স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে যারা আসছেন তাদের জন্য কিছু টিপস
জীবনে প্রথমবারের মতো প্রবাসে এসে অনেকেই নানা সমস্যায় পরেন, এ লেখাটি তাদের জন্য। অন্যান্য প্রবাসীরাও মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের কথা যুক্ত করতে পারেন, তাদের স্বাগত জানাই।
এ পোস্ট নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষনের সাথে সাথে কিছু বাস্তবতা তুলে ধরবার চেস্টা করেছি। আশা করি যারা নতুন আসছেন তাদের কাজে লাগবে। পোস্টটি যারা স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে আসছেন শুধুই তাদের জন্য, পড়াশোনা বা বেড়াতে যারা আসছেন তাদের জন্য নয়।
১.
যারা জীবনে প্রথমবারের মতো আসছেন তারা প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখিন হোন তা হচ্ছে ” কালচারাল শক “। এটা সবারই হয়ে থাকে তবে প্রথমবারের মতো যারা দেশের বাহিরে দীর্ঘসময়ের জন্য থাকতে এসেছেন তাদেরই বেশী হয়। দেশে যা দেখে এসেছেন তার অনেককিছুই এখানে অনুপস্থিত দেখতে পেয়ে তারা শক্ড হয়ে যান, যদিও এ শক সাময়িক এবং কমাস বাদেই কেটে যায়। আস্তে আস্তে তারা স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারেন। একেক দেশের একেক রকম সংস্কৃতি এবং আশার কথা এটায় অভ্যস্ত হতে মানুষ খুব সহজেই পারে।
২.
যারা স্থায়ী অভিবাসী হিসেবে আসেন তারা দেশে কম-বেশী একটি ভালো ও নিশ্চিৎ অবস্থা থেকে এখানে আসেন। এখানে এসে তাদের মুলত শুন্য থেকেই শুরু করতে হয়। এই স্ক্র্যাচ স্ট্রার্টিং অনেকের কাছেই অভিশাপের মতো মনে হয়। মনে রাখতে হয়, যারা মাইগ্রেন্ট তাদের সবারই এটা হয়েছে, নিজেকে একা ভাবার কোনো কারন নেই। অস্ট্রেলিয়ায় চাকুরিদাতাদের একটি প্রবনতা হলো অস্ট্রেলিয়াতে কাজের অভিজ্ঞতা ও অস্ট্রেলিয়ান ডিগ্রী চাওয়া, যা দেশ থেকে আসা কারোই থাকে না; এ কারনে নিজের ফিল্ডে চাকুরি খুঁজতে গিয়ে তারা প্রচন্ড সমস্যা ভোগ করেন। তবে চেস্টা চালাতে থাকলে এটা উৎরানো সম্ভব ও অনেকেই এটা করতে পেরেছেন।
দরকার হলো হাল না ছেড়ে চেস্টা চালিয়ে যাওয়া’; এটাই মুল সুত্র। যোগ্যতা থাকলে নিজের ডোমেইনে চাকুরি পাওয়া খুবই সম্ভব।
৩.
প্রথম অবস্থায় এসে নিজের ফিল্ডে চাকুরি না পেয়ে অনেককেই মনোকস্টে ভুগেন। হয়তো দেশে প্রকৌশলী ছিলেন বা সরকারী আমলা ছিলেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এখানে এসে প্রথম অবস্থায় চাকুরি না পেয়ে তাদের হয়তো রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরে কাজ করতে হয়, হয়তো ট্যাক্সি চালাতে হয়, হয়তোবা সুপার মার্কেটে কাজ করতে হয়। দেশে এ ধরনের কাজকে ছোট করে দেখতে দেখতে মন মানসীকতা এরকমই হয়ে যায় যে তারা এখানে এসে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে হিনমন্যতায় ভুগেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে সব ধরনের কাজকেই সম্মান করা হয়, মানুষ হিসেবে সম্মান করা হয়, এখানে অন্য কিছু বিচার্য না। এজন্যও গার্বেজ কালেক্টরও এম.পি হতে পারেন, এজন্যই মন্ত্রি বা বিশাল আমলার সন্তান প্লাম্বারের কাজ করে নিজের কাজ লুকায় না, গর্ব করে বলে।
দেশ থেকে যারা আসছেন তারা তাদের মধ্যযুগীয় ইগোকে দেশের মাটিতে রেখে আসবেন।
আরেকটি জিনিস, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় চাকুরির বাজারের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত বছরের তুলনায় চাকুরির বিজ্ঞাপন কমেছে প্রায় ৫৫%। ছাঁটাই তো আছেই। এজন্য চাকুরি পেতে সমস্যা হতে পারে।
৪.
বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশ থেকে যারা মাইগ্রেশন নিয়ে আসছেন তাদের বেশীরভাগেরই ইংরেজী বলতে ও বুঝতে খুব সমস্যা হয়। আই.ই.এল.টি.এস এ ভালো স্কোর পাওয়া আর তার বাস্তব প্রয়োগ ভিন্ন জিনিস। ইংরেজীর সমস্যার কারনে তাদের অনেকেই ভালো চাকুরি পান না। যারা এ সমস্যা কাটাতে পারেন তারা ছাড়া অন্যদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠবার চেস্টা থাকতে হবে।
৫.
আরেকটি সমস্যা যা দেশ হতে আসা স্থায়ী অভিবাসীরা মুখোমুখি হোন তা হচ্ছে ” সিস্টেম” । একেক দেশ একেকভাবে চলে, একেক ভাবে ভাবে। বাংলাদেশে যে সিস্টেমে তারা চলে এসেছেন সেটা এ দেশে আশা করা বোকামী। নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, এখানকার সিস্টেমের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। মিথ্যে বলা, সময়ের মুল্য না দেয়া, ধান্দাবাজী, দূর্নীতি করার প্রবনতা, ইত্যাদি ইত্যাদি এখানে করলে চলেবে না। এখানের মতো চলবে হবে। তবে অবশ্যই নিজস্ব স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে বলছি না।
৬.
যারা এখানে আসছেন বা নতুন এসেছেন তারা অনেক সময়ই রঙিন চশমা পরে রঙিন স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাদের বাস্তববাদী হতে হবে। দেশে থেকে এখানকার অনেক রঙিন গল্প, অনেক মিথ্যে গল্প তারা শুনতে শুনতে তারা যে স্বপ্নের জগৎ গড়ে তুলেন তা এখানে মিথ্যে হয়ে যায় আসার পর পরই। তবে স্বপ্নকে স্বার্থক করা সম্ভব, অনেক অনেক মানুষ করেছেন, আপনিও পারবেন।
বাস্তববাদী হতে হবে, কঠিন পরিশ্রম করতে হবে সফল হতে। সফল হবার কোনো সহজ ও শর্টকাট রাস্তা নেই। হয়তো চতুরতা করে অল্প সময়ে ৫০০ ডলার উপার্জন করতে পারবেন কিন্তু কোন ফাঁকে ৫০০০ ডলার হাওয়া হয়ে যাবে টেরই পাবেন না।
৭.
ড্রাইভিং শিখে আসবেন অবশ্যই। এতে যেমন নিজের কাজে লাগবে তেমনি ট্যাক্সি চালাতে পারবেন। ট্যাক্সি চালানোর কথা বলাতে ভুঁরু কুচকালে চলবে না। এতে উপার্জন ভালো, স্বাধীনতা আছে। আমাদের দেশের অনেকেই এ কাজ করছে। তবে এটাকে স্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহন করে পস্তাতে হয়, যেটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। পরে মুল পেশায় ফিরে আসা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় উঠেনি।
৮.
রান্না শিখে আসবেন। অন্তত বেসিক টুকু। এখানে আপনি বুয়া পাবেন না যে আপনার জন্য তিন বেলা রান্না করে দেবে। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে, নিজের রান্না নিজেকেই করতে হবে।
৯.
বেশ ক মাস চলার মতো টাকা নিয়ে আসবেন। এটা মনে যেমন সাহস দেবে তেমনি কোনো রকম কাজ না পেলে জীবন বাঁচাবে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ন টিপস।
১০.
অন্য কারো উপর ভরসা করে বা আশা করে এখানে আসা চলবে না। এই ভুল অনেকেই করে থাকেন। হয়তো প্রথম অবস্থায় কারো সাথে থাকা যেতে পারে কিন্তু এটা যাতে স্থায়ী ব্যবস্থা না হয় সেটা মাথায় থাকা দরকার। যারা বিবাহীত তাদের কারে সাথে শেয়ার না করে থাকা উচিৎ। শেয়ার করে থাকলে টাকা বাঁচলেও অন্যকারো সাথে বউ/স্বামী ভেগে যাওয়া সহ আরো নানাবিধ অবান্জিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রবাসে আসার আগে কিছু “হোম ওয়ার্ক” করে আসা অবশ্যই দরকার। প্রবাসে থাকা অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজনের সাথে আলোচনা করা ও পরামর্শ এতে বেশ কাজে আসে।
১১.
মানুষ তার স্বপ্নের সীমা ছুতে পারে, আপনিও পারবেন। শুধু দরকার ” লাইনে থাকা, লাইনচ্যুত হওয়া যাবে না।” ধীরে ধীরে সব কিছুই আপনি নিজেই শিখে নেবেন, বুঝে নিবেন। আশাহত হওয়া যাবে না। সফল আপনি হবেনই।
——————
শুভকামনা সকলের জন্য।
আপাতত এই টিপস গুলোই দিচ্ছি।
অন্যরাও যোগ করে পারেন নিজেদের টিপস গুলো।