মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরাও বিব্রত: তলব সামরিক ভাষা গনতান্ত্রিক সরকারের নয়
তলব শব্দটির অর্থ ও গুরুত্ব আমাদের সবার জানা আছে। রাষ্ট্রপতি সামরিক বাহিনী তলব করেন যখন দেশ ও জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তখন তলব আমাদের মনে স্বস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী ফাইল তলব করেন যখন সমস্যাটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। আমরা জনগণ তখন স্বস্তি বোধ করি। কিন্তু স¤প্রতিকালে সংসদীয় কমিটি যেভাবে তলব করছেন তাতে আপনি বিব্রতবোধ করছেন। আপনার অবগতির জন্য বলতে চাই সমগ্র জাতি বিব্রতবোধ করছে এই তলব সংস্কৃতিতে। কারণ তারা বিগত ২ বছরের সামরিক শাসনে ভীষণ বিরক্ত। তারা এখন শান্তি চায়। তৎকালীন সরকারের সামরিক পৃষ্ঠপোষকরা এবং কয়েকজন উপদেষ্টা একটি এাস সৃষ্টি করেছিলেন রাজনৈতিক সংস্কার ও মাইনাস ট্যুর নামে। জনগণ খুবই খুশি হয়েছিল যখন ওই এাস সৃষ্টিকারী উপদেষ্টাদেরকে বাড়ী ফেরত পাঠিয়েছিল। তৎকালীন র্দূনীতি দমন টাকস ফোর্স একটি এাস সৃষ্টি করেছিল। তারা হাসপাতালে মৃত্যু শয্যায় শায়িত জেনারেল মুস্তাফিজকে আদালতে হাযির করেছিল। ৪ ঠা জুন ২০০৮ সামরিক বাহিনীতে পরিবর্তন ও আপনার মূক্তি শান্তির পথ উন্মুক্ত করেছিল।
আমরা তারপরেও বিরক্ত ছিলাম বাজার দর নিয়ে আর নির্বাচন হয় কিনা সংশয় নিয়ে। সকল বাঁধা অতিক্রম করে আমরা ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ ভোট দেই শান্তির জন্য। সকল রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেয় শান্তির পথে, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করার জন্য। নির্বাচনের পর আপনার সরকার গঠন জনমণে অপরিমেয় স্বস্তি এনেছিল। আপনি জানেন বেগম জিয়া নির্বাচনে এও বলেছিলেন তিনি সামরিক বাহিনীর কারোও প্রতি প্রতিশোধ নেবেন না। কিন্তু আমরা দেখলাম ২৫ শে ফেব্রয়ারী এক মহা প্রতিশোধ। আমরা থমকে গেলাম। আমরা ব্যথিত ও বিব্রত। আমাদের এই বেদনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে সরকারে স্থান না পাওয়া পক্ষ। তাদের কর্মকান্ড প্রমাণ করছে তারা এক ধরণের প্রতিশোধ নিতে চায়। পরাজিত সকল পক্ষ বিশেষ করে সরকারী দলের একটি অংশ যদি এভাবে তলব তলব করেন তবে জনগণ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। না জানি বাংলা মায়ের বুকে আবার কখন কে আঘাত করে বসে।
আমরা শান্তি চাই। আপনি ওনাদের পতাকা দিয়েছেন। তাতেও ওনারা সন্তুষ্ট নন বলে সিগন্যাল দিচ্ছেন। তারা ভুলে গেছেন আপনাকে মাইনাস করতে গেল নিজেরাই মাইনাস হয়ে যান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে কেউ কেঊ অনেক কিছু করতে চেয়েছেন। তারা ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতার গ্লানি তারা মেনে নিতে পারছেন না। আর এভাবেই শকুনের আনাগোনা শুরু হচ্ছে বাংলার আকাশে। যখন সবাই মিলে মিশে কাজ করবার কথা তখন তারা আবার ক্ষমতা লোভী বা ক্ষমতা প্রদর্শনে ধাবিত হচ্ছেন। আর এদেরকে ইদ্ধন দিচ্ছে মিডিয়া ও ওই মাইনাস থিনকাররা। তারা আবার একটি অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটি বিপদ ডেকে আনতে চাইছে।
জনগণ এখন আর এগুলো চাইছে না। তাঁরা তাঁদের সমস্যাগলো সমাধানের জন্য একটি সরকার নির্বাচিত করেছে। তারা চায় শান্তিতে দেশে বসবাস করতে। তাঁদের ভাতের সমস্যা মিটেছে তারা সেজন্য খুশি। তারা এবার চায় অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে সবাই কাজ করে যাতে তাদের জীবনে আরোও শান্তি আসতে পারে। এই ধরাধরি তারা গত ২ বছর দেখে খুবই বিরক্ত ও বিব্রত।
যখন জনগণ একটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কথা শোনে তখন তাঁরা আশ্বস্থ হয়। যখন নতুন চাকরীর বিজ্ঞাপন দেখে তখন আশ্বস্থ হয়। যখন নতুন হাসপাতাল, রাস্তা নির্মানের কথা শোনে তখন স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে। যখন তারা যানজটে পড়ে তখন সরকারের নির্লপ্ততায় বিরক্ত হয়। যখন একটি লঞ্চ ডুবি হয় বা একটা হত্যাকান্ড ঘটে তখন তাঁরা চিন্তিত হয়। জনগণ শুনতে চায় তাঁদের জন্য কি হচ্ছে বা কি করছে সরকার। তাঁরা অনেক আশা করে আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে দেশটিকে তুলে দিয়েছে নিরাপত্তার আশায়। একটুকু নিরাপত্তা ও শান্তি। মাত্র এক টুকরো হাসি হাসতে চায় এবং আপনাকে হাসিমুখে দেখতে চায়। আপনি হাসবেন কী?
লেখক: ফরিদ আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।