ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে যায় পেছনে যায় না -ফরিদ আহমেদ
জলাবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের জনগণ এক চরম নিরাপওার হুমকিতে পড়েছে। আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে সমুদ্র গ্রাস করবে বাংলাদেশের ১৮-২০ ভাগ ভুখন্ড। জলাবায়ু পরিবর্তন এমনই এক পর্যায়ে পৌছেছে যে শীতের দিনেও আর ঢাকা শহরের মানুষকে লেপ তোষক নিয়ে ভাবতে হয় না। বাজারে গেলে শীতের কাপড়ের দোকানে তেমন ভীড় পরিলক্ষিত হয় না।
জলাবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আজও গ্রাম বাংলার মানুষ অন্ধকারে থাকে আর শহরের মানুষ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাজারে কেনাকাটা করে। অথচ সকলের পুষ্টির উৎস হল ওই গ্রাম বাংলা। শহরের মানুষের চাহিদা মেটাতে চাই ফ্রিজ ও কোল্ড ষ্টোরেজ।
জনসংখ্যা বেড়েছে এত যে, দিন দিন আমাদের খাদ্য সহ নানা চাহিদা বেড়েই চলেছে। জীবনের সকল দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশ এক নিরাপওার হুমকিতে। খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা সে সবের সাঝে অন্যতম।
জনসংখ্যার চাপ এত বেশী যে শহরের অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলিকে দুই শিফটে ক্লাস নিতে হয়। নতুবা ১০-১৫ লক্ষ শিশু স্কুলে যেতে পারবে না। এক দিকে দুই শিফট স্কুল, অপরদিকে অসহ্য গরম, বিদ্যুতের ঘাটতি আর অন্য দিকে জলাবায়ু পরিবর্তনের হুমকি।
এমনি এক কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে এনে চেষ্টা করছে উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করবার। যেখানে আমাদের কৃষক যারা কিনা আমাদের খাদ্য যোগায় তারা খুব সকালে কাজে নামে, যেদেশের প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিক বিদেশে বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্যের দেশে এক বিরুপ আবহাওয়ায় কাজ করে, যেদেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় দিবারাত্রি কাজ করে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে, যেদেশের ৩০ হাজার প্রবাসী সারারাত জেগে ট্যাক্সি চালায়-এই সব মানুষের আয়ে যেদেশের বাজেট হয়, বিলাস বহুল বাড়ি-গাড়ি অফিস হয়, সেই একই দেশের মানুষ নির্দয়ভাবে তাদেরকে উপেক্ষা করে। অথচ ওরা কিনা অর্থনেতিক মুক্তির মুক্তিযোদ্ধা।
জলাবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলেয়ে চলতে হলে জাতিকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে ত্যাগ করতে হবে যদি সকল শিশুর জন্য শিক্ষা চাই। যদি খাদ্য নিরাপওা চাই তবে কৃষককে বিদ্যুত দিতে হবে সেচের জন্য। যদি আমরা পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই তবে আমাদেরকে বিদ্যুত দিতে হবে। অথচ আমাদের বিদ্যুত নেই পর্যাপ্ত।
আর তাই দিনে আলোতেই সারতে হবে সকল কাজ। দিনে আলোতে যদি বানিজ্য চলে তবে রাতে মানুষ ঘরেই থাকবে এবং তাতে অপরাধও থাকবে সহনীয় পর্যায়ে। শীত-আর মরুর দেশের মানুষ আমাদের চেয়ে আরোও কষ্ট করে।
জলবায়ু পরিবর্তন, বিদ্যুতের ঘাটতি, বিপুল জন গোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দেওয়ার আর সুযোগ নেই। সামনে আরোও কঠিন দিন আসছে। ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুদ। বাঁচতে হলে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। একবার ভাবুন কৃষক, শ্রমিক, মধ্য প্রাচ্য ও অন্যান্যদেশে প্রবাসী বাঙালী ভাইবোনদের কথা। একবার ভাবুন কিভাবে নিশ্চিত করা যায় লক্ষ লক্ষ শিশুর স্কুলে স্থানের কথা, একবার ভাবুন কোটি কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে, হবে সহায় সম্বল হীন। সময় বলছে- সচেতন হও। আর ঘড়ির কাঁটা সব সময় সামনে চলে পিছনে যায় না। এখানে কোন জিদ নেই, আছে বাস্তবতা। সেই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে হবে।
লেখক: ন্যায় ও সুশাসন গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।