প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: কিছু ভাবনা
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই বিজয় অর্জনে ভারত ও বিশেষ করে ইন্দ্রাগান্ধী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী অসামান্য অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে নতুন এক কলোনীতে পরিণত করেছিল। আর সেই পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতীয় জনগণও এক অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু এক অলিখিত শাসন চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে ভারত। তারা বাংলাদেশকে বানাতে চায় একটি প্রতিবেশী নির্ভর দেশ হিসেবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই সত্য উপলব্ধি করে ভারতীয় প্রেসক্রিপশান উপেক্ষা করে এগিয়ে যান বিশ্বের দরবারে। আর তাই তারা মামু ও মামুদের ভারতীয় পার্টানাদেরকে শক্তি সঞ্চার করতে দুয়ার খুলে দেয়। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারাই। আর মামুর দোসরা লুটপাট শুরু করে বাংলাদেশকে।
মুখে অনেক মিষ্ট বাণী শোনালেও ভারত গত ৩৮ বছরে মামুদেরই শক্তি যুগিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগকে নিতে হয়েছে বরণ করে অপবাদ। ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ চাইলেও ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ কোন সময়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক চায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের কথা ভাবে। তাই তাদের হাতে দেশ থাকলে ভারত তত সুবিধা করতে পারে না। ভারতকে তখন ন্যায্য হিস্যা দিতে হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ এতবড় বিজয় অর্জন করবে তা তাদের কল্পনার বাইরে ছিল। তাই হুড়মুড় করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ৭ দিনে মাথায় চলে এলেন। এরপর পিনাক বাবুর ওয়াজ। এখন ঢাকঢোল পিটিয়ে শেখ হাসিনাকে দাওয়াত।
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগেই বিএনপি বলবে আবার দাসখত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আর এজন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তির ভাষা কি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত চুক্তির অনুরুপ? ভারতীয় প্যাঁচ যাতে জনগণ বুঝতে পারে সেটি কি আপনি মনোযোগ দেবেন?
আমার মনে হয় এমন চুক্তি সই করবার আগে এটি জনগণকে জানতে ও বুঝতে দিন। বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে। সেটির জন্য চুক্তি করুন। আমাদের রেল লাইন দরকার সেজন্য চুক্তি করা যেতে পারে। কিন্তু সেগুলির শর্ত জনগণ যাতে জানতে পারে তার ব্যবস্থা নিন। আপনি একটি সার্ক ট্রানজিট অথরিটি গঠন ও সার্ক ট্যানজিট নেটওয়ার্ক তৈরীর চিন্তা করতে পারেন। ট্যানজিট যেন করিডোর না হয়, এটি যেন বাংলাদেশকে আগুরপোতা-দহগ্রামে পরিণত না করে সেটি ভাবনার বিষয়। বিষয়টি আর্ন্তজাতিক বানিজ্যনীতির আলোকে হয় সেটা ভাবতে হবে। এবং এসব চুক্তি যেন জনগণের মনে কোন সংশয় সৃষ্টি না করে। ঘর পোড়া গরু সিদুরে মেঘে ভয় পায়। বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হতে পারতো ভারত। কিন্তু তাদের সেই উদার মন নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগকে দিয়ে চুক্তি করিয়ে দুদিন পরে আবার মামুদেরই হাতে ক্ষমতা যেতে সাহায্য করবে দাদারা! প্রতিবেশী হওয়ার এই একটি সুবিধা। বাংলাদেশে গৃহবিবাদ হলে তাদের ভীষণ মজা! সাবধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আমরা না খেয়ে মরতে রাজি কিন্তু নতুন কোন ফাঁদে বন্দি হয়ে নিষ্পেষিত হয়ে মরতে চাই না। নেই সেই নেহেরু বা ইন্দ্রাগান্ধী যারা মানব দরদী ছিলেন। তাই সাবধান! সাবধান! সাবধান! শক্ত থাকবেন দেশের স্বার্থে, জনগণ আপনার পাশে থাকবে, আছে।
লেখক: ন্যায় ও সুশাসন গবেষক এবং সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।