগুলির স্বার্থে বাংলায় তাত শিল্প ধ্বংস করা, ফসলের জমিতে কৃষককে নীল চাষে বাধ্য করার মতো হাজারো ব্যাবস্থা নেওয়া হইলো বিশ্বব্যাপি কালা উপনিবেশগুলিতে – তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা ভাইঙ্গা তাদেরকে প্রভুদের অর্থনিতির যোগানদারে পরিনত করতে।

ছয়। উপনিবেশগুলিতে এই বানিজ্যিক রাষ্ট্র ক্ষমতার উদ্ভব যেইরকম বানিজ্যিক মুনাফাখোরির স্বার্থেই হইলো, ওই বানিজ্যিক রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রথিষ্ঠা ও চিরস্থায়ি করার ব্যাবস্থাও করা হইলো সেই একই ধারায়।

– প্রথমেই দেশিয় বড়ো বড়ো সামন্ত রাজাদের হাত করা হইলো তাদের পদবি ও কিছু সুবিধাবলি বজায় রাইখা, যদিও তাদের ক্ষমতা বহুলাংশে খর্ব করা হইলো, বিশেষ কইরা সামরিক, অর্থনৈতিক ও খাজনা আদায়ের ব্যাবস্থায়। ছোটো খাটো সামন্তদের হাত করা হইলো বিভিন্ন ধরনের জমিদারি ব্যাবস্থার পত্তন কইরা -তাদের তাবেদারদের জমিদারি দিয়া – এইভাবেই তারা উপনিবেশগুলিতে তাদের স্বার্থের সাথে একই সুত্রে গাইথা ফালাইলো ঊপনিবেশগুলির প্রভাবশালিদের।

– দ্বিতিয়ত, স্বল্প জনসংখ্যার ইউরোপিয় দেশগুলিতে বিশ্বব্যাপি উপনিবেশ নিয়ন্ত্রন করার মতো পর্যাপ্ত জনবলতো ছিলই না, উপরন্ত একচ্ছত্র বানিজ্যিক ও শিল্প মুনাফায় ঐসব দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে ঐসব দেশের মানুষের মজুরিও ছিল বাড়তি। এই বাস্তবতায়, বানিজ্যিক মুনাফা যতোবশি সম্ভব রাখতে উপনিবেশ পরিচালনার ব্যয় সিমাবদ্ধ করতেই তারা উপনিবেশিক প্রশাসনের নিচের দিকের জনবহুল অংশের দেশিয়করন করে। এইখানেই, এইপরিস্থিতেই যাত্রা শুরু হইলো কালা ঊপনিবেশিক রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলির। (এদের বিবর্তন, চরিত্র ও সর্বব্যাপি বিষাক্ত প্রভাবের বিশদ আলোচনা আগের দুই পর্বেই করছি।)

– ঊপনিবেশিক প্রভুরা তাদের কালা ঊপনিবেশিক রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলির দেশিয় কর্মচারি ও অন্যান্য দরকারি বানিজ্যিক ও কারিগরি লোকবল তৈরী করতেই উপনিবেশগুলিতে, প্রভুত্ত অনুযায়ি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগিজ, স্পেনিশ, ডাচ ইত্যাদি উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু করে। এই শিক্ষা ব্যাবস্থার সাথে তৎকালিন প্রভুদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার কারিকুলাম একটু ভালোভাবে তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন, একে কেন উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যাবস্থা বলতেছি। তফাতটা কিন্তূ অঙ্ক, বিজ্ঞান ও অন্যান্য কারিগরি বিষয়ের শিক্ষায় না, তফাতটা শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যে স্থাপনেঃ ইতিহাস, সাহিত্য সহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যে স্থাপনে – সমাজ সমপৃক্ত ব্যক্তি উন্নয়ন না সমাজ বিছিন্ন ব্যক্তি উন্নয়নের – উপনিবেশিক প্রভু স্বার্থের সাথে ব্যাক্তি স্বার্থের গাটছড়া বান্ধা না নিজের বিশাল সমাজ স্বার্থের সাথে ব্যাক্তি স্বার্থের গাটছড়া বান্ধা। উপনিবেশিক প্রভুরা আবিশ্যিক ভাবেই তাদের স্বার্থের সাথে গাটছড়া বান্ধা দেশিয় কর্মচারি শ্রেনি তৈরি করতে প্রথমোক্ত ধারার উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যাবস্থাই স্থাপন করে – যেখানে প্রাক উপনিবেশিক স্বদেশিয় শিক্ষা, সাহিত্য ইতিহাস ও সংষ্কৃতির কোনো স্থান ছিল না, স্থান ছিল প্রভুদের দেশের সাহিত্য, ইতিহাস ও সংষ্কৃতির জয়গান। এই শিক্ষায়ই জন্ম দেয় উপনিবেশগুলির শিক্ষিত শ্রেনির নিজস্ব সমাজ ও সংষ্কৃতি বিদ্বেষী আর প্রাক্তন উপনিবেশিক প্রভুদের দেবতার চোখে দেখার হিনমন্য উপনিবেশিক মানসিকতার। যা কয়েক পুরুষের পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচর্যায় উপনিশগুলির সর্বসাধারনের মধ্যেও বিদ্যমান। আমরা যদি একজন ব্যাক্তিকে একটা ট্রেন হিসাবে এবং তার কারিগরি বা পেশাদারি শিক্ষাকে ট্রেনের ইঞ্জিন হিসাবে ভাবি, তবে সেই ট্রেনের গন্তব্য নির্ধারন করবে তার ইঞ্জিন নয়, বরং তার ব্যাক্তি স্বার্থ আর মানসিকতার দুই রেল লাইন – ইঞ্জিন শুধু নির্ধারন করবে কতো দ্রুত সে গন্ত্যব্যে পৌছাবে।

সেই কারনেই এখনো বহাল তবিয়তে রাইখা দেওয়া কালা ঊপনিবেশিক রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলির সযত্নে লালন করা উপনিবেশিক মানসিকতার এই সর্বব্যাপি প্রভাবে প্রাক্তন কালা ইঊরোপিয়ান ঊপনিবেশগুলি আমাগো মতোই বার বার ঘুইরা মাগুড় চ্যাং হইয়া একই ভুল গন্তব্যে ফিরা আসতেছে।

উপনিবেশিক প্রভুরা তাদের নিজেদের স্বার্থে এই কালা ঊপনিবেশিক রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলির আর উপনিবেশিক মানসিকতার জন্ম দিছিল, তাদের স্বার্থে এই ব্যাবস্থাই সঠিক ছিল। ইতিহাসের সন্ধিক্ষনে তাদের হাতে বিশ্ববানিজ্যের আধিপত্য ও শিল্প বিপ্লবের মহামিলন এবং তার সুফল ঘরে তোলার ঐসব উপনিবেশিক ব্যাবস্থাই আঠারশ শতক পর্যন্ত মানব সভ্যতার ইতিহাসে নগন্য অবদান রাখা ইউরোপকে সভ্যতার শিখরে পৌছাইয়া দিছিল।

কিন্তূ আমরা প্রাক্তন কালা উপনিবেশগুলির বেকুবরা কোন স্বার্থে, কার স্বার্থে ৬০ বছর পরেও এখনো কালা ঊপনিবেশিক রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলি আর কালা উপনিবেশিক মানসিকতারে স্বযত্নে লালন কইরা বার বার ঘুইরা মাগুড় চ্যাং হইয়া একই ভুল গন্তব্যে ফিরা যাইতেছি?


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment