বুদ্ধিজীবীদের নিধন এবং বিচার প্রসঙ্গ
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে দেশের শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবীদের । আর সেই নারকীয় হত্যার শিকারদের স্মরনে আমরা প্রতিবছর পালন করি দিবসটি । অবশ্য,২৫শে মার্চ ১৯৭১ কলো রাতেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবীদের নিধন [১]এবং তা’ চলে যুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে । এমনকি ৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় লাভের পরেও বুদ্ধিজীবীদের নিধন অব্যাহত থাকে।দ্রষ্টান্তস্বরূপ ডঃ মনসুর আলী (ডিসে ২১,১৯৭১) চলচিচত্রকার জহির রায়হান (নিখোজ হন ৩০ শে জানু ১৯৭২ )এবং সাংবাদিক গোলাম রহমান (হত্যা জানু ১১,১৯৭২) ।
কিন্তু যেহেতু ১৪ই ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয়েছিল এবং তা’ অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে তাই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ (৩ নভেম্বর ১৯৭৫ ,জেলে হত্যাকান্ডের শিকার) এইদিনকে “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” ঘোষনা করেন।
৩৮ বছর পার হয়ে গেলেও ঠিক কতজন বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয়েছিল তা’ এখনও আমাদের অজানা। বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত “শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ ” (১৯৯৪) থেকে জানা যায় , ২৩২ জনের কথা । কিন্ত এটি যে অসম্পুর্ন তা’ ঐ গ্রন্থেই স্বীকার করা হয়েছে।
৩৮ বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত বুদ্ধিজীবীদের নিধন -এর প্রকৃতি, পরিধি,রহস্য ও অপরাধীদের চিহ্নিত কল্পে কোনো সরকারি তদন্ত হয়নি।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮ ,মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারীভাবে গঠিত “বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন” এর রিপোর্ট ও আলোর মুখ দেখেনি । উল্লেখ্য,ওই কমিশনের আহবায়ক ছিলেন চলচিচত্রকার জহির রায়হান যিনি নিখোজ হন ৩০ শে জানু ১৯৭২ সালে।
প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দিন আহমেদ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর । কিন্ত ,তার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি । [২]
একাধিক সুত্রে জানা যায়, পাক বাহিনী ও জামাত এ ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ক্যাডারগ্রুপ বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের হোতা । আল বদর বাহিনীর যে দুইজন জল্লাদের নাম জানা গেছে তারা হলঃ চৌধুরী মাইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান ।
তালিকা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও হাত রয়েছে বলে জানা গেছে । ”বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন ১৯৭১ ” প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসইনের কর্তৃক প্রণিত একটি দলিল পায় বলে জানা যায়। [৩]। কিছু সুত্রমতে, তালিকা প্রণয়নে মার্কিন গেয়েন্দা সংস্থা সি আই এ এর ভুমিকা রয়েছে বলে জানা যায় । [৪]
বুদ্ধিজীবীর হত্যায় যারা ঘৃণ্য ভূমিকা রাখে তাদের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধী পাকি অফিসার ব্রিগে.রাজা , ব্রিগে আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্ণেল তাজ ,কর্ণেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসইন,ডঃ মোহর আলী, আল বদরের এবিএম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাইনুদ্দিন । এদের নেতৃত্ব দেয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী । [৫]
৩৮ বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিজীবীর হত্যার বিচার হয়নি । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,ঘাতকরা আজ বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায় এবং এখনও বুদ্ধিজীবীদের হত্যার হুমকি দেয় ।
রেফারেন্সঃ
১।দ্সেই কাল রাত , নুরুজ্জামান মানিক ইত্তেফাক, ২৪ মার্চ ২০০০
২।নিউ এজ, ডিসেম্বর ১৫,২০০৫।
৩।নিউ এজ,ঐ ।
৪।ডাঃ এম এ হাসান, যুদ্ধোপরাধ,গনহত্যা ও বিচার অন্যেষণ ,ঢাকা ,২০০১
৫। বুদ্ধিজীবী হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার , এম এ হাসান, সমকাল ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ ।