ক্যানবেরায় গুণীজন সম্বর্ধনা: অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো
অষ্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনাবাসী বাংলাদেশীদের কাছে PriyoAustralia.com.au একটি সুুপরিচিত ওয়েবসাইট । ক্যানবেরা শহরে এখন হাঁড় কাঁপানো শীত । পুরো শহর হিম ঠান্ডায় জুবুথুবু । মাঝেমাঝে দিনের হিম ধরা হলুদ আলো ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায় । এই প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে গত ২০ জুন বাংলাদেশীর ঢল নেমেছিলো PriyoAustralia.com.au-এর পঞ্চম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সারাদিনব্যাপি এক মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে । বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিলো দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশী শিশু-কিশোরদের কাছে দেশকে পরিচিত করার জন্য স্থানীয় সৌখিন শিল্পীদের অভিনিত জ্ঞওরা মরে নাঞ্চ নাটিকা, শিল্পী জাকিয়া হোসেনের আঁকা চিত্রকলা প্রদর্শনী, মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রকাশিত পুস্তক প্রদর্শনী, স্থানীয় বাংলা স্কুলের ছেলেমেয়েদের অভিনিত পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বিখ্যাত কবিতা নিমন্ত্রণ-এর মেলোড্রামা, ফ্যাশন শো এবং বড় পর্দায় মনপুরা ছায়াছবির ‘আগে থেকে দেখা’র প্রদর্শনী । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও পুরোদিনের কর্মসূচিতে ছিলো অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী কৃতি বাংলাদেশীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্বর্ধনা এবং পুরস্কার । দুপুরের এক ঘন্টা বিরতির মধ্যে ছিলো স্বল্পমূল্যের বিভিন্ন রকমের সুুস্বাদু খাবার । এছাড়া সারা দিনভর ছিলো ফিঙ্গার ফুড, সফট্ ড্রিংকস্, চা আর কফি ।
ছবি ১. দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশী শিশুরা । (ছবি: তাহসিন আহমেদ রুবেল ।)
ছবি ২. দশর্কদের একাংশ । (ছবি: কামরুল হোসেন ইমন ।)
ছবি ৩. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ক্ষুদে শিল্পীদের নৃত্যাংশ । (ছবি: তাহসিন আহমেদ রুবেল ।)
২০০৬-এর জন্য ক্যানবেরাবাসী দুজন প্রবাসী বাংলাদেশীকে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত করা হয় । এরা হলেন জিল্লুর রহমান (প্রিয় বাঙালী) এবং আফজল হোসেন (প্রিয় লেখক) । উল্লেখ্য যে আফজল হোসেন সাহিত্যিক মহলে ফজল হাসান নামে পরিচিত । তার ছোটগল্প ঢাকার বিভিন্ন দৈনিকের সাহিত্য পাতায়, সাপ্তাহিক এবং পাক্ষিক ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হয় । ‘প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া’-য় ক্যানবেরার দীর্ঘ অনাবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ধারাবাহিক রচনা ‘বহে যায় দিন’ । এছাড়াও সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ম্যাগাজিন ‘বাসভূমি’-তে তিনি নিয়মিত রাজনৈতিক ছড়া এবং কবিতা লেখেন ।
ছবি ৪. ২০০৬-এর ‘প্রিয় লেখক’ আফজল হোসেনের হাতে ক্রেস্ট এবং সনদপত্র । পাশে PriyoAustralia.com.au-এর সম্পাদক শাহাদাত মানিক । (ছবি: তাহসিন আহমেদ রুবেল ।)
২০০৯ সালে সম্মানিত এবং পুরস্কৃত গুণী ব্যক্তিরা হলেন এডেলেডের ড: রফিকুল ইসলাম (প্রিয় বাঙালী), সিডনির জন মার্টিন (প্রিয় লেখক), ক্যানবেরার হাসমত আলী (প্রিয় লাইফটাইম এচিভমেন্ট), সিডনির সিরাজুস সালেকীন (প্রিয় ব্যক্তিত্ব) এবং ক্যানবেরার মোহাম্মদ খান মিন্টু (প্রিয় বন্ধু) । প্রত্যেক সম্মানিত বাংলাদেশীকে একটি করে ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং টোকেন হিসেবে এক শঞ্চ ডলারের গিফট্ ভাউচার দেওয়া হয় । উল্লেখ্য যে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে কাউকেই পুরস্কার দেওয়া হয়নি ।
ছবি ৫. ধন্যবাদ বক্তব্য রাখছেন ২০০৯-এর ‘প্রিয় বাঙালী’ ড: রফিকুল ইসলাম । (ছবি: তাহসিন আহমেদ রুবেল ।)
ক্যানবেরার তিন ‘শ জনের উপর বাংলাদেশীরা স্বপরিবারে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দিনটি আনন্দ ও উল্লাসের মধ্যে দিয়ে কাটায় । মধ্যাহ্ন বিরতির পর কেক কাটে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা । সমস্ত দিনের এই মনোমুগ্ধকর এবং প্রাণোচ্ছ্বল অনুষ্ঠান সারা বিশ্বের বাংলাদেশীদের কাছে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় । অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন ফরহাদুর রেজা প্রবাল এবং উর্মি রহমান । সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন PriyoAustralia.com.au-এর সম্পাদক শাহাদাত মানিক ।
ছবি ৬. PriyoAustralia.com.au -এর পঞ্চম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটছে শিশুরা । পেছনে ফরহাদুর রেজা প্রবাল এবং উর্মি রহমান । (ছবি: জাকিয়া হোসেন ।)
অষ্ট্রেলিয়ায় অনাবাসী বাংলাদেশী হিসেবে PriyoAustralia.com.au -কাছে আমরা আশা করি আগামী বছরগুলোতেও যেন এমন পরিচ্ছন্ন এবং সুুন্দর অনুষ্ঠান উপহারের মধ্যে দিয়ে প্রবাসী ব্যস্ত জীবনে একদিনের জন্য হলেও সবার মনে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিতে পারে এবং একই সঙ্গে গুণী বাংলাদেশীদের যথাযথ সম্মান জানাতে পারে । ‘প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া’-কে অনেক অনেক ধন্যবাদ ক্যানবেরার অনাবাসী বাংলাদেশীদের একটা সুুন্দর, মনোমুগ্ধকর এবং মার্জিত অনুষ্ঠান উপহার দেবার জন্যে ।
বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং মহানন্দের মধ্যে দিয়ে শীত বিকেলের নরোম আলোয় একসময় অনুষ্ঠান শেষ হয় । বাসায় ফেরার পথে আমার মতো অনেকেরই হয়তো মনে হয়েছে, ক্যানবেরার একঘেয়েমী শুকনো জীবনে ‘অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো’ ।