আমের রহমান: ‘ভাল বলেই ভালবাস খোকা বলে নয়’
রবীঠাকুর আসলে লিখেছিলেন ‘খোকা বলেই ভালবাসি ভাল বলে নয়’। এই ছড়াটা (ছড়াইতো তাইনা?) আমার ছেলেকে ওর ছোটবেলায় শুনাতাম। ও তখন মাথা ঝাঁকিয়ে প্রতিবাদ করে বলতো ‘না না ভাল বলেই ভালবাস খোকা বলে নয়’।
আজকে বাংলাদেশের একটি ছেলের কথা বলতে গিয়ে আমার ছেলের বলা এই লাইনটাই মনে পড়লো। রবীন্দ্রনাথের আসল লাইনটি খুব জনপ্রিয়। এমন কি ভিন্ভাষীরাও উদ্ধৃতি হিসেবে এটিকে ব্যবহার করেছে। নিউইয়র্কের PAUPER PRESS INC. উদ্ধৃতি দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট বই প্রকাশ করে। তেমনি একটি দু’ইঞ্চি চওড়া, তিন ইঞ্চি লম্বা ১৯৯৫তে প্রকাশিত For Dad শিরোনামের বইতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছড়াটির ইংরেজী অনুবাদ উদ্ধৃত হয়েছে। খুব সাদামাটা এক অনুভূতির প্রকাশ। তবে এর গভীরে লুকানো সে সত্য যে বাবা-মা ছাড়া অন্য কেউ তখনই ভাল বলেন আর ভালবাসেন যখন সত্যিকার অর্থে কেউ ভাল কিছু করে।
বাংলাদেশের কোনকিছু ভাল শুনলে বা কেউ কিছু ভাল করেছে শুনলে খুব আনন্দ হয়। যখন মেলবোর্নের আন্তর্জাতিক কমেডী ফ্যাস্টিভালে বাংলাদেশের ছেলে আমের রহমান ও তার বন্ধু মিলে বিশ^মানের নামজাদা কমেডিয়ানদের পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায় কমেডী পরিবেশন করে তখন কার না খুশীতে মন ভরে উঠে। মেলবোর্নে কমেডী ফ্যাস্টিভাল মার্চ ২৪ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত চলে। নতুন সাজে শহরের দন্ড(পোল) গুলোতে কমেডী ফ্যাস্টিভালের বারতা নিয়ে প্যাকার্ড বাতাসে দুলছিল। অষ্ট্রেলীয় THE AGE পত্রিকা আমেরদের Fear of a Brown Planet শিরোনামের কৌতুক পরিবেশনাকে চারের বেশী তারকাচিহ্ন দিয়েছে।
বাংলাদেশের ছেলে বলেই আগ্রহী হলাম জানতে। জানলাম ক’বছর ধরেই কমেডী ফ্যাস্টিভালে আমের রহমান অংশ নিচ্ছে। শুনেছি পুরস্কারও জিতেছে। মেলবোর্নে বাসরত বাংলাদেশের অভিবাসী তোরা রহমান ও মুশফিকুর রহমানের সন্তান আমের রহমান অষ্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ডিগ্রীপ্রাপ্ত। আইনজীবী হিসেবে মানুষের অধিকার বিষয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি কমেডী তৈরীর মত সৃজনশীল কাজে ওর অনলস প্রতিশ্রুতিময় ভালবাসা গৌরব করার মত একটি ব্যাপার।
আমেরের কৌতুক শুধু হাসায় না ভাবায়ও। যখন সে মজা করে বলে ছোট্টবেলায় ভাবতো বড় হতে হতে বিজ্ঞানপ্রযুক্তির এতো উন্নতি ঘটবে যে চাঁদে যাবে হলিডে করতে। বড় হয়ে দেখে তাজ্জব কান্ড চাঁদে হলিডে করার জন্য প্রযুক্তির উন্নতি হয়নি ঠিকই তবে চালকবিহীন বিমানে বোমা ফেলার প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে।
এমনতরো বুদ্ধিদীপ্ত ও ভাবনা জাগানিয়া (Thought provoking) অনেক মজাদার কৌতুক ওর পরিবেশনায় রয়েছে। উল্লেখ করার মতো বিষয় যে একবারের জন্যও চার অক্ষরের ‘ঋ ওয়ার্ড’টি আমের রহমান ও ওর বন্ধু নাজিম হোসেন ওদের হাস্যরসে ব্যবহার করেনি। যে শব্দটি কমেডিয়ানরা হরহামেশা উচ্চারণ করে লোক হাসাচ্ছে ।
চেহারা দেখেই লোকজন নামে মোহাম্মদ জুড়ে দেয় কৌতুকটাও দারুন হাস্যরসে ভরপুর। কৌতুকছলে যীশু বাদামী চামড়ার মানুষ ছিলেন এই সত্যটিও তুলে ধরে।
আমের রহমান বাংলাদেশের খোকা বলেই ওকে ভালবাসতে হবে তা নয়। প্রশংসার যোগ্য ভাল কাজের জন্যই ভালবাসা ওর প্রাপ্য ।
– দিলরুবা শাহানা